সংবাদিক শামসুজ্জামান শামসের মুক্তির দাবিতে ঢাকা আরিচা মহাসড়ক অবরোধ

জাবি
  © টিবিএম ফটো

সংবাদিক শামসুজ্জামানের মুক্তির দাবিতে ঢাকা আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার বেলা ৩টায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আরিচাগামী সড়ক অবরোধ করা হয়। সোয়া ৩টার দিকে ঢাকাগামী অপর সড়কটিও অবরোধ করা হয়। তবে এম্বুলেন্স ও জরুরি পন্যবাহী গাড়ি চলাচলে বাধা দেওয়া হচ্ছে না।

শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবিতে এই অবরোধ করেন, ধাবিগুলো হলো অবিলম্বে শামসুজ্জামান শামস কে মুক্তি দিতে হবে, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করা।

আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক আলিফ মাহমুদ বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানে কীভাবে শামস ভাইকে মুক্ত করতে হবে। আমরা তার নিঃশর্ত মুক্তির আগ পর্যন্ত আন্দোলন জারি রাখব। শামস ভাই দিনমজুরের বরাতে যে কথা লিখেছেন, তা এদেশের কোটি কোটি মানুষের মনের কথা। সত্য বললে তার গলা টিপে ধরার রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মাধ্যমে মুখ চেপে ধরার সাহস করলে আবার একটি গণ-অভ্যুত্থান দেখবে এই দেশ। অনতিবিলম্বে শামস ভাই এর নিঃশর্ত মুক্তি দিয়ে তাকে তার মায়ের নিকট ফিরিয়ে দিতে হবে, তা নাহলে জাহাঙ্গীরনগরের এই আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ সারা দেশে ছড়িয়ে যাবে।


এসময় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী সুদীপ্ত দে বলেন, "ভাত, মাছ, মাংসের যে স্বাধীনতা তা শুধু একটা শ্রেণির নয় আমাদের ও সে স্বাধীনতা নেই। শামস ভাইয়ের মামলার এজহারে একাত্তর টিভির যে রিপোর্ট যুক্ত করা হয়েছে সেটাই একটা হতাশার ব্যাপার। কারন সেখানে শিশু ছেলেটির অবস্থা দেখানো হয়েছে তার জীবনে কোনো দুঃখ-কষ্ট নেই। অথচ সেও খেটে খাওয়া মানুষ। আমাদের মেরে ফেলার আগ পর্যন্ত নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে স্বাধীনকরা দেশে আমরা চাল, ডাল, মাংসের স্বাধীনতা চেয়েই যাবো। বাংলাদেশে এখন সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই। পঞ্চাশ বছরে পার হলেও এই স্বাধীনতা এখনও নিশ্চিত হয়নি। নয় মাস যুদ্ধ করার পর এই হচ্ছে আমাদের স্বাধীনতা।"

জার্নালিজম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া ফেরদৌস বলেন, "মাছ-ভাতের স্বাধীনতা তুলে ধরা কী অপরাধ? দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত উর্ধ্বগতির সংবাদ প্রকাশের কারণে শামস ভাইকে আজকে জেলে যেতে হয়েছে। একজন সাংবাদিক, যিনি দেশের মানুষের কথা বলেন তাকে রাতের আধারে সাদা পোশাকে তুলে নেওয়ার তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাই। এই সরকারকে ধিক্কার জানাই; সংবাদ মাধ্যমের সাথে এই সরকারের আচরণ তারা স্বৈরাচারী আচরণ ছাড়া কিছুই নয়।"

অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী তাপসী দে প্রাপ্তি বলেন, "স্বাধীনতার নামে কী হচ্ছে আমাদের দেশে? একটি রাষ্ট্রের দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির একটি প্রতিবেদন করা হয়েছে। যা আমাদের দৈনন্দিন জীবন যাপনের একটি চিত্র। এই সামান্য একটি প্রতিবেদন করার ফলে একজন সাংবাদিককে রাতের আধারে সাদা পোশাকে তুলে নেওয়া লজ্জাজনক।"

এসময় তিনি সাংবাদিক শামসের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন এবং তার বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার ও ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্টের মতো নিবর্তনমূলক আইন বাতিলের দাবি জানান।

এব্যাপারে জাবি প্রক্টর আ স ম  ফিরোজ উল হাসান বলেন, আমরা জানতে পেরেছি আমাদের শিক্ষার্থী রাস্তা অবরোধ করেছে। সাথে সাথে সেখানে গিয়েছি যাতে তাদের সাথে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে। সেখানে গিয়ে রমজানের দিনে জনমানুষের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করতে বলায় তারা বিবেচনায় নিয়ে অবরোধ উঠিয়ে নিয়েছে। অবরোধের ইস্যুটা যেহেতু রাষ্ট্রীয়, রাষ্ট্রই এটার সমাধান করবে। আইনসম্মতভাবেই সমাধান হবে।

সাভার সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহিদুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থী ও জনগণের নিরাপত্তার জন্য আমরা এখানে অবস্থান নিয়েছি। শান্তিপূর্নভাবে কর্মসূচি পালিত হয়েছে।যেন কোন প্রকার অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখছি।

৩০ মিনিট ধরে চলা অবরোধ শেষ করে ছাত্ররা ক্যাম্পাসে ফিরে আসে,তাদের ধাবি পূরণ নাহ হলে আগামীতে আবারো কঠিন অবস্থা হবে বলে জানিয়েছে অবরোধকারী শিক্ষার্থীরা।


মন্তব্য