ঢাবিতে মাস্টার্সের ভর্তি পরীক্ষায় মা-ছেলে
- ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৩, ০৫:১৫ PM , আপডেট: ১০ জুলাই ২০২৩, ০৫:২০ PM

মা আইরিনের অনার্স পরীক্ষা চলে। পেটে তখন ছেলে আলিফ। পরীক্ষা শেষ হওয়ার দুইদিন পরেই আলিফের জন্ম হয়। এরপর দীর্ঘ সময় পরে আইরিন মাস্টার্স পরীক্ষা দেন। কিন্তু তার ইচ্ছা ছিলো সন্তানের সাথে আর একবার মাস্টার্স পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার। তার অদম্য ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে দীর্ঘ ২৭ বছর পর। দীর্ঘ সময় পর বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছেলের গ্র্যাজুয়েশন শেষে মা-ছেলে একসঙ্গে বসেছেন মাস্টার্সের ভর্তি পরীক্ষায়।
জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৯৪-৯৫ সেশনের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ছাত্রী ছিলেন জুলিয়া আইরিন। এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হতেই বিয়ে হয়েছিল তার। ঢাবিতে প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হওয়ার কিছুদিন পরই গর্ভধারণ করেন তিনি। ছেলের দেখভাল করতে করতেই নিজের গ্র্যাজুয়েশন আর মাস্টার্স শেষ করেন। এর মাঝে জন্ম হয় আরেক সন্তানের। এরপর ছেলে আলিফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগে মাস্টার্সের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। আইরিনও এ পরীক্ষায় অংশ নেন।
মায়ের এই সাহসী পথচলার গল্প সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের প্রোফাইলে পোস্ট করেছেন ছেলে মো. মুকসেতুল ইসলাম আলিফ। সেই পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘‘আমার মা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক হওয়ার আগে প্রথম বছরে আমাকে জন্ম দেন। আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক হয়েছি। আজ আমরা দুইজনে একসাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স ভর্তি পরীক্ষা দিলাম। জীবন সত্যিই পূর্ণ বৃত্ত আসে। এটি মুকসেতুল ইসলাম আলিফ ও তার মায়ের গল্প। শুভ কামনা।’’
আইরিন বলেন, ’অল্প বয়সে যৌথ পরিবারে সংসার, বাচ্চা সামলে পড়ালেখা করাটা যথারীতি কঠিন ছিল আমার জন্য। তবু একবারের জন্যও থেমে থাকিনি। আমি সবসময় ভেবেছি যেভাবেই হোক আমাকে পারতেই হবে। এখন যখন ওই বয়সের জার্নিটার কথা ভাবি নিজেরই খুব অবাক লাগে, সেই সাথে ভবিষ্যতে এগিয়ে যাওয়ার সাহসও পাই।’
ছেলে আলিফ বলেন, ‘অনেক দিন যাবতই মায়ের স্বপ্ন ছিল আরেকটা মাস্টার্স করার। ঢাবির শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের প্রফেশনাল মাস্টার্সের বিজ্ঞপ্তি দেখে তাই একসঙ্গেই আবেদন করি দুজন। মায়ের পরীক্ষাও বেশ ভালো হয়েছে। সপ্তাহ খানেকের ভেতর রেজাল্ট দেবে। আশা করছি দুজন একসাথেই আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারব।’
মা ও ছেলের এমন সাহসী কাজকে শুভকামনা জানাচ্ছেন অনেকেই । যেখানে সন্তানের কথা ভেবে দেশের অসংখ্য মায়েদের প্রতিনিয়ত নিজের ক্যারিয়ারের স্বপ্ন বিসর্জন দিতে হচ্ছে, সেখানে সন্তান আর মায়ের একসঙ্গে স্বপ্ন পূরণের এই পথচলা দেখে অণুপ্রেরিত হচ্ছেন আরো অনেকেই।