‘স্যার’ না ডাকায় শিক্ষার্থীর কাজ না করে ফিরিয়ে দিলেন ঢাবি কর্মকর্তা!
- লিটন ইসলাম, ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৩, ০৬:২৯ PM , আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৩, ০৭:২৯ PM

‘স্যার’ না ডেকে ‘কাকা’ সম্বোধন করায় খারাপ আচরণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর কাজ না করে ফিরিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সেকশন অফিসার (শিক্ষা-২ ) বোরহান উদ্দিনের বিরুদ্ধে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাবির প্রশাসনিক ভবনের ২০৮ নাম্বার কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মুহাম্মদ ওয়ালিউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ও মাস্টারদা’ সূর্য সেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা যায়, নামের বানান ঠিক করতে সকাল সাড়ে নয়টায় প্রশাসনিক ভবনের সেকশন অফিসার (শিক্ষা-২) বোরহান উদ্দিনের নিকট যান ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ওয়ালিউল্লাহ। কিন্তু নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে সকাল সাড়ে দশটায় অফিসে আসেন বোরহানউদ্দিন। ওয়ালিউল্লাহ সেকশন অফিসার বোরহান উদ্দিনকে তার সকল কাগজপত্র জমা দেন। এ সময় বোরহান উদ্দিন এর সাথে আরো কাগজপত্র যোগ করে জমা দিতে বলেন। ওয়ালিউল্লাহ হল থেকে সব কাগজপত্র ঠিক করে আবারও বোরহান উদ্দিনের নিকট জমা দেন। এসময় ওয়ালিউল্লাহ বোরহান উদ্দিনের বয়স ষাটের কাছাকাছি হওয়ায় তাকে ভাইয়ের বদলে ’কাকা’ সম্বোধন করেন। এতেই রেগে যান বোরহান উদ্দিন। তাকে কাকা কেন ডাকা হয় তার জন্য ওয়ালিউল্লাহকে নানা ধরনের অপমানজনক কথা বলতে থাকেন। স্যার না বলে কাকা কেন ডাকা হয় তা জানতে চান। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে বাকবিতন্ডা শুরু হয়। এক পর্যায়ে বোরহান উদ্দিন ওয়ালিউল্লাহর কাজ করে দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে তাকে ফিরিয়ে দেন। ওয়ালিউল্লাহ বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানাতে চাইলে বোরহান উদ্দিন তাকে হুমকি-ধমকি দেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ওয়ালিউল্লাহ বাংলাদেশ মোমেন্টসকে বলেন, ‘আমি সকাল ৯ টা ২৫ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম সংশোধনের সকল প্রক্রিয়া মেনে, সমস্ত কাগজপত্র নিয়ে বোরহান উদ্দিনের ডেস্কে যাই। কিন্তু এসময় তাকে পাইনি। ফোন দিয়ে জানতে পারি তার আসতে আরো ২৫ মিনিট সময় লাগবে; যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ে অফিস শুরু হয় সকাল ৯ টায়। তারপর দীর্ঘক্ষন অপেক্ষা করার পরে তিনি সাড়ে ১০ টার দিকে অফিসে আসেন। তারপর আমি তাকে আমার কাগজপত্র দেখালে তিনি আমার ভর্তি সনদ যোগ করতে বলেন। হল থেকে ভর্তি সনদ নিয়ে ১১টা ৪৫ এ আবার তার কাছে যাই। গিয়ে তাকে ‘কাকা’ সম্বোধন করি একারণে যে তার বয়স হবে ৫৭/৫৮ হবে। তখনই তিনি আমার প্রতি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেন। তিনি বলেন, "তুমি আমাকে কাকা কেন বলতেছো? এটা কি কোনো অফিসিয়াল ভাষা? এখনো অফিসের ভাষা শিখোনি!"
আমি তাকে বললাম, তাহলে আপনাকে কি ডাকবো?
তিনি বলেন ," অফিসের ভাষা স্যার। স্যার ডাকবা।"
আমি বললাম, আপনাকে স্যার কেন ডাকবো? আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। আপনি কি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক? তাহলে আপনাকে স্যার সম্বোধন করতাম।
তিনি বলেন, ‘আমরা স্যার না হলেও তো আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার।’ তার পাশের ডেস্কের একজন সেকশন অফিসার আমার উপর আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে কথা বলতে থাকে। তিনিও বলেন, ‘স্যার না ডাকতে পারলে সরাসরি তার নাম ধরে ডাকবা। ভাই/কাকা এগুলো ডাকতে পারবা না।’
আমি এর প্রতিবাদ করি। একপর্যায়ে রুমের সবাই বিষয়টি শুনতেছিল। পরে আমি বলেছি, আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে এর বিচার দিব। তখন বোরহান উদ্দিন বলেন, "দেও বিচার! দেখি কি করতে পারো।" পরে আমি বললাম, আমার কাগজ দেখেন। সে কাগজ দেখলো। কিন্তু বললো, নাম সংশোধন করতে হলে এতে আরও অনেক কাগজ যুক্ত করতে হবে। অথচ পূর্বে তিনি যেসব কাগজ নিয়ে যেতে বলেছেন তার সবই নিয়েছি। একথা বলার পর তিনি বললেন, ‘আমি পারবো না। তুমি অন্য ডেস্কে যাও।’ তিনি কাজটা করে দেননি। পরে অন্য রুমে গিয়ে এক ভাইয়ের সহযোগিতায় কাগজগুলো জমা দেই
ওয়ালিউল্লাহ বলেন, আমার কাকা ডাকা যদি অপরাধ হয়ে থাকে তাহলে উনি আমাকে তুমি সম্বোধন করেও অপরাধ করেছেন। এ ঘটনায় বিচার চেয়ে ওয়ালিউল্লাহ আগামী রবিবার উপাচার্যের কাছে একটি অভিযোগ পত্র জমা দিবেন বলে জানান। তিনি বলেন, ‘এখানে বোরহান সাহেব আমাকে স্পষ্টত হয়রানি করেছেন। তিনি তার দায়িত্ব পালন করেননি। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্যই তাদেরকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এভাবে আর কত হয়রানি করা হবে শিক্ষার্থীদের? আমি এর বিচার চেয়ে উপাচার্যের কাছে আগামী রবিবার একটি অভিযোগপত্র জমা দিবো।’
তবে অভিযোগের বিষয়ে জানতে সেকশন অফিসার বোরহান উদ্দিনকে একাধিকবার তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার বাংলাদেশ মোমেন্টসকে বলেন, ‘এর আগেও ওই অফিসারের (বোরহান উদ্দিন) নামে আমার কাছে অভিযোগ এসেছিলো। একজন শিক্ষার্থীর সাথে এরকম আচরণ কোনভাবেই কাম্য নয়। আমি বিষয়টি দেখবো।’
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বাংলাদেশ মোমেন্টসকে বলেন, ‘এটা কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না। কার এতো বড় সাহস? শিক্ষার্থীরা যাই করুক না কেন যারা সার্ভিস দিবে তাদের তরফ থেকে আরও বেশি দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা উভয় পক্ষের ভালো আচরণ কাম্য। এটাই আমাদের মূল্যবোধ।’