আটক শিক্ষার্থীরা আদালতে সাজাপ্রাপ্ত হলে আমলে নেবে বুয়েট
- ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০২ আগস্ট ২০২৩, ০৫:১৯ PM , আপডেট: ০২ আগস্ট ২০২৩, ০৫:১৯ PM

সুনামগঞ্জের হাওর ঘুরতে যাওয়া বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪ শিক্ষার্থীসহ ৩৪ জনকে গ্রেফতারের ঘটনায় সারাদেশে চলছে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। পুলিশ বলছে তাদের মোবাইল ফোন ও ব্যাগ তল্লাশি করে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টির মাধ্যমে সংঘাতে জড়ানোর ধারণা পাওয়া গেছে।
তবে বুয়েট প্রশাসন এটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের বিষয় হিসেবে মনে করছে। আদালতে সাজাপ্রাপ্ত হলে তাদের বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ আমলে নিবে বলে জানান বুয়েটের বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক (ডিএসডব্লিউ) অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের কোন বিষয় প্রশাসন হস্তক্ষেপ করে না। তবে দেশের আইন অনুযায়ী তারা যদি কোন ব্যতয় ঘটায় এবং আদালতে সাজাপ্রাপ্ত হয় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়টি আমলে নেবে। আপাতত যেহেতু এটা অভিযোগ, প্রমাণিত কিছু নয়; সেহেতু এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোন চিন্তা করছে না।
এদিকে আটক শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের দাবি তাদের সন্তানরা কোন রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত নয়। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বুয়েট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, তাদের সন্তানরা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্রে লিপ্ত নয়। এরকম ষড়যন্ত্রমূলক প্রচেষ্টা কারা করছে এবং কোন উদ্দেশ্যে করছে সে বিষয়টি নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। তাদের সন্তানদের শিক্ষাজীবন ও ক্যারিয়ার হুমকির সম্মুখীন। তারা দ্রুত তাদের সন্তানদের মুক্তি চান।
অভিভাবকদের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের আটক শিক্ষার্থী আলী আম্মার মুয়াজের বড় ভাই আলী আহসান জুনায়েদ। তিনি বলেন, 'গত ২৯ জুলাই আমাদের স্বজনরা ক্যাম্পাসের বন্ধুদের সঙ্গে সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে যায়। ভ্রমণের একপর্যায়ে ৩০ জুলাই বিকেলে তাদের পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। রবিবার বিকেল থেকেই তাদের ফোনে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরবর্তী সময়ে রাতে ভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারি, ভ্রমণকারী সবাইকে তাহিরপুর থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ। তারা নাকি নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনার জন্য সেখানে গেছে। আমরা মনে করি এরকম হাস্যকর ও বানোয়াট অভিযোগ
সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও দুরভিসন্ধিমূলক।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত সোমবার সন্ধ্যায় বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের সঙ্গে দেখা হয় এবং তাকে পুরো বিষয়টি অবহিত করি। আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, ছাত্রকল্যাণ পরিচালক আমাদের জানান যে, তাদেরও পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে গতকাল বিকেল ৪টা বা ৫টার দিকে। সে সময় এরকম ষড়যন্ত্রমূলক প্রচেষ্টা কারা করছে এবং কোন উদ্দেশ্যে করছে এ বিষয়টি নিয়ে যে আমরা উদ্বিগ্ন এবং আমাদের সন্তানদের শিক্ষাজীবন ও ক্যারিয়ার হুমকির সম্মুখীন সেটা জানিয়েছি আমরা। এ ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অনুরোধও জানিয়েছি আমরা। তারা তাদের প্রসিডিওর অনুযায়ী চেষ্টা করবেন বলেছেন।’
এদিকে আটক শিক্ষার্থীদের বিষয়ে গণমাধ্যমে একটি বিজ্ঞপ্তিতে সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত সুপার (প্রশাসন) আবু সাঈদ বলেছেন, ঘটনাস্থল থেকে আটককৃত ব্যক্তিদের তল্লাশি করে তাদের কাছ থেকে ৩৩টি বিভিন্ন মডেলের মোবাইল ফোন, ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন কার্যক্রমসংক্রান্ত স্ক্রিনশটের কপি, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কল্যাণ তহবিলসংক্রান্ত প্রচারপত্র, সদস্য, সাথীদের পাঠযোগ্য কোরআন ও হাদিসের সিলেবাস, কর্মী ঘোষণা অনুষ্ঠানসংক্রান্ত স্ক্রিনশটের কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
তবে এসব মালামাল জব্দের বিষয়টি বানোয়াট দাবি করে আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, 'একটি বিষয় পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, জব্দকৃত মালামাল হিসেবে কতগুলো জিনিসপত্র তাদের কাছ থেকে উদ্ধারের যে প্রসঙ্গ অবতারণা করা হয়েছে এটি অত্যন্ত হাস্যকর এবং পরিষ্কারভাবে বানোয়াট বিষয়। আর টাঙ্গুয়ার হাওরে গিয়ে কেউ নাশকতার পরিকল্পনা করবে এমন অভিযোগও হাস্যকর।