ঢাবি তথ্যবিজ্ঞান বিভাগ অ্যালামনাইয়ের প্রথম মিলনমেলা

ঢাবি
  © টিবিএম ফটো

দীর্ঘ ৬৪ বছর পর প্রথমবারের মতো নানা আনুষ্ঠানিকতায় সম্পন্ন হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কলা অনুষদের অন্যতম বিভাগ তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত সংগঠন তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগ অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের মহামিলন।

আজ শুক্রবার (১৯ মে) বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে সকাল দশটায় পুনর্মিলনী শুরু হয়। বিকালে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও র্য্যাফেল ড্রয়ের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।

  

দিনব্যাপী চলা এ মিলনমেলায় অংশ নিতে সকাল থেকেই বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে জড়ো হন বিভাগটির সাবেক শিক্ষার্থীরা। ১৯৫৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বিভাগের এই প্রথমবারের মতো কোনো পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হলো। দীর্ঘসময় পরে তাদের প্রিয় বন্ধুকে কাছে পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন অনেকেই। একে অপরকে জড়িয়ে ধরেন অনুষ্ঠানে আগত বিভাগটির এসব সাবেক শিক্ষার্থী। দিনব্যাপী চলা এ মিলনমেলায় মুখরিত ছিল বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ। গল্প আর অট্টহাসিতে অন্য এক মনোরম পরিবেশের উত্থান হয় প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের এ মহামিলনে। অনেকেই আবার তার পুরনো বন্ধুর সাথে ছবি তুলায় ব্যস্ত সময় পার করেন।

অ্যালামনাই এসোসিয়েশন ও অনুষ্ঠানের সভাপতি অধ্যাপক ড. এস এম মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ। সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুল বাছির। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. নাসিরউদ্দিন মুন্সী। এছাড়াও, উপস্থিত ছিলেন অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোসাম্মাৎ শাহানারা খাতুন প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, আমরা দেখেছি, আমাদের সময়ে অনেক শিক্ষার্থী বন্ধুরা এখান থেকে তাদের আয়ের কিছু অংশ তাদের বাড়িতে পাঠাতো। আমি জেনে আনন্দিত হয়েছি অ্যালামনাই এসোসিয়েশন থেকে এই বিভাগের অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করা হয়। শিক্ষার্থীদের দক্ষতা ও ক্যারিয়ার গঠনে অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সহযোগিতা অনেক জরুরী। আমাদের সবসময় নতুন প্রযুক্তির সাথে খাপ খাইয়ে রাখতে হবে যাতে আমরা বর্তমান বিশ্বের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারি।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০২১ ও ২০৪১ সালে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে রূপকল্প দিয়েছেন। আমাদের লক্ষ্য ছিলো ডিজিটাল বাংলাদেশ। আজকে আমরা করোনা মোকাবেলা করার জন্য যে প্রযুক্তিগত পরিবর্তন তা আমরা করতে সক্ষম হয়েছি। শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। রংপুরকে বিভাগ ঘোষণা করার পর কুমিল্লাকে করার দিকে আছে। দেশের অঞ্চলগুলোকে ডিজিটালাইজড করার জন্য সরকার এসব উদ্যোগ নিয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্মে বিশ্বাস করেন। তার পরিকল্পনার মাধ্যমে আমরা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করবো।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের গড় আয়ু বেড়েছে, স্বাক্ষরতার হার বেড়েছে। সবদিক দিয়ে বাংলাদেশ‌ এগিয়ে গেছে। সারাদেশে বিনামূল্যে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা দেয়া হচ্ছে।সারাদেশে বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের বই দেয়া হচ্ছে। আজকে আমাদের যে স্বপ্ন তা জাতির পিতা দেখিয়েছেন। অত্যন্ত দক্ষ ও যোগ্য নেতৃত্বের কারণে আজকে জাতিসংঘ থেকে শুরু করে অনেকেই বাংলাদেশকে মডেল হিসেবে গ্রহণ করে নিচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে তারুণ্যের শক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, নলেজ ইজ পাওয়ার, ইনফরমেশন ইজ পাওয়ার অ্যান্ড দিজ ডিপার্টমেন্ট ইজ মোর পাওয়ারফুল। আগামীর প্রজন্মকে এগিয়ে নেয়ার জন্য তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি মনে করেন। এক্ষেত্রে এই বিভাগকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী।

সভাপতির বক্তব্যে তথ্য বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. এস এম মান্নান বলেন, অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের মূল কাজ শুধু পুনর্মিলনী করা নয়। এলামনাই এসোসিয়েশনের ২টা মিশন ও ভিশন আছে- এক্সিস্টিং প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট এবং যারা প্রফেশনালস হবে তাদেরকে যুগোপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য কাঠামোগত ও প্রশিক্ষণসহ সবদিক দিয়ে আমাদেরকে তাদের সহযোগিতা করতে হবে এবং আমি বিশ্বাস করি যারা এলামনাই আছেন এক্ষেত্রে তাদের অনেক সক্ষমতা রয়েছে। প্রতিটা বিভাগে অনেক শিক্ষার্থী থাকেন যাদের ইনফ্রাস্ট্রাকচারাল সুযোগ-সুবিধার অভাব থাকে। আপনাদের সবার কাছে আবেদন রাখবো ব্যক্তিগত হোক অথবা অন্য কোনভাবে সহযোগিতা করা সম্ভব হলে এলামনাইয়ের স্কলারশিপ ফান্ডে সহযোগিতা করবেন।

তিনি বলেন, আমি অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে আমাদের দেশে ৪ ধরনের লাইব্রেরি আছে। এর সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরীতে কোন অভিযোগ নেই। আমাদের বিশেষ লাইব্রেরীতেও কোন অভিযোগ নেই। শুধু অভিযোগটা হচ্ছে সরকারি লাইব্রেরীগুলো নিয়ে। নিয়োগ বিধিতে কোথাও ক্লাস ওয়ান, কোথাও ক্লাস টু কিংবা কোথাও ক্লাস থ্রি- এমনভাবে আমাদের অবমূল্যায়ন করা হয়। 

অধ্যাপক মান্নান বলেন, আজকের এই এলামনাই এসোসিয়েশনের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমি মাননীয় মন্ত্রীর কাছে সবিনয় অনুরোধ করবো আমরা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করবো যেন আমাদের বিষয়ে একটি ইউনিফর্ম রিক্রুটমেন্ট রুল হয় এবং আশা করছি মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় এই প্রক্রিয়ায় তার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিবেন।


মন্তব্য