আমরা হাত পাততে চাই না, কর্মসংস্থান চাই: ঢাবিতে ইফতার মাহফিলে হিজড়া সম্প্রদায়

ঢাবি
ঢাবিতে ইফতার মাহফিলে ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়ের সঙ্গে সহকারী প্রক্টর ও অন্যান্যরা  © মোমেন্টস ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ও সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমানের উদ্যোগে হিজরা ও অক্ষম ব্যক্তিদের নিয়ে এক ভিন্ন ধর্মী ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে এসব শ্রেণির শতাধিক ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।

আজ শুক্রবার (৭ এপ্রিল) বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ক্যান্টিনে এরকম এক ভিন্ন ধর্মী ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় উপস্থিত তৃতীয় লিঙ্গ, ট্রান্সজেন্ডার ও অক্ষম ব্যক্তিদের মধ্যে থেকে কয়েকজন তাদের অভাব, অভিযোগ ও চাওয়া পাওয়া ব্যক্ত করেন। হিজড়া সম্প্রদায়ের চাওয়া তারা মানুষের দ্বারে দ্বারে আর হাত পাততে চান না। তাদের দাবি হাত পাতার বিকল্প হিসেবে তাদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হোক।

অনুষ্ঠানে ট্রান্সজেন্ডার ফারহানা ফারিন বলেন, জন্মের সময় মানুষের কোনো লিঙ্গ পরিচয় থাকে  না। পরবর্তীতে এটার প্রকাশ পাওয়ার পাশাপাশি একে কেন্দ্র করে বৈষম্যও সৃষ্টি হয়। যেটা আমাদের বিলোপ করতে হবে। কারণ পৃথিবীতে কেউ কম বেশি নয়, সবাই সমান। পৃথিবীর সব মানুষের মর্যাদা এবং অধিকার সমান। এটা আমাদের বুঝতে হবে। অন্য নাগরিকদের মতো আমাদেরও সমান অধিকার ভোগ করার অধিকার আছে। এই অধিকার বুঝিয়ে দেওয়ার যে দায়িত্ব, সেটা শুধু রাষ্ট্রেরই নয় বরং সমাজেরও। সবার কাছে নিবেদন, আমরা সবাই মানুষ, সবাই মিলে ভালো কিছু করবো আমরা।

ইফতার মাহফিলে বক্তব্য দিচ্ছেন এক ট্রান্সজেন্ডার

সাগরিকা নামের এক ট্রান্সজেন্ডার বলেন, আমরা অনেক কিছু বলতে চাই। কিন্তু কেউ কান খোলা রেখে আমাদের কথা শুনতে চায় না। অনেক তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ রাস্তাঘাটে, সিগন্যালে হাত পাতে। কিন্তু এখন আমাদের এই হাত পাতাটাকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। শুধু নিরুৎসাহিত করলেই হবে না। আমাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে হবে।

মিতু বলেন, অনেকে আমাদের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী বলে। কিন্তু আমি বলি, আমরা হলাম পিছিয়ে দেওয়া জনগোষ্ঠী।

ট্রান্সজেন্ডার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অঙ্কিতা বলেন,  আমরা সবাই যদি যার যার জায়গা থেকে সহযোগিতা করি, তাহলে সবাই এগিয়ে যেতে পারবে। তাদের দরকার সুযোগের, সহানুভূতির। আপনারা তাদের সুযোগ করে দিন, তারা এগিয়ে যাবে।

এ সময় এসব পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট সবার সুদৃষ্টি আকর্ষণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মামুন তুষার বলেন,  আজকে বাংলাদেশে প্রায় আড়াই লক্ষের মতো তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ আছেন। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দেখি এই সম্প্রদায়ের মানুষেরা শিক্ষক হচ্ছেন, কর্মকর্তা হচ্ছেন। এগুলো আমাদের দেশের জন্য আনন্দের বিষয়। অনেক তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ আছেন, যারা অন্যের সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে চলেন। এটা সমস্যা না, কিন্তু সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় তখনই, যখন তারা টাকা চেয়ে জবরদস্তি করে। এক্ষেত্রে তাদের কর্মসংস্থান অনেক জরুরী। এই বিষয়ে সবার সুদৃষ্টি কামনা করি, যেন তাদের জন্য উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়।

অনুষ্ঠানে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ শতাধিক ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।


মন্তব্য


সর্বশেষ সংবাদ