ঢাবি ও বুয়েট শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনে ‘প্রয়োজনে আমরা’

ক্যাম্পাস
‘প্রয়োজনে আমরা’  © টিবিএম ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীদের ই-মেডিসিন ও ফ্রুডস সেবা দিয়ে আসছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। এ লক্ষ্যে তারা প্রতিষ্ঠিত করেছে ‘প্রয়োজনে আমরা’ নামক একটি প্রতিষ্ঠান। সপ্তাহের সাতদিন চব্বিশ ঘন্টা সার্ভিস সেবা পাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ পর্যন্ত ৫ হাজারের অধিক সেবা গ্রহণকারীর কাছে সেবা পৌঁছে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি সংখ্যা মাত্র একটি। বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবের ভিতরে অবস্থিত ওই ফার্মেসিতে প্রয়োজনীয় ওষুধ পাওয়া যায় না। প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনতে যেতে হয় শাহবাগ কিংবা ঢাকা মেডিকেল এরিয়ায়। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের মাঝে বিশেষ করে অসুস্থদের কাছে নামমাত্র সার্ভিস চার্জে ওষুধ ও ফলমূল পৌঁছে দিতে ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে। এর মূল উদ্যোক্তা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মাহিনুর রহমান। তার ব্যাচ ও জুনিয়র শিক্ষার্থী মিলে ৮ সদস্যদের একটি টিম মূলত এ প্রতিষ্ঠানের পরিচালনায় নিয়োজিত।


তবে এই প্রতিষ্ঠানটি শুরুর পর একমাস ভালই চলে। এরপর শুরু হয় করোনা মহামারী। টিমের সদস্যদের সমন্বয়হীনতা ও করোনা ভাইরাসের কারণে বন্ধ হয়ে যায় ‘প্রয়োজনে আমরা’ এর সেবা কার্যক্রম। এরপর ২০২১ সালের শেষের দিকে করোনা মহামারীর সমাপ্তিতে চালু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সেই সাথে আবারও শুরু হয় এর কার্যক্রম। 

প্রতিদিন দশ থেকে সর্বোচ্চ বিশ জনের উপরে সেবা গ্রহীতার কাছে ওষুধ ও ফলমূল পৌঁছে দেয় প্রতিষ্ঠানটির সদস্যদরা। এক্ষেত্রে সার্ভিস চার্জ হিসেবে সেবা গ্রহীতাকে মাত্র ২০ টাকা গুনতে হয়। দিন ও রাতের যেকোনো সময় এই সেবা পৌঁছে দেন টিমের সদস্যরা। সেবা গ্রহীতা তাদের ফেসবুক পেইজ ‘প্রয়োজনে আমরা’ তে দেয়া নাম্বারে সেবা চাইলেই তা পৌঁছে দিতে ছুটে যান টিম সদস্যরা। তবে এক্ষেত্রে তাদের সেবা দেয়ার পদ্ধতিটা একটু অন্যরকম।

তাদের টিমে নারী শিক্ষার্থী রয়েছেন ৪ জন- সমাজবিজ্ঞান বিভাগের রিধী হাসান, অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের হ্যাপি আক্তার, চাইনিজ ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগের মিথিলা খাতুন ও সংগীত বিভাগের অনিন্দিতা সরকার। আর পুরুষ শিক্ষার্থী রয়েছেন ৪ জন- দর্শন বিভাগের মাহিনুর রহমান, একই বিভাগের মাহবুব হাসান, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের আহমেদ ফয়সাল ও ইসলাম শিক্ষা বিভাগের মামুন আকুঞ্জি। এদের মধ্যে নারী শিক্ষার্থীরা সেবা গ্রহীতার দেয়া মেসেজের রিপ্লাই ও অর্ডার গ্রহণ করেন আর পুরুষ শিক্ষার্থীরা তা সেবা গ্রহীতার কাছে পৌঁছে দেন।

এদিকে শুরুতে ‘প্রয়োজনে আমরা’ এর কার্যক্রম শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে সেবা দেয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো কিন্তু বর্তমানে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে বুয়েট ও ঢাবি অধিভুক্ত ইডেন মহিলা কলেজে বিস্তৃত হয়েছে। টিমের লক্ষ্য এ সেবাকে পুরো ঢাকা শহরের মাঝে বিস্তৃত করা।

এই প্রতিষ্ঠানের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মাহিনুর রহমান বাংলাদেশ মোমেন্টসকে বলেন, আমরা নাম মাত্র চার্জে এই সেবা দিয়ে যাচ্ছি। এখান থেকে যা আয় হয় তা যৎসামান্য। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে আমাদের দৈন্দিন জীবনকে আরো বেশি সহজ করে তোলা। সবাইকে রিল্যাক্স দেয়া; অসুস্থতায় যেন কাউকে অতিরিক্ত চাপ নিতে না হয়; ওষুধ নিয়ে দুশ্চিন্তা না করতে হয়। নামমাত্র ডেলিভারি চার্জ নিয়ে আমরা এই সেবাটা দিয়ে থাকি।

এ প্রতিষ্ঠান থেকে সেবা গ্রহীতার সংখ্যা বর্তমানে ৫ হাজারের অধিক। তাদের সেবায় সন্তোষ প্রকাশ করে শামসুন্নাহার হলের শিক্ষার্থী নির্জনা ফেরদাউস বলেন, আমি 'প্রয়োজনে আমরা থেকে বেশ কয়েকবার ওষুধ ডেলিভারি নিয়েছি। মেয়ে মানুষ চাইলেও আমরা সহজে ওষুধ কেনার জন্য দূরে যেতে পারি না। অনেক সময় জরুরি ওষুধ প্রয়োজন হয়। তখন তাদের সেবা নিয়ে থাকি। আর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো তাদের ডেলিভারি চার্জ একদম কম। যেটাকে আমরা স্টুডেন্ট ফ্রেন্ডলি বলতে পারি।

মাহিন বলেন, আমি সর্বদা স্বপ্ন দেখতাম নতুন কিছু করার, নিজে কিছু করার। আমি উদ্যোক্তাদের জীবনীগ্রন্থ পড়তাম, তাদের গল্প শুনতাম। নিজে ভাবতাম কিভাবে আমি নিজে কিছু একটা করতে পারব। প্রথমে ক্যাম্পাসে খাতা কলমের ডেলিভারি নিয়ে ভেবেছিলাম। পরে সবার সাথে কথা বলার পর সেটা ভেস্তে যায়। তারপর ওষুধ নিয়ে কাজ করার চিন্তা আসার পর এটা নিয়ে কাজ শুরু করি এবং ভালো সাড়াও পাই। ডিজিটাল যুগে এমন স্মার্ট একটা সেবা ঢাবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আমরা দিতে পেরেছি। সামনে পুরো ঢাকাবাসীকে এই সেবা দিতে চাই।


মন্তব্য