আশ্বাসেই আটকে আছে ববি হলের পুকুর সংস্কারে কাজ
- ববি প্রতিনিধিঃ
- প্রকাশ: ২২ জুলাই ২০২৩, ০৮:২৩ PM , আপডেট: ২২ জুলাই ২০২৩, ০৮:২৩ PM

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) হলে নিয়মিত পানি থাকেনা বলে জানান শিক্ষার্থীরা।ফলে,প্রায় দুর্ভোগে পোহাতে হয় আবাসিক শিক্ষার্থীদের।বঙ্গবন্ধু হলের উত্তর পাশে শেরে বাংলা হল সংলগ্ন পুকুর সংস্কারের দাবি ওঠান শিক্ষার্থীরা অনেক আগে থেকেই।বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে কয়েকবার পুকুরটির সংস্কারের কথা বলা হলেও তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি। সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম ইমামুল হকের সময়ও পুকুর সংস্কারের কথা বলা হয়।
২০১৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর একটি জাতীয় পত্রিকার কমনরুম পাতায় সাক্ষাৎকারে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়াম,জিমনেশিয়াম ও বোটানিক্যাল গার্ডেন তৈরি করার কথা জানিয়েছিলেন। শিক্ষার্থীরা জানান, ওসব কথা নাইয় বা বললাম। বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে অনেক বারই অনেক কথা বলা হয়েছে। পুকুরটির সংস্কারের কথাও বলা হয়েছে।আপাততো এটিই করা হোক।বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আরো দুটি পুকুর বা জলাশয় আছে।পুকুর দুটিও সংস্কার করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য আরো বহুগুণে বৃদ্ধি পেত,তেমনি পানির সমস্যারও সমাধান পেত। কিন্তু একযুগ পরে এসেও কেউ কথা রাখেনি।
২০২০-২১ অর্থবছরের ১০ মার্চে পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগে পুকুরটি সংস্কার চেয়ে চিঠি পাঠান ওই সময়ের বঙ্গবন্ধু হলের প্রাধ্যক্ষ রাহাত হুসাইন ফয়সাল।পরে ২০২৩ সালের ৫ জুন ও ১০ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর পুকুরটি সংস্কার চেয়ে আবেদন পাঠান বর্তমান বঙ্গবন্ধু হলের প্রাধ্যক্ষ মো. আরিফ হোসেন। কিন্তু আজও কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি পুকুর সংস্কারের বিষয় নিয়ে।
এ বিষয়ে কথা বলা হয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন অফিসের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মোঃ হুমায়ুন কবীরের সাথে। তিনি বলেন, আমার এসব মনে নেই।অনেক পুরাতন ফাইল তো,দেখতে হবে।তবে পুকুর সংস্কারের জন্য সরকার কোনো বরাদ্দ দেয়নি।পুকুর সংস্কারের বিষয়ে ভালো বলতে পারবে প্রকৌশলী দপ্তর।প্রকৌশলী দপ্তরের উপ-প্রধান প্রকৌশলী মুরশীদ আবেদীনের কাছে যায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সাংবাদিক।তিনি জানান, আমরা শুধু কাজ বাস্তবায়ন করি।পরিকল্পনা দপ্তর থেকে ফাইল পাস করে পাঠালে সেটা সম্পূর্ণ করি।
পুকুর সংস্কারের বিষয়ে শেরে বাংলা হলের প্রাধ্যক্ষ আবু জাফর মিয়া জানান, পুকুরটি শেরে বাংলা হলের।কয়েকবার আমি নিজেও মৌখিকভাবে অবগত করেছি যাতে দ্রুততম পুকুরটি সংস্কার হোক।দুই হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের পানির প্রয়োজনীয় সকল কাজ যাতে করতে পারে।দরকার হলে আমি আবারো কথা বলবো সংশ্লিষ্টদের সাথে।
বঙ্গবন্ধু হলের প্রাধ্যক্ষ মো. আরিফ হোসেন উপাচার্য বরাবর আবেদনে পুকুরটি সংস্কার করে দুই পাশে দুটি পাকা ঘাট স্থাপন করার কথাও জানান।এমনকি প্রকৌশলী দপ্তরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে নির্দেশনা প্রদানের জন্য উপাচার্য'কে সবিনয় অনুরোধ জানানো হয়।
বঙ্গবন্ধু হল ও শেরে বাংলা হলে প্রায় এক হাজার ১০০ জন আবাসিক ছাত্র অবস্থান করে।হলে গোসল করা, জামা-কাপড় ধোয়া, বাথরুম করা, খাবার পানি সংগ্রহ করার জন্য ০২ টি সাবমার্সিবল পাম্প রয়েছে। সাবমার্সিবল পাম্প দিয়ে পানির সংকট পূরণ করা সম্ভব হয়না এবং কিছুদিন পরপর সাবমার্সিবল পাম্পে সমস্যা দেখা দেয়। পানির সমস্যা সমাধানের জন্য বঙ্গবন্ধু হলের উত্তর পাশে শেরে বাংলা হল সংলগ্ন পুকুরটি সংস্কার করার কথা বলেন শিক্ষার্থীরা।তাতে একদিকে পানির সমস্যার সমাধান হবে এবং ক্যাম্পাস সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে।পুকুরটি সংস্কার করে দুই পাশে দুটি পাকা ঘাট স্থাপন করা অতীব জরুরী।
লোকপ্রশাসন বিভাগের আবাসিক শিক্ষার্থী মাইদুল ইসলাম বলেন, পানির অভাবে ওয়াশরুম ব্যবহার করা যায়না।যেটি একটি মানুষের খুব গুরুত্বপূর্ণ।যা প্রতিনিয়ত একটি মানুষের প্রয়োজন।সেটি করতে মাঝে মাঝে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় দৌড়াদৌড়ি করতে হয়।তবুও কোথাও পানি পাওয়া যায়না।তাই,পুকুরটি সংস্কার করা জরুরি।
বঙ্গবন্ধু হলের কয়েকজন আবাসিক শিক্ষার্থীর সাথে এ বিষয়ে কথা হয়।তারা জানান, এসকল সমস্যা কর্তৃপক্ষের অবহেলা মাত্র।পুকুর সংস্কারের কথা বলে আজও করা হলোনা। কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছে থাকলে দ্রুত সমাধান করা যায়।আমরা কয়েকবার অফিসে গিয়ে মৌখিকভাবে পানির সমস্যা ও পুকুর সংস্কারের কথাও জানিয়েছি ।প্রায় দিনে পানির অভাব থাকার কারণে ওজু করা সম্ভব হয়ে ওঠেনা।নামাজিরাও ভোগান্তিতে থাকে।
পুকুর সংস্কার ও পানির সমস্যা নিয়ে কথা বলা হয় বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়ার সাথে।তিনি জানান, শিক্ষার্থীরাই আমাদের প্রাণ।শিক্ষার্থীদের কথা চিনতা করে পানির সমস্যা দূরীকরণে একটি সেন্ট্রাল পানির পাম্প বসানোর উদ্যোগ হাতে নেয়া হয়েছে।পুকুরটি সংস্কারের ব্যাপারেও আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিবো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলী বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য যাতে দুটি ঘাট নির্মাণ করে দেওয়া হয়।