বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফেরার অনুভূতি

ববি
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ফটো

"ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে উল্লাস, ডালে ডালে পাতায় পাতায় দিচ্ছে তার আভাস।" রমজান মাসের সূচনালগ্নেই আমাদের হৃদয়ের কোণে অতি সন্তর্পণে একটা নবঘন সুর ধ্বনিত হয়,আর তা হলো ইদ। আর ঈদ মানেই খুশি আর অনাবিল আনন্দ। এ সময়টাতে কাছে দূরে যে যেখানেই থাকুক না কেন ঈদের ছুটিতে নাড়ির টানে তারা ফিরে চলে আপন ঠিকানায়,নিজ পৈতৃক আবাসস্থলে। অনেকের কাছে তাই ঈদ মানেই ইট-পাথরের শহর ছেড়ে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরে চলার আনন্দ। কিন্তু যেসব শিক্ষার্থীরা সুন্দর একটি ক্যারিয়ার গড়ার জন্য পরিবার-পরিজন ছেড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনা করে তাদের কাছে ঈদের আনন্দটা একটু ভিন্ন মাত্রার। 

প্রায় সব সময়ই দেখা যায় কোন না কোন ক্লাস, পরীক্ষা, এসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশনের চাপে থাকতে হয় তাদের। হৃদয়ে লালন করা হাজারো স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে সর্বদাই তাদের বিরামহীন ছুটে চলা। ছুটতে ছুটতে এক সময় পেয়ে বসে ক্লান্তি। ক্লান্ত-শ্রান্ত মন চায় একটু বিশ্রাম। ছুটে যেতে চায় চেনা মুখগুলোর কাছে। পেতে চায় স্নেহময়ী মায়ের হাতের পরশ, যে পরশে রয়েছে পৃথিবীর সকল ক্লান্তি দূর করার জাদু। ইচ্ছে করে পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে আনন্দ-উল্লাসে কিছুটা সময়ের জন্য হারিয়ে যেতে। কিন্তু ব্যস্ততার মাঝে এ রকম সময় পাওয়াটা হয়ে উঠে সোনার হরিণের মতো। 

তাছাড়া সব সময় সব আত্মীয় স্বজনকে এক সঙ্গে পাওয়াও যায় না। তাই তারা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকে কবে ক্যাম্পাস ছুটি হবে। বাজবে কাক্সিক্ষত সেই ছুটির ঘণ্টা। বিশেষ করে ঈদের ছুটিকে কেন্দ্র করে এই অপেক্ষাটা একটু বেশি থাকে। ঈদের ছুটির দিনক্ষণ কবে ঘোষণা হবে সেই জন্য উতলা মন নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে প্রত্যেকটি শিক্ষার্থী। আর যখন সেই বহু আকাক্সিক্ষত ছুটির সন্ধান মেলে তখন শুরু হয়ে যায় বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি। মূলত তখন থেকেই তাদের মনের মধ্যে শুরু হয়ে যায় ঈদের আনন্দ। টিকেট কাটা থেকে শুরু করে কাপড়-চোপড় গুছানো সবকিছুতেই তখন বিরাজ করে উৎসব উৎসব আমেজ। ঈদের আগে রাস্তার সীমাহীন যানজট, টিকেটের ভোগান্তি, অতিরিক্ত ভাড়া, যানবাহনগুলোতে মানুষের উপচেপড়া ভিড় এ রকম হাজারো প্রতিকূলতাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে প্রিয় ক্যাম্পাস ছেড়ে সবুজ শ্যামল গ্রামের বাড়ির দিকে ছুটে চলে তারা। মনের মধ্যে ঘুরতে থাকে ভাবনার চাকা। আবার! কতদিন পর সবার সঙ্গে দেখা হবে। সেই শৈশব কৈশোরের ফেলে আসা দিনগুলোতে যারা সব সময় পাশে ছিল সেই বন্ধুদের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা হবে। কত কথাই না বলার আছে তাদের সঙ্গে। ক্যাম্পাসের কথা, নতুন নতুন বন্ধুদের কথা। আরও কত মজার মজার অভিজ্ঞতাই না জমে আছে গল্পের ঝুলিতে।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী মিলন সর্দারের কথায় উঠে এল সেই অনুভূতির কথা। তিনি বলেন, ইদ মানে হাসি, ইদ মানে আনন্দ সবারই একটা আশা থাকে পরিবারের সাথে ঈদ ভাগাভাগি করে কাটাবো। বিশেষ করে যখন বাড়ির উদ্দেশ্য হল থেকে বের হয় তখন থেকেই ইদের আনন্দ চলে আসে মনের মধ্যে কিন্তু টিউশনি নামক বেড়াজালের জন্য সঠিক সময়ে ইদে বাড়িতে যাওয়া হয় নাহ, আমিও তার ব্যাতিক্রম নই,যাইহোক সব মিলে ইদ হলে মনের একটা আত্মতৃপ্তি চলে আশে যে কবে বাড়ি যাবো।

বাংলা বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান কাব্য বলেন, ৫৫ একরের এই ক্যাম্পাস আমার আবেগ, আমার আকাঙ্ক্ষা,আমার অনুভূতি, আমার বাসনা, আমার উৎফুল্লতা, আমার সকল কিছু এই ক্যাম্পাস ঘিরে। এই ক্যাম্পাস আমার দ্বিতীয় বাড়ি। তবুও কোথাও যেনো একটা অভাব থেকে যায়। 

আর এই অভাব হলো প্রিয় মানুষদের সাথে ইদের আনন্দ- আমেজ ভাগাভাগি করে নেওয়া। পরিবারের সাথে ইদ ভাগাভাগি করে নেওয়ার মতো শ্রেষ্ঠ মূহুর্ত আর হতে পারে না। ইদের আনন্দ- উল্লাস তখনই পূর্ণতা পেয়ে থাকে, যখন প্রিয় মানুষগুলোর কাছাকাছি-পাশাপাশি থেকে ইদ উদযাপন করা যায়। এক সমুদ্র সুখানুভূতি নিয়ে যখন বাড়ি যাওয়ার জন্য মন স্থির করি,তখন তনু-মনের সকল ক্লান্তি শ্রাবণের বাঁধ ভাঙ্গা উল্লাসের মত মেতে উঠে শুভ্র নির্মল এক উল্লাসে। শরীরের শিরা-উপশিরায় বয়ে চলে এক আমোদ-প্রমোদের মৃদুমন্দের কলরব। চারিদিকে ভেসে বেড়ায় আনন্দের জয়ধ্বনি।
এই আনন্দের গতি অসীম, যা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না।

মেহতাব হাসান বলেন, উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়ার স্বপ্নালু চোখে পরিবার পরিজন ছেড়ে দক্ষিণবঙ্গের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে আসছি পড়াশুনা করতে। ক্লাস-পরীক্ষা, অ্যাসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন আরও কত রকমের একাডেমিক কার্যক্রম নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয় আমাদের। হৃদয়ে লালন করা হাজারো স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতেই আমাদের এই বিরামহীন ছুটে চলা। ক্লান্ত-শ্রান্ত শরীর ও মন একটু বিশ্রাম নিতে চায় মাঝে মাঝে। বিরামের সেই সুযোগ নিয়ে আবার এসেছে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর।দীর্ঘ তিন মাস পর বাড়ি ফিরছি। অনুভুতিটা একটু বেশিই। বাড়ি যাওয়ার জন্য মন ছটফট করছিলো। অবশেষে সেই কাঙ্ক্ষিত দিনটি এসেছে। বাড়ি যাচ্ছি। গত রাতভর ঘুমাতে পারিনি । কখন সকাল হবে কখন বাসে উঠবো, বাড়ির পথে রওনা হবো? আরো এক্সাইটেড লাগছে কারণ আমি এবার নিজের উপার্জনের টাকায় আব্বু, আম্মু, ভাই, প্রিয়মানুষ সবার জন্য ঈদের শপিং করে নিয়ে যাচ্ছি। সবার হাসিমুখ দেখার অপেক্ষায় আছি।

দর্শন বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোঃ ওয়াসিম আকরাম বলেন, সত্যি কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের আগে যেদিন শেষ ক্লাস হওয়ার কথা ছিলো,তার দুই দিন আগে থেকেই আমার বাড়িতে আসার পরিকল্পনা শুরু।দীর্ঘ দুই মাস পর ঈদের ছুটিতে বাড়ি আসা আমার জন্য ছিলো অন্য রকম আনন্দের। 'আলহামদুলিল্লাহ' পরিবারের সাথে যোগ দিয়ে ভালো লাগছে। ইনশাআল্লাহ আনন্দ টা আরো কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে এক সাথে ঈদ উৎযাপন এর মধ্য দিয়ে।