জাবির প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ নিয়ে বিভক্তি, কি ভাবছেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা

জাবি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ফটো

অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) নতুন করে ১৩৭ কোটি টাকার প্রশাসনিক ভবন নির্মান নিয়ে বিভক্তি তৈরি হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাদের মাঝে। 

বিশ্ববিদ্যালয়সূত্রে জানা যায়, প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা বাজেটের এ প্রকল্পের আওতায় দশতলা বিশিষ্ট একটি নতুন প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ করার চুক্তি হয়েছিল। পরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে তা স্থগিত করার নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বিভক্ত মত প্রকাশ করেছেন অংশীজনরা।

গত বছর ১৩ নভেম্বর উপাচার্য বরাবর অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় দশতলা প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের অনুরোধ জানিয়েছে অফিসার সমিতি।

এতে বলা হয়, গত ৮ জুন উপাচার্য কর্তৃক উদ্বোধনকৃত দশতলা প্রশাসনিক ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেবর আগের তুলনায় অনেক বিস্তৃত হওয়ায় সে অনুপাতে কর্মকর্তাদের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থান সংকুলানের অভাবে একই কক্ষে অনেক কর্মকর্তা গাদাগাদি করে একত্রে কাজ করছে। ফলে কাজের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। তাই কর্মকর্তাদের কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য অনুমোদিত দশতলা প্রশাসনিক ভবনের নির্মাণ কাজ দ্রুত শুরু করার অনুরোধ জানানো হয়। 

অফিসার সমিতির সভাপতি মো. আজিম উদ্দীন বলেন, অফিসে কর্মকর্তাদের নির্দিষ্ট ডেস্ক নাই, বসার জায়গা নাই। সবাইকে একসাথে গাঁদাগাদি করে বসে কাজ করতে হয়। আমাদের জায়গা সংকুলানের জন্যই আমরা মাননীয় উপাচার্যকে নতুন প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের পক্ষে পত্র দিয়েছি। 

এদিকে, গত ৪ এপ্রিল অপ্রয়োজনীয় ভবন নির্মাণ বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা। সেখানে দুটি প্রশাসনিক ভবন থাকার পরও নতুন আরেকটি প্রশাসনিক ভবন না করার দাবি জানানো হয়।

তাদের দাবি আগের পাঁচতলা প্রশাসনিক ভবনটি সম্প্রসারণ করলে ব্যয় হবে ৪০ কোটি টাকা। তাই আরেকটি প্রশাসনিক ভবন নির্মাণে প্রায় ১০০ কোটি টাকা অপচয় হবে। 

ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অমর্ত্য রায় বলেন, শুনেছি বর্তমান রেজিস্ট্রার ভবনটি পূর্ণাঙ্গ করতে ৪০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। তাহলে কেন কর্মকর্তাদের জায়গার সংকট কাটাতে ১৩৭ কোটি টাকা দিয়ে নতুন রেজিস্ট্রার ভবন করতে হবে? আমরা বহুবার বলে এসেছি প্রশাসনিক কাজে সমন্বয়হীনতা এড়াতে অটোমেশন এর আওতায় নিয়ে আসা হোক। এতদিন হয়ে গেলেও সে অটোমেশন আমরা দেখতে পাই নি। এছাড়া, একটি লেকচার থিয়েটার হল এবং এক্সামিনেশন হল নির্মাণ করা যেতে পারে। যেখানে ৬২ টা ক্লাস রুম হবে ও প্রতি ঘন্টায় মোট ২০০ জন ক্লাস করতে পারবে। 

বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়ন হোক কিন্তু সেটা সুপরিকল্পিতভাবে হোক বলেও দাবি করেন তিনি। 

জাবি ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীদের সকল সুযোগ- সুবিধা অগ্রাধিকারভিত্তিতে নিশ্চিত করা। তাই শ্রেণীকক্ষ সংকট নিরসনে একাডেমিক ভবন নির্মাণ যেমন প্রয়োজন তেমনি শিক্ষার্থীদের জন্য যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারিরা কাজ করেন তাদের কাজ সুষ্ঠু ভাবে সম্পাদনের জন্য একটি উপযুক্ত পরিবেশ প্রয়োজন। সেজন্য একডেমিক ভবনের পাশাপাশি নতুন প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।  

শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন বলেন, আমরা শিক্ষক সমিতি থেকে মাস দুয়েক আগেও একাডেমিক ভবনগুলো আগে করার জন্য লিখিত পত্র দিয়েছিলাম। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেটা নিয়ে কি ভাবছে তা এখনও পরিষ্কার করেনি। আমার নিজ বিভাগেও প্রতি বছর ৭০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়। যেখানে ধারণ ক্ষমতা মাত্র ৪০ জন। ফলে আমরা অনেক সময় ক্লাস প্র্যাকটিক্যাল নিতে পারি না। এই সমস্যা উত্তরণে আমি মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল পক্ষকেই একাডেমিক ভবন নির্মাণে অগ্রাধিকারের পক্ষে দাবী জানানো উচিৎ। 

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজিের অধ্যাপক শামীম কায়সার বলেন, "সমিতির সম্মিলিত সিদ্ধান্তের জন্য কয়েকদিন পর আমরা একটা সভা ডাকবো এবং সেখান থেকেই সম্মিলিত সিদ্ধান্ত আসবে। ব্যক্তিগতভাবে আমি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে শ্রেণিকক্ষ সংকট নিরসন, শিক্ষকদের বসবার রুমের সংকট এবং মানসম্মত আধুনিক ব্যবস্থা সম্বৃদ্ধ ল্যাবের বিষয়গুলো প্রাধান্য দিয়ে কাজ করা উচিত বলে মনে করি।"


মন্তব্য