মধ্যরাতে যবিপ্রবির একাডেমিক ভবনে আগুণ, নিয়ন্ত্রণে সংবাদকর্মী ও শিক্ষার্থীরা

যবিপ্রবি
  © টিবিএম ফটো

মধ্যরাতে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমিক ভবনে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। তবে আগুন ছড়িয়ে পড়ার আগেই তা দেখতে পেয়ে দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই সংবাদকর্মী ও তাদের এক সহপাঠী। শনিবার (১৩ মে) দিবাগত রাতে আনুমানিক ১ টায় একাডেমিক ভবনের নবম তলায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এমন সাহসীকতার জন্য ঐ শিক্ষার্থীদেরকে প্রশংসায় ভাসাচ্ছে যবিপ্রবি পরিবার। 

এদিকে ভোররাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: আনোয়ার হোসেন। তিনি তদন্ত করার পূর্ব পর্যন্ত ৯ম তলার সকল ধরণের ক্লাস-পরীক্ষা বিকল্প স্থানে ও দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। 

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের একটি মেস থেকে একাডেমিক ভবনের নবম তলায় আগুন দেখতে পান বিশ্ববিদ্যালয়ের এপিপিটি বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল নোমান। আগুন দেখতে পেয়ে সে তার বন্ধু ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদকর্মী মোতালেব হোসেনকে বিষয়টি জানান। খবর পেয়ে মোতালেব ও তাঁর বন্ধু এফএমবি বিভাগের শিক্ষার্থী শেখ সাদি দ্রুত ঘটনা স্থলে যান। সেখানে যেয়ে আনসার সদস্যদের সাহায্যের জন্য ডাকলে তাঁরা সাড়া না দিলে নিজেরা অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের সাহায্যে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। মিনিট দশেক পরে আগুন নেভাতে সক্ষম হয় সাদি,মোতালেব, নোমান ও তাঁর বন্ধুরা। প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এক্সস্ট ফ্যান থেকে শর্ট সার্কিট হয়ে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। 

আগুন নেভানোর কাজে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী শেখ সাদি জাতীয় দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি এবং মোতালেব হোসাইন এশিয়ান টিভি অনলাইনের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক। উভয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির সদস্য।

প্রথম আগুন দেখতে পাওয়া শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, রাত ১ টার দিকে বেলকুনিতে বসে ফোনে খেলা দেখছিলাম। একাডেমিকের দিক থেকে শব্দ হইলো একটু পর দেখি আগুন জ্বলতেছে। এতো রাতে কি করবো কাকে বলবো ভাবছিলাম। তারপর আমার বন্ধু সাংবাদিক সমিতির মোতালেব হোসেনকে ফোন করে আগুনের কথা বললাম।তারপর দৌড়ে একাডেমিকের দিকে যাই। নিচ তলায় আনসার মামাদের জানাই। মামারা বলেন ওপরে কি হচ্ছে কি করে বলবো? ওনাদের কে ওপরে আসতে বললাম।কিন্তু ওনারা নিচ থেকে দাঁড়িয়ে দেখতে থাকলো।উপায় না পেয়ে দৌড়ে ৯ তলায়  গিয়ে দেখি  মোতালেব ও শেখ সাদি আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে। আগুন অনেক ছড়িয়ে যাচ্ছিলো। ১০-১৫ মিনিটের চেষ্টায় আগুন নেভাতে সক্ষম হই। তারপর আনসার মামারা ৯ তলায় উপস্থিত হন।

আরও পড়ুন: আন্দোলনের মুখে কর্মচারী বাদলের শাস্তির আশ্বাস যবিপ্রবি উপাচার্যের

আগুন নেভানোর ব্যাপারে শেখ সাদি বলেন, আগুন লাগার খবর পেয়ে আমি ও মোতালেব একাডেমিক ভবনের পাশে যায়। দেখতে পায়, নবম তলায় আগুন জ্বলছে। লিফট চালু না থাকায় সিড়ি বেয়ে  দুজনেই দ্রুত ৯ম তলায় উঠি। প্রথমেই আগুন অল্প জায়গায় থাকলেও কিছুক্ষণের মধ্যে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়া দেখে, উপর থেকে আনসার মামাদের ডাকি। তাদের তড়িৎ সাড়া না পেয়ে হাফিয়ে গেলেও বড় ধরণের ক্ষতি হবার আশংকায় অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করি। নিজের টি-শার্ট কে মাস্কের মতো ব্যবহার করে আগুন নেভাতে আবারও এগিয়ে যায় এবং আগুন নেভাতে  সামর্থ্য হয়। মোতালেব ও নোমান যদি পাশে না থাকতো এই কাজ আমার জন্য সহজ হতো না, তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ। তাদের সহযোগিতায় বড় ধরনের ক্ষতি হতে বাঁচাতে পেরেছি প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়কে। এই ধরনের কাজ করতে পেরে সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানাই।

এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমিক ভবনে আগুন লাগার কারণে  ৯ম তলার সকল ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা ও দাপ্তরিক কার্যক্রম তদন্ত করার পূর্ব পর্যন্ত বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন। তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে বলেন, উক্ত ৯ম তলার পরীক্ষার কার্যক্রম বিকল্প স্থানে বিভাগের রুটিন অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে। এসময় তিনি আগুন নেভানোর কাজে অংশগ্রহণকারী দুই সাংবাদিক ও আগুন দেখতে পাওয়া শিক্ষার্থীকে ধন্যবাদ জানান এবং রিজেন্ট বোর্ড থেকে তাদেরকে ধন্যবাদ সম্মাননা দেওয়ার আশা ব্যক্ত করেন।


মন্তব্য


সর্বশেষ সংবাদ