আশা হতাশা আর প্রতিযোগিতায় জাবি ভর্তি পরীক্ষা
- আশরাফুল, জাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২০ জুন ২০২৩, ১২:৫৯ PM , আপডেট: ২০ জুন ২০২৩, ১২:৫৯ PM

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষা শুরুর তৃতীয় দিন আজ। এতো আশা আর উৎকণ্ঠা নিয়ে আসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে অধিকাংশই হবে ব্যার্থ।
এবার ১ হাজার ৮৪৪টি আসনের বিপরীতে মোট ২ লাখ ৪৯ হাজার ৮৫৭টি আবেদন পড়েছে। সে হিসাবে এবারের ভর্তি পরীক্ষায় প্রতি আসনের বিপরীতে লড়বে ১৩৬ জন ভর্তিচ্ছু। আবেদনকারীদের মধ্যে এক লাখ ৩৪ হাজার ৫০৭ জন পুরুষ এবং এক লাখ ১৫ হাজার ৩৫০ জন নারী শিক্ষার্থী।
একটা সহজ সমীকরণ যে বাদ পরবে প্রায় ২ লাখ ৪৮ হাজার শিক্ষার্থী। দিন যতই যাচ্ছে আর প্রতিযোগিতা ততই বেড়ে চলেছে।
সাংস্কৃতিক রাজধানী নামে খ্যাত এই সবুজ নগরীর অংশীদার কে না হতে চায়? তাইতো প্রতিবছর লাখো লাখো শিক্ষার্থী আসে তাদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে। কিন্তু ক’জন-ই বা পারে সেটা পূরণ করতে? বেশিরভাগই যেনো যায় রসাতলে কারণ আসন সংখ্যা যে সীমিত।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গন মুখরিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ও মানবিক অনুষদ প্রাঙ্গণ, শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ, সমাজবিজ্ঞান অনুষদ, গাণিতিক ও পদার্থবিজ্ঞান অনুষদ, ক্যাফেটেরিয়া, সেন্ট্রাল ফিল্ড ও সংশ্লিষ্ঠ পরীক্ষা কেন্দ্র ভবনগুলোর আশপাশে অভিভাবকদের উপস্থিতি বেশি। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বর, চৌরঙ্গী, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ, পুরাতন কলা ভবন এবং জাবি স্কুল ও কলেজ মাঠে অভিভাবকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
আশা আর স্বপ্ন ভঙ্গের গল্প যেনো একেকটা মহাকাব্য। শুনছিলাম রংপুর থেকে পরীক্ষা দিতে আসা অনিক রায়ের কথা, অনেক স্বপ্ন নিয়ে পরীক্ষা দিতে আসছি। আমার পরিবারের অবস্থা ভালো না, আমাকে আমার ভাগ্য হয়তো নির্ধারণ করবে এই ভর্তি পরীক্ষায় আমি কি করবো, কোনদিকে যাবো। জানিনা ভাগ্যে কি আছে! পরীক্ষা দিলাম বাকিটা সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা।
আমরা সবাই চাইলেও ভর্তি হতে পারবো না, একটা আসনের পরিবর্তে নাকি ১৩৬ জন করে লড়ছে। তার মানে প্রতি আসন থেকে ১৩৫ জন শিক্ষার্থী বাদ থাকবে শুধু একজন। এমনই মন্তব্য করেছেন নারায়নগঞ্জ থেকে আসা লামিয়া ভূঁঞা নামে এক শিক্ষার্থী। তিনি আরো বলেন, ভাবতেই কেমন লাগে এমন অনুভূতি আগে কখনও উপলব্ধি করিনি।
নেত্রকোনা থেকে পরীক্ষা দিতে নিয়ে আসা আশিকের বাবা বলেন, এতো দূর থেকে ছেলেকে নিয়ে আসলাম পরীক্ষা দেওয়ানোর জন্য, এইখানে থাকা-খাওয়া খুবই কষ্টের। তবুও নিজের কষ্টের কথা ভাবছি না যদি ছেলেটা চান্স পায় তাহলেই আমার কষ্ট সার্থক।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ক্যাম্পাসের মায়ায় কে না পরবে? কে না চাইবে এইখানে পড়তে। আমি আসছি দু-দিন হলো। আমার এক পরিচিত ভাইয়ের কাছে থাকছি। এর আগে কখনো ক্যাম্পাসে আসা হয় নাই। এতো সুন্দর ক্যাম্পাস, আর আমি পড়তে পারবো না যদি না চান্স হয়, এটা ভাবলেই কেমন জানি লাগে। এমনই অনুভূতি ব্যাক্ত করেছেন ভর্তি পরীক্ষার্থী সন্ধীপ।
এইখানে এসে যা দেখলাম অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা, কল্পনা- জল্পনার নানা গল্প বিরাজ করছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। কে থাকবে আর কে হেরে যাবে, এই লড়াইয়ে। তা সময়ের ব্যাপার। আল্লাহর কাছে দোয়া করি যেনো সবার চান্স হয়, সবার মুখে হাসি থাকে। এমনই অনুভুতি প্রকাশ করেছেন নীলফামারী থেকে আসা পরীক্ষার্থী মাইশার মা।
এতো স্বপ্ন, আশা, আকাঙ্ক্ষা সবই তো যাবে বৃথা, প্রতিযোগিতার লড়াইয়ে টিকে থাকবে গুটিকয়েক শিক্ষার্থী যার সংখ্যাটা হলো মাত্র ১ হাজার ৮৪৪ জন।