জাবির অ্যাম্বুলেন্স শুধু মাদক পরিবহন নয়, রিকশাচালকেরও প্রাণ কেড়ে নেয়! 

জাবি
  © সংগৃহীত

পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের জন্য মাদকদ্রব্য পরিবহনের সময় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অ্যাম্বুলেন্সের ধাক্কায় আব্দুল কুদ্দুস (৩০) নামে এক অটোরিকশাচালক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় এক অন্তঃসত্ত্বা নারী আহত হয়ে সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এছাড়া গুরুতর আঘাতে তার গর্ভের সন্তান মারা গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এদিকে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

আজ সোমবার সাভার হাইওয়ে থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) আজিজুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, গত বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (বিপিএটিসি) এলাকায় ওই দুর্ঘটনা ঘটে।

এর আগে ৪৩ ব্যাচের শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠান র‍্যাগের জন্য অ্যাম্বুলেন্সে মাদক পরিবহনের সময় দুই শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ। গত শনিবার রাত ৮টার দিকে রাজধানীর বংশাল থানার ঢাকা ব্যাংকের সামনে থেকে এই দুই শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়। এ ঘটনার পরই আলোচনায় আসে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সে মাদক কেনা-বেচার বিষয়টি। এরপরই আজ জানা গেল রিকশাচালক নিহতের ঘটনা। 

নিহত অটোরিকশাচালক পটুয়াখালীর কাউখালী উপজেলার কোনাহোড়া এলাকার আব্দুল মজিদ শিকদারের ছেলে। তিনি সাভারের কলমা এলাকায় ভাড়া থেকে অটোরিকশা চালাতেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মওলানা ভাসানী হলের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হয় গত ২৭ জানুয়ারি। অনুষ্ঠান উপলক্ষে মাদকদ্রব্য পরিবহনে ব্যবহার করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্স। ২৬ জানুয়ারি গভীর রাতে বিপিএটিসি এলাকায় অ্যাম্বুলেন্সটি একটি অটোরিকশাকে পেছন থেকে আঘাত করে। ঘটনাস্থলেই মারা যায় রিকশাচালক আব্দুল কুদ্দুস। 

পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের মাদক পরিবহনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করা হয়েছিল কিনা এই প্রশ্নের উত্তরে জাবির পরিবহন অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক ছায়েদুর রহমান বলেন, “হ্যা, হ্যা মাদকদ্রব্য। দুর্ঘটনার সময় মওলানা ভাসানী হলের ছাত্ররা গাড়িটি ব্যবহার করছিলেন।" এদিকে, ৪৩ ব্যাচের র‍্যাগের জন্য মাদক পরিবহনকারী গাড়িটিও বংশাল থানা থেকে ছাড়িয়ে আনা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

দুর্ঘটনার সময় অ্যাম্বুলেন্সটিতে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপ দপ্তর সম্পাদক রিফাত চৌধুরী ও উপ অর্থ সম্পাদক আহসান হাবিব ইমন। দুজনই দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। 

আরো পড়ুন: চাঁদাবাজি করে টাকা নিয়ে দৌড়ে পালানোর সময় ঢাবির তিন শিক্ষার্থী আটক

জানা যায়, দুর্ঘটনায় জাবির ক্ষতিগ্রস্ত অ্যাম্বুলেন্সটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন অফিসে রাখা হয়েছে। যার রেজিস্ট্রেশন নম্বর ঢাকা মেট্রো ছ ৭১-৪৫৪৫। দুর্ঘটনার সময় অ্যাম্বুলেন্সটি চালাচ্ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চালক রিপন হাওলাদার।

এ ব্যাপারে সাভার হাইওয়ে থানা পুলিশ গণমাধ্যমকে জানায়, ২৬ তারিখ রাতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বিপিএটিসি এলাকায় একটি অ্যাম্বুলেন্স অটোরিকশাটিকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে অটোরিকশা থেকে ছিটকে পড়ে চালক কুদ্দুস ঘটনাস্থলেই মারা যান। খবর পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করে হাইওয়ে থানায় আনে পুলিশ।

দুর্ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে অ্যাম্বুলেন্সে থাকা জাবি ছাত্রলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক রিফাত চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সেদিন দুর্ঘটনার সময় আমিও গুরুতর আহত হই। আমার সাথে ৪৬ ব্যাচের ইমন ছিলো।’

সাভার হাইওয়ে থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) আজিজুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ঘটনাস্থল থেকে অটোরিকশা চালক কুদ্দুসের মরদেহ উদ্ধার করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। অপমৃত্যু মামলার তদন্ত কাজ চলমান। দুর্ঘটনায় জড়িত অ্যাম্বুলেন্সটি শনাক্ত করতে পেরেছি। অ্যাম্বুলেন্সটি এখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে। আমরা প্রশাসনের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলছি।’