রোল-রেজিস্ট্রেশন নম্বরবিহীন খাতায় পরীক্ষা দিতে চায় কুবি শিক্ষার্থীরা

কুবি
  © টিবিএম ফটো

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ বিভাগের প্রতিটি বিভাগেই সেমিস্টার পদ্ধতিতে পরীক্ষা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে এসব পরীক্ষায় নম্বর টেম্পারিংয়ের অভিযোগ রয়েছে বিভিন্ন শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। এসব থেকে প্রতিকার পেতে  রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বরবিহীন খাতায় পরীক্ষা দিতে চায় বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়,  গত বছর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোর্শেদ রায়হানের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা নম্বর টেম্পারিংয়ের অভিযোগ আনেন। সেই প্রেক্ষিতে খাতা পুনঃমূল্যায়ন করলে নম্বর টেম্পারিংয়ের অভিযোগ প্রমাণিত হয়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. বনানী বিশ্বাসের বিরুদ্ধে স্নাতকোত্তর ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের থিসিস পেপারের ভাইভা বোর্ডে এবং সেমিস্টার ফাইনাল খাতায় নম্বর টেম্পারিং করার অভিযোগ উঠেছিল। এছাড়া এর আগেও একই শিক্ষকের নামে অভিযোগ উঠেছিল ব্যক্তিগত সম্পর্কের প্রভাব শিক্ষার্থীদের খাতা মূল্যায়নে থাকা নিয়ে।

ব্যক্তিগত সম্পর্ক নয় মেধার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের খাতা যেন মূল্যায়ন করা হয় এর নিশ্চয়তা পেতে শিক্ষার্থীরা দাবি করছেন রোল-রেজিস্ট্রেশন নম্বরবিহীন খাতায় পরীক্ষা নেয়ার জন্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ অনুষদের ১৯ টি বিভাগের শিক্ষার্থীদের সাথে এই বিষয়ে কথা বলতে গেলে  তারা এমন মন্তব্য করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের এক শিক্ষার্থী বলেন, দুই-একটা বিভাগের নম্বর টেম্পারিংয়ের অভিযোগ  সামনে এসেছে। কিন্তু আরো অনেক বিভাগের শিক্ষার্থীরাই এর ভুক্তভোগী। আমাদের পরীক্ষাগুলো রোল, রেজিস্ট্রেশন নম্বরবিহীন খাতায় নিতে পারলে ভালো হয়। এতে করে শিক্ষকদের সাথে কার সম্পর্ক কেমন সেটা মূল বিষয় হয়ে উঠবে না। মেধাই তখন মূল বিষয় হয়ে উঠবে। 

নাম প্রকাশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা শিক্ষা অনুষদের এক শিক্ষার্থী বলেন, একটি বিভাগের সকক শিক্ষকই আমাদের শিক্ষক । একজন শিক্ষকের রুমে কোন কিছু জানতে গেলে বিভাগের অন্য শিক্ষকরা দলবদ্ধভাবে অন্যান্য কোর্সে নম্বর কমিয়ে দেয়। ফলে কোন বিষয়ে দুর্বলতা থাকলে সেগুলো কোন শিক্ষকের সাথে আলোচনা করার সুযোগ আমরা পাই না। শিক্ষকদের নিজেদের রাজনীতিতে আমাদের ক্যারিয়ার হুমকির মুখে পড়ে যায়। ফলে একাডেমিক লাইফে শিক্ষার্থীরা অনেক ক্ষেত্রে বিভাগ এবং শিক্ষকদের পাশ কাটিয়ে চলে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকদের সাথে এই বিষয়ে কথা বলতে গেলে তারা জানান, প্রতিটা বিভাগেই শিক্ষকদের একের অধিক গ্রুপ রয়েছে। এইসব গ্রুপ মেইনটেইন করতে গিয়ে কিংবা অহং বোধ থেকে শিক্ষকরা নম্বর টেম্পারিংয়ের মত কাজে নিজেদের জড়ান। অনেক সময় শিক্ষকদের ভেতরকার রাজনৈতিক চালে পরিণত হন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকরাই শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে নিজেদের ফায়দা হাসিল করে থাকেন। এসব বেরিয়ে আসতে রোল- রেজিস্ট্রেশন নম্বরবিহীন খাতায় পরীক্ষা নেয়া কার্যকরী উপায় বলে জানান শিক্ষকরা।

 উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন এ ব্যাপারে বলেন, 'বিশাল সংখ্যক স্টুডেন্টের জন্য রোল কিংবা রেজিস্ট্রেশনবিহীন ব্যবস্থা চালু করা কঠিন। তবে আমরা আমাদের বিভিন্ন নিয়োগের প্রশ্ন এভাবে করি। কারন সেসব নিয়োগে প্রার্থীর সংখ্যা কম। সামনের দিনে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবো। 

তিনি আরো বলেন, 'এসব সকল শিক্ষক করে না। কিছু শিক্ষকের কারনে সকল শিক্ষককে এসব কথা শুনতে হয়। আমার আহ্বান থাকবে শিক্ষকরা যেন এসব ক্ষেত্রে নৈতিকতার পরিচয় দেয়।'


মন্তব্য


সর্বশেষ সংবাদ