একটি রাজনৈতিক মহল নৈরাজ্য সৃষ্টির অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে: ঢাবির নীলদল
- মোমেন্টস ডেস্ক
- প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০২২, ০৫:৪২ PM , আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২২, ০৫:৪২ PM

সম্প্রতি একটি মহল দেশে বিদ্যমান শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিঘ্নিত করে রাজনৈতিক অঙ্গনে নৈরাজ্য সৃষ্টির অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আওয়ামীপন্থি শিক্ষক সংগঠন নীল দলের নেতারা বলছেন, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে সরকার উৎখাতের জন্য এই মহল অপতৎপরতা শুরু করেছে। প্রকাশ্যে গণতান্ত্রিক সরকার উৎখাতের হুমকিও তারা প্রদান করছে যা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল।
শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) দলের আহবায়ক অধ্যাপক ড. মো. আব্দুছ সামাদ এবং যুগ্ম আহবায়ক অধ্যাপক ড. মো. আকরাম হোসেন ও অধ্যাপক ড. মো. আবদুর রহিম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ আহবান জানানো হয়।
সংগঠনটির নেতারা এ ধরনের কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলছে, আমরা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সম্পন্ন নাগরিকদের প্রতি যে কোন ধরনের নৈরাজ্য ও অপতৎপরতার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অবস্থান গ্রহণ করা জন্য আহবান জানাচ্ছি।
বিবৃতিতে বলা হয়, ১৯৭১ সালে ৯ মাসের মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ আর আড়াই লক্ষের অধিক মা-বোনের সর্বোচ্চ ত্যাগের মধ্য দিয়ে ডিসেম্বর মাসের ১৬ তারিখ বাংলাদেশ চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করেছিল। এই ডিসেম্বর মাসেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অনেক বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিষ্ঠান তাদের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হারিয়েছিল। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশের মধ্যদিয়ে ডিসেম্বর মাসে নানা কর্মসূচি পালিত হয়। এ মাসেই শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে বুদ্ধিজীবীদের কবরস্থান ও রায়েরবাজার বধ্যভ‚মিতে এবং বিজয় দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে লাখ লাখ মানুষ শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন। দেশজুড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নানা কর্মসূচি পালনের মধ্যদিয়ে নতুন প্রজন্মের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দেয়া হয়। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মধ্যদিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভুলুণ্ঠিত করে দেশকে পাকিস্তানী ভাবধারায় ফিরিয়ে নেয়া হয়েছিল। পবিত্র এ মাসের মর্যাদাকে অসম্মানিত করার জন্য ৭১-এর পরাজিত শক্তি ও তাদের দোসর নানাবিধ অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে।
“২০০৯ সাল থেকে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সরকার টানা তিনবার রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকায় বাংলাদেশে অভ‚তপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। এর সুফল জাতি ভোগ করছে। দক্ষতার সাথে করোনা মোকাবিলা এবং উন্নয়ন-অগ্রগতি অব্যাহত রাখায় বিশ্ব সম্প্রদায় বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেছে। পদ্মাসেতু, পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মেট্রো রেল, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, বঙ্গবন্ধু টানেলসহ বড় বড় প্রকল্প নির্মাণের মাধ্যমে জনগণের মনে বর্তমান সরকার জায়গা করে নিয়েছে। অপরপক্ষে রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে ২০১৪ সালে ২০০ জনের অধিক মানুষকে হত্যার জন্য দায়ী একটি মহলের নেতিবাচক রাজনীতি, জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকতা, অগ্নিসন্ত্রাস, হরতাল-ধর্মঘট আর জ্বালাও পোড়াও এর মত জাতি-বিধ্বংসী ভাবমূর্তির বাইরে আগামী নির্বাচনে জনগণের কাছে উপস্থাপনের মত রাজনৈতিক পুঁজি তাদের হাতে নেই। তাই দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে সরকার উৎখাতের জন্য এই মহল অপতৎপরতা শুরু করেছে। প্রকাশ্যে গণতান্ত্রিক সরকার উৎখাতের হুমকিও তারা প্রদান করছে যা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, গণতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতা পরিবর্তনের একমাত্র উপায় নির্বাচন। বর্তমান সরকার ২০২৪ সালে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের সকল প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ‘জনশৃঙ্খলা ও জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে জনসভা’ করতে কোন বাধা নেই। একটি রাজনৈতিক দল কর্তৃক ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় জনসভার কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর থেকে বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা চূড়ান্তভাবে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছিল। কাজেই এ দিনে রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে যুদ্ধংদেহী পরিস্থিতি তৈরি ৭১-এর নৃশংসতাকে মনে করিয়ে দেয়। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করার পর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে একটি অগণতান্ত্রিক সরকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থানে শিশুপার্ক নির্মাণের মধ্যদিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করার অনুমতি পাওয়া সত্ত্বেও একটি মহল কর্তৃক জনস্বার্থ বিঘ্ন করে রাস্তায় জনসভা করার অনড় অবস্থানের কারণে ৭ ডিসেম্বর পল্টনে একজন নিরীহ পথচারীর দুঃখজনক প্রাণহানী ঘটেছে, যা কোনক্রমেই কাম্য নয়।
“আমরা আশা করি সকলের শুভবুদ্ধির উদয় হবে এবং বিধ্বংসী রাজনীতির পথ পরিহার করে সুষ্ঠ্যুধারার রাজনীতিতে ফিরে আসবে। জনস্বার্থের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিধান অনুযায়ী কর্মসূচি পালনের অধিকার ভোগ করার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানায়। অন্যথায় গণতান্ত্রিক ধারা বাধাগ্রস্ত হলে তা কারো জন্যই মঙ্গলজনক হবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমাজ যে কোনো অগণতান্ত্রিক কর্মতৎপরতার বিরুদ্ধে সর্বদা সজাগ থেকেছে। বর্তমানেও যে কোনো ধরনের অগণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করছি। আমরা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সম্পন্ন নাগরিকদের প্রতি যে কোন ধরনের নৈরাজ্য ও অপতৎপরতার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অবস্থান গ্রহণ করা জন্য আহবান জানাচ্ছি।”