ঢাবির প্রলয় গ্যাং কাণ্ডে সাময়িক বহিষ্কৃত সাকিবের ভাইয়ের কিছু কথা

ঢাবি
প্রলয় গ্যাং কাণ্ডে বহিষ্কৃত ঢাবির শিক্ষার্থী সাকিব  © সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোচিত ‘প্রলয় গ্যাং’ কাণ্ডে সাময়িকভাবে বহিষ্কৃত হয়েছেন সাকিব নামের এক শিক্ষার্থী। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ নামের ফেসবুক গ্রুপে সাকিবের বড় ভাই সাবেক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মো: শাহরিয়ার ফেরদৌস একটি পোস্ট লিখেন। পোস্টির শিরোনাম ছিলো- ‘বহিষ্কৃত সাকিবকে নিয়ে কিছু কথা’। পোস্টটি ছিলো এমন-

বহিস্কৃত_সাকিবকে_নিয়ে_কিছু_কথা
বাধ্য হলাম শেষপর্যন্ত এই পোস্টটা করতে। আমি জানিনা কিভাবে রিয়্যাক্ট করবেন আপনারা। নিজের অবস্থার কথা না বলে যেতে পারলে আক্ষেপ রয়ে যাবে। আলোচিত-সমালোচিত প্রলয় গ্যাং এর যে দুইজন কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তার মধ্যে সাকিব ফেরদৌস আমার আপন ছোট ভাই। আমরা দুই ভাই। আমিও এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই সম্প্রতি স্নাতক-স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পাঁচটা বছর হল থেকে শুরু করে ডিপার্টমেন্টে কতটা শৃঙ্খলা বজায় রেখে পার করেছি তা আমাকে কাছ থেকে যারা দেখেছেন সবাই জানেন। সেই আমারই ছোট ভাই শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য আজ সাময়িক ভাবে বহিষ্কার তো হলো পাশাপাশি জেলে অবস্থান করছে। একটা নিন্ম-মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসেছি দুজন, এই পরিবারের উপর দিয়ে, অবিভাবক হিসেবে আমার উপর দিয়ে কি যাচ্ছে আমরা জানি। তবে এটুকুই বলতে চাই আমার ভাই লঘু পাপে গুরুদণ্ড পাচ্ছে। 

আমি যে গল্পটা এখন শেয়ার করবো তার দুটো সাইড। একটা সাইডের উপর ভিত্তি করে আপনারা জাজমেন্টাল হয়ে ওকে পারলে ফাঁসি দিয়ে দেন এমন অবস্থা, কিন্তু গল্পের আরেক সাইডটা একটু জানাতে চাই। 

আমার ভাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলো 'গ' ইউনিটে ৫৫তম এবং 'ঘ' ইউনিটে ২৭ তম হয়ে। শেষপর্যন্ত 'গ' ইউনিটে 'একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেম' সাবজেক্ট বেঁছে নেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার আগপর্যন্ত ওর কোনো রকম খারাপ অভ্যাসের বালাই পর্যন্ত ছিলো না। যশোর বোর্ডে তৃতীয় স্থান অধিকারী সেই শিক্ষার্থী'র আজ এই দশা কিভাবে হলো একটু ব্যাখ্যা করি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম তিনমাস ওর খুব ভালোই কাটে। এরপরই ছন্দপতন শুরু হয়। এই গ্যাং এর কয়েকজনের সাথে পরিচয় হয়। কিভাবে কিভাবে যেনো ও মাদক নিতে শুরু করে। আমি কিছুদিনের মধ্যেই টের পেয়ে যাই। ও প্রথম থেকেই লড়াই করে যাচ্ছিলো নিজের সাথেই যে কিভাবে এ থেকে বেরিয়ে আসবে। আমার কাছে সবকিছুই কনফেস করতো, কাদের সাথে মিশেছে কি কি নিয়েছে সবকিছুই। এর কিছুদিনের মাথায় সাকিব মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়ে, ওর মানসিক রোগ বেঁধে যায়। ৪ দিন পাগল হয়ে রাস্তায় রাস্তায় নগ্ন হয়ে ঘুরে বেড়ায়, আমরা ভাঙ্গা, ফরিদপুর থেকে সে যাত্রায় তাকে উদ্ধার করি নগ্ন অবস্থায়। এরপর শ্যামলী মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করার পর এখনও পর্যন্ত চিকিৎসাধীন আছে। অনেকটা সুস্থ এখন ও। 

তবে এই অসুস্থ হওয়ার পর থেকে আমার এই গ্যাং এর প্রত্যেকটা মেম্বারের সাথে সংঘর্ষ শুরু হয়, আজ জুবায়ের এর জায়গায় আমি থাকতে পারতাম। কারণ এই গ্যাংই আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে রেখেছে ২ মাস আগেই। জুলিয়াস সিজার ভাইও এ ব্যাপারে অবগত ছিলেন। আমার সাথে তাদের ক্লাশটা ছিলো তারা যেনো কোনোভাবেই আমার ভাইকে ফ্লোর না দেয়। ওরাও সে অনুযায়ী শেষ পর্যন্ত আমাকে কথা দেয় তারা ওকে ফ্লোর দিবে না। 

এবারে আসি এই ঘটনার সাথে সাকিবের সম্পৃক্ততা কোথায়? আদতে সাকিবের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সাকিব ঘটনার দিন তার গণরুমেই অবস্থান করছিলো। আমি একাধিকবার ওর গণরুমের বন্ধুদের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছি। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি এই ঘটনার সাথে সাকিবের সম্পৃক্ততা নেই। ইভেন আপনারা ১৯ জন অভিযুক্ত আসামি গুলোর মধ্যে কোথাও কি সাকিবের নাম পেয়েছেন? ওখানে তো কোথাও নাম পাননি তাহলে একবারও প্রশ্ন তুললেন না কেনো এই আসামি কোত্থেকে এলো? যে জুবায়ের কে মারা হয়েছে সে সাকিবেরই রুমের ফ্রেন্ড। মারামারির ঘটনার দিন জুবায়েরই গণরুমে ফোন দেয় তাকে বাঁচাতে যাওয়ার জন্য, সাকিব এই ফোনের প্রেক্ষিতে ঘটনা স্থলে যায় গণরুমে'র আরেকজন বন্ধুর সাথে। কিন্থু ওরা পৌঁছে দেখে অলরেডি প্রলয় গ্যাং জুবায়েরকে মেরে ঢামেকে পাঠিয়ে দিয়েছে। আমি প্রুফ হিসেবে হলের সিসিটিভি ফুটেজ দেখাতে পারবো। 

আর হ্যাঁ অস্বীকার করছি না যারা মেরেছে এদের সাথেই সাকিব একসময় মাদক গ্রহণ করেছে, তবে ও কখনও চাঁদাবাজি, মারামারি'র মতো কর্মে লিপ্ত ছিলো না এটা আমি দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মিডিয়া আর আপনার আমার দাবির চাপে পড়ে চলমান ঘটনা শিথিল করার জন্য কাকে কোন অভিযোগের বশে জেলে পাঠালো তার হেতু খুঁজে পাচ্ছি না । অথচ এই ঘটনার মাস্টারমাইন্ডরা সবাই ধরাছোঁয়ার বাইরে। তবে আমরা ধারণা করছি অভিযুক্ত ২ নং আসামি ফয়সাল আহমেদ সাকিব এর নামের সাথে গুলিয়ে ফেলেছে। গুলিয়ে ফেলুক আর যাই করুক আমার ভাইয়ের ক্যারিয়ারের দাঁড়ি তো পড়ে গেছে, আশাকরি আপনারাও সন্তুষ্ট হয়েছেন। সবচেয়ে ভয়ানক ব্যাপার হলো এজাহারে আমার ভাইয়ের নামের আগে লেখা সন্দিগ্ধ গ্রেফতারকৃত আসামি সাকিব ফেরদৌস। সন্দিগ্ধ অর্থ- সন্দেহযুক্ত / অনিশ্চিত। ও যদি সন্দিগ্ধ আসামি হয়ে থাকে তাহলে কিসের ভিত্তিতে তাকে এই বলির পাঠা হতে হলো? 

আমার আর কোনো প্রত্যাশা নেই। এক নিমিষেই কিভাবে যেনো সব শেষ হয়ে গেলো। পজিটিভ কিছুর প্রত্যাশা করার শক্তিটুকুও শেষ হয়ে গেছে। তবু আমার এটুকুই দাবি, একটা সুষ্ঠু তদন্ত করে সাকিবকে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চলে যেতে বলাটা সমীচীন নয়কি? যদি সাকিব সত্যিই দোষী হয়ে থাকে আমরা যেকোনো ধরনের সিদ্ধান্ত মাথা পেতে নেবো। শুধু এটুকুই চাওয়া স্রোতের প্রবাহে নির্দোষ কেউ যেনো বলির পাঠা না হয়।

প্রলয় গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে রিপোর্টে সাকিবকে নিয়ে যা বলা হয়েছে


মন্তব্য