ইবিতে রাতভর ছাত্রী র্যাগিং ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের ঘটনা এবার হাইকোর্টে
- মোমেন্টস ডেস্ক
- প্রকাশ: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:৫৫ PM , আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:৫৫ PM

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শাখা ছাত্রলীগ নেত্রী ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে এক ছাত্রীকে হলের গণরুমে নিয়ে রাতভর মারধর ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে। তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করা হয়েছে। এছাড়াও ওই ছাত্রীকে চড় থাপ্পড়, চুল ধরে টানা, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করেছেন বলে ভুক্তভোগী ও লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে। এ ঘটনা হাইকোর্টের নজরে আনা হয়েছে।
আদালত এ বিষয়ে শুনানির জন্য সময় নির্ধারণ করেছেন বুধবার দুপুর ২টা। এ সময় আইনজীবীকে লিখিত আবেদন নিয়ে আসতে বলা হয়েছে। ঘটনাটি নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চের নজরে আনা হয়। বিষয়টি নজরে আনেন আইনজীবী গাজী মো. মহসীন ও আইনজীবী আজগর হোসেন তুহিন।
ভুক্তভোগী ছাত্রীর ভাষ্য অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরীর নেতৃত্বে তাঁর অনুসারীরা নির্যাতন চালিয়েছেন। নির্যাতনের সময় তাঁকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ, গালাগাল এবং এই ঘটনা কাউকে জানালে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়েছে। ওই ছাত্রী গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর, হলের প্রভোস্ট ও ছাত্র উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
গত রবিবার রাত ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত হলের গণরুমে ভুক্তভোগী ওই ছাত্রীকে ডেকে নিয়ে এই নির্যাতন করা হয়। অভিযুক্ত সানজিদা চৌধুরী অন্তরা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি ও পরিসংসখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। এছাড়া তার সহযোগী তাবাসসুম ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। ভুক্তভোগী একই বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
লিখিত অভিযোগ ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, ‘রোববার দিবাগত রাত ১১টার দিকে সানজিদা চৌধুরী ওরফে অন্তরাসহ সাত থেকে আটজন আমাকে একটি গণরুমে নিয়ে যান। সেখানে কথায় কথায় এলোপাতাড়ি চড়-থাপ্পড় মারতে থাকেন। আপনারা কেন মারছেন, বলতে গেলে ওনারা আমার মুখ চেপে ধরেন এবং সজোরে থাপ্পড় মারতে থাকেন। তাঁরা বলতে থাকেন, “চিনিস আমাদের, আমরা কত খারাপ? আমরা তোর কী করতে পারি জানিস তুই? কোনো আইডিয়া আছে আমাদের সম্পর্কে তোর?” পা ধরে মাফ চাইতে গেলে লাথি মারেন। আর অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। বুকের ওপর হাত দিয়ে জোরে থাবা মারেন এবং গামছা দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে ধরে রাখেন। একপর্যায়ে তাঁরা একটা ময়লা গ্লাস তাঁকে দিয়ে চেটে পরিষ্কার করিয়ে নেন এবং সেটার ভিডিও ধারণ করেন। তারপর তারা বলতে থাকেন, “জামা খোল”, জামা খুলতে না চাইলে তাঁরা আবার মারধর শুরু করেন এবং জোর করে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করেন।’
ভুক্তভোগী ছাত্রী অভিযোগে আরও উল্লেখ করেন, ভিডিওগুলো তাঁদের কাছে সংরক্ষণ করা। তাঁরা ভিডিও ধারণ করে বলেছেন, ‘যদি বাইরের কাউকে এ কথা বলিস, তাহলে তোর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল করে দেব। যাতে তুই কাউকে মুখ দেখাতে না পারিস।’ সানজিদা বলেন, ‘তুই যদি প্রশাসনের কাছে কোনো অভিযোগ দিস, তাহলে তোকে মেরে কুত্তা দিয়ে খাওয়াব, যা বলেছি তা মনে থাকে যেন!’ নির্যাতন শেষে দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে অন্য একটি গণরুমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত বলেন, “ঘটনা যদি সত্য হয় এবং তার বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ প্রমাণ হয় তাহলে আমরা প্রশাসনের কাছে তার শাস্তির দাবি জানাব এবং সাংগঠনিকভাবেও ব্যবস্থা নিব।” প্রক্টর অধ্যাপক শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, “আমি একটি প্রোগ্রামে আছি। অফিসে যেয়ে অভিযোগপত্র নিয়ে উভয়পক্ষের সাথে কথা বলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, “বিষয়টি আমি শুনেছি। কোনও বিশ্ববিদ্যালয়েই র্যাগিং অনুমোদিত নয়। আমি নীতিগতভাবে আমি এটা কখনও সমর্থন করি না। বিষয়টা কীভাবে কি ঘটল আমি সংশ্লিষ্টদের সাথে বসে বিস্তারিত জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”