কুবির সিএসই বিভাগে ব্যতিক্রমধর্মী মেধাবৃত্তি প্রকল্প 'সোপান'

কুবি
  © টিবিএম ফটো

যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলাইনাতে অবস্থানরত ২২ জন প্রবাসী বাংলাদেশীর সহায়তায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগে শুরু হয়েছে নর্থ ক্যারোলাইনা, ইউএসএ ভিত্তিক বৃত্তি প্রদান প্রকল্প - "সোপান"।

যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষারত সিএসই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. কামাল হোসেন চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে  বিভাগটিতে এই মেধাবৃত্তি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতি মাসে বিভাগের ১২ জন শিক্ষার্থীকে এই মেধাবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে।

মোঃ কামাল হোসেন চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক এবং মুহাম্মদ কুদরত-ই মওলাসহ ২২ জন প্রবাসী বাংলাদেশীর সহায়তা নিয়ে এই মেধাবৃত্তির কার্যক্রম চালু করা হয়।

এ নিয়ে মোঃ কামাল হোসেন চৌধুরী বলেন, "আমাদের দেশের অনেক শিক্ষার্থী নিজের খরচ যোগাড় করতে গিয়ে পড়াশোনায় সময় দিতে পারছে না। অথচ সামান্য অর্থনৈতিক সহায়তা পেলেই তারা ভালো অবস্থানে যেতে পারবে। সেই জায়গা থেকে আমরা ''সোপান" এর কার্যক্রম শুরু করেছি। আশা করছি, পরবর্তী সময়ে এর কার্যক্রম আরও বড় পরিসরে হবে। নর্থ ক্যারোলাইনাতে অবস্থানরত ২২ জন প্রবাসী বাংলাদেশীর প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ, তারা এগিয়ে না আসলে আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের সহায়তা করা সম্ভব হতো না।"

মূলত বিভাগটির মেধাবী এবং প্রোগ্রামিংয়ে পারদর্শী কিন্তু আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীরা এ মেধাবৃত্তির সুবিধা পাচ্ছেন।

এ সম্পর্কে সিএসই বিভাগের নবনিযুক্ত বিভাগীয় প্রধান ড. মাহমুদুল হাসান বলেন, "ইউএসএ তে অবস্থানকারী সম্মানিত প্রবাসী সুহৃদদের সহায়তায়  ও আমাদের বিভাগের শিক্ষক জনাব কামাল হোসেন চৌধুরীর চেষ্টায় 'সোপান' নামক বৃত্তিটি শিক্ষা প্রসারের এক অনন্য উদ্যোগ। বিভাগের মেধাবী ও অসচ্ছল ১২ জন শিক্ষার্থীর জন্য মাসিক ভাতা তাদের ভবিষ্যৎ বিনির্মানে বিরাট ভূমিকা রেখে চলেছে। বৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা বিভাগ ও নিজ উন্নয়নে আরো বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে আশা রাখি। সিএসই বিভাগ শিক্ষার্থীদের জন্য ভবিষ্যতে এমন আরো প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে।"

বৃত্তি প্রকল্পের সমন্বয়ক ও সিএসই সোসাইটির আহবায়ক কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদা খাতুন বলেন, 'সোপানের মেধা বৃত্তির জন্য বিভাগের এগারো জন মেধাবী শিক্ষার্থীদের ছয় মাসের জন্য নির্বাচিত করা হয়। এই ছয় মাসে তাদের কিছু একাডেমিক কাজ দেওয়া হয়। সেগুলো পূরণ করতে পারলে পরবর্তী সেমিস্টারের জন্য তারা মনোনীত হবে। নতুবা তার জায়গায় অন্য কোনো শিক্ষার্থীকে আনা হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য বিভাগের শিক্ষকরা মেন্টর হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। আমি আশা করি এই বৃত্তির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা আরো বেশি সময় তাদের একাডেমিক কাজে ব্যয় করবে এবং তাদের ভবিষ্যৎ সাফল্যে বিভাগ গর্বিত হবে।'

বিভাগ থেকে এই মেধাবৃত্তি পেয়ে শিক্ষার্থীরাও হচ্ছেন উপকৃত। বৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান চৌধুরী বলেন, 'প্রতি মাসে আমার পরিবারকে টাকা পাঠাতে হয়। আগে আমি টিউশনি করাতাম। বৃত্তির টাকা পাওয়ার পর থেকে আমি আমার টিউশনির সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছি। এখন আমি আমার একাডেমিক পড়াশোনায় বেশি সময় দিতে পারছি।'

বৃত্তি প্রাপ্তদের মধ্যে, কয়েকজন ইতোমধ্যে নিজ ব্যাচে ১ম ও ২য় স্থান অর্জন করেছে। শিক্ষার্থীরা জানায়, সোপান থেকে প্রতি মাসে ৫ হাজার করে টাকা পাওয়ায়, টিউশন করে সময় নষ্ট করতে হয়না এবং নিশ্চিন্তে পড়াশোনা করার সুযোগ পাচ্ছেন।

রেজাল্ট এর পাশাপাশি, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় ভালো করছেন আবার অনেকে। বৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থী মো. রাকিব হোসেন সাম্প্রতিককালে SELISE Digital Platforms কর্তৃক আয়োজিত প্রোগ্রামিং কনটেস্ট এ সারা বাংলাদেশ থেকে অংশগ্রহণকারী প্রতিযোগীদের মধ্যে ১৯ তম হয়েছেন।

এরকম কার্যক্রমের আওতায় যাতে আরও শিক্ষার্থীদের আনা যায় সে ব্যাপারে আশাবাদী বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে সিএসই বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান পার্থ চক্রবর্ত্তী বলেন, 'এই বৃত্তি আমাদের বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক বড় সুযোগ। প্রতি মাসে আমাদের ১১ জন শিক্ষার্থী পাঁচ হাজার করে টাকা পাচ্ছে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য কোনো বিভাগে এরকম উদ্যোগ নেই। আমি আশাকরি এরকম কার্যক্রমে অন্যরাও অনুপ্রাণিত হবে।'

উল্লেখ্য, গত বছরের অক্টোবর থেকে প্রতিমাসে ১১ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান করে আসছে "সোপান"। সোপানের কার্যক্রম ৬ মাস হতে যাচ্ছে , পরবর্তী ৬ মাসের জন্য ডোনাররা ইতোমধ্যে তাদের অর্থও প্রদান করে ফেলেছেন।


মন্তব্য


সর্বশেষ সংবাদ