জাবিতে শিক্ষক নিয়োগে স্বজনপ্রীতি
- জাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৩, ০৫:৩৮ PM , আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৩, ০৫:৩৮ PM

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের প্রভাষক পদে উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের পছন্দের প্রার্থী আয়েশা সিদ্দিকা আরশিকে নিয়োগ দিতে তড়িঘড়ি করে নিয়োগ বোর্ড ডাকার অভিযোগ উঠেছে।
আয়েশা সিদ্দিকা আরশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ৪৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি সম্পর্কে উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের ভাগ্নি হন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এছাড়া আরশি নিয়োগ দিতে উপাচার্যের পক্ষ থেকে চাপ দেয়া হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেছেন বিভাগের সভাপতি মোহাম্মদ শওকত হোসেন।
জানা যায়, আজ বুধবার (০৫ জুলাই) বেলা দুইটায় ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের নিয়োগ বোর্ড বসছে। এর আগে, শিক্ষক নিয়োগের জন্য গত ০১ জুন থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত আবেদনপত্র গ্রহণের সময় ছিল। পরে ২৫ জুন নিয়োগ বোর্ডের তারিখ ঘোষণা করা হয়।
এদিকে আগামী ৬ জুলাই বিভাগের সভাপতি মোহাম্মদ শওকত হোসেনে শেষ কার্যদিবস। এরপর ৮ জুলাই থেকে বিভাগের সভাপতি দায়িত্ব পালন করবেন সহযোগী অধ্যাপক মো. ইউসুফ হারুন। ফলে বিভাগের সভাপতির দায়িত্ব শেষ হওয়ার একদিন আগে তড়িঘড়ি করে নিয়োগ বোর্ড বসানোর বিষয়টি ত্রুটিপূর্ণ মনে করছেন অনেকে। এছাড়া হটাৎ বোর্ডের তারিখ ঘোষণা করায় অনেক প্রার্থী দেশের বাইরে থেকে এসে অংশ নিতে পারছেন না বলেও অভিযোগ উঠেছে।
অন্যদিকে গত ২২ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন অফিসে এক আলাপচারিতায় বিভাগের অন্যান্য শিক্ষকদের উপস্থিতিতে বিভাগের সভাপতি মোহাম্মদ শওকত হোসেন উপাচার্যের পছন্দের প্রার্থী আয়েশা সিদ্দিকা আরশির নাম উল্লেখ করে বলেন, 'তাকে নিয়োগ দিতে হবে। কারণ তিনি উপাচার্য স্যারের ভাগ্নি।' ফলে বিভাগের সভাপতির এমন মন্তব্যের পর শিক্ষক নিয়োগে স্বজনপ্রীতির আভাসে ক্ষুব্ধ বিভাগের অন্য শিক্ষকরা।
বিভাগের একাধিক শিক্ষক জানান, 'শিক্ষক হিসেবে কাকে নিয়োগ দেওয়া হবে- তা নিয়োগ বোর্ড সিদ্ধান্ত নিবে। তবে বোর্ড বসানোর আগেই যদি কোন প্রার্থীকে বাছাই করা হয়, তাহলে নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছ থাকে না। নিয়মানুযায়ী, যাদের রেজাল্ট ভালো এবং নিয়োগ বোর্ডে ভালো করবেন তাদের নিয়োগ দেওয়া হবে। কিন্তু স্বজনপ্রীতির কারণে একজন এগিয়ে থাকবে অপরদিকে অন্যজন পিছিয়ে থাকবে, এটা হতে পারে না। এছাড়া বিভাগের সভাপতির শেষ কর্মদিবসেই কেন তড়িঘড়ি করে নিয়োগ বোর্ড বসানো হবে- তা নিয়েও শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আয়েশা সিদ্দিকা আরশি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মেহের নিগার কবিতার ভাতিজি। মেহের নিগার উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের নিকটাত্মীয় এবং সম্পর্কে বোন। তিনি আয়েশা সিদ্দিকা আরশির আপন চাচী। অধ্যাপক মেহের নিগার শিক্ষার্থী থাকাকালীন ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। পরে তিনি বিএনপির শিক্ষক রাজনীতিতেও সক্রিয় ছিলেন। এছাড়া তার স্বামী মনোয়ার হোসেন ১৯৯০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়াউর রহমান হল ছাত্র সংসদের নির্বাচিত ভিপি ছিলেন এবং শাখা ছাত্রদলের সংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এদিকে আরশির পিতা প্রয়াত আরজু মিয়া মিরপুরের স্থায়ী বাসিন্দা এবং বিএনপির সক্রিয় কর্মী ছিলেন।
অন্যদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভাগের এক শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন, 'বিভাগের সভাপতি মোহাম্মদ শওকত হোসেন সম্প্রতি প্রফেসরশিপের জন্য আবেদন করেছেন। তার প্রফেসরশিপের বিনিময়ে উপাচার্যের আত্মীয়কে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়ার গোপন চুক্তি হয়েছে।'
এ বিষয়ে বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. ইউসুফ হারুন বলেন, 'এতদ্রুত সময়ের মধ্যে নিয়োগ বোর্ডের কাজ কিভাবে সম্পন্ন হয়- তা নিয়ে আমরা সন্দিহান। এছাড়া বিভাগের সভাপতির শেষ কর্মদিবসে তড়িঘড়ি করে নিয়োগ বোর্ড বসানো নিয়ে বিস্মিত এবং কিছুটা অপমানিত বোধ করছি। তিনি দায়িত্ব শেষ করার পূর্বেই শিক্ষক নিয়োগ দিতে তড়িঘড়ি করছেন কেন- তা আমার বোধগম্য নয়।'
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে বিভাগের সভাপতি ও সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ শওকত হোসেন এবং উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমকে একাধিকবার ফোন কল করা হলেও তারা রিসিভ করেননি।