বঙ্গমাতা সাহসিকতার সাথে যেকোনো সংকট মোকাবেলা করেছেন: ঢাবি ভিসি

ঢাবি
ঢাবি ভিসিসহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ  © সংগৃৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেছেন, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে যেকোনো সংকট মোকাবেলা করার দৃঢ় একটি শক্তি ছিলো। কিন্তু একইসঙ্গে তিনি অত্যন্ত নমনীয় ও অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন এবং এই ধরনের গুণের মানুষ যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিকে মোকাবেলা করতে পারেন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বিভিন্ন সময়ে নানাভাবে তিনি সেভাবেই তাকে তৈরি করেছেন।

মঙ্গলবার (৮ আগষ্ট) বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল মিলনায়তনে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের ৯৩ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভা, স্বর্ণপদক ও বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য এসব কথা বলেন।  

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলের আয়োজনে ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব ট্রাস্ট ফান্ডের ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. নিলুফার রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, কোষাধ্যক্ষ ও ট্রাস্ট ফান্ডের সভাপতি অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ। স্মারক বক্তব্য রাখেন ঢাবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন হলের আবাসিক শিক্ষক জ্যোতিষী চাকমা।

আরও পড়ুন:- আপনার নেত্রীর জন্মদিন ৬টি কেন? মির্জা ফখরুলকে ওবায়দুল কাদেরের প্রশ্ন

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশের সজ্ঞা আমরা জানি। স্মার্টনেসের অর্থ এই নয় যে ভালো জামা-কাপড় ও ইংরেজি বলতে পারা অথবা দেখতে সুন্দর-আসলে তা নয়। এর অর্থ হচ্ছে প্রতিকূল পরিবেশে যে মানুষেরা খুব দ্রুত সেবা প্রদান করতে সক্ষম; কাজ করতে সক্ষম হয় ওই মানুষগুলো হলো স্মার্ট। তারা ভীতসন্ত্রস্ত হয় না; অত্যন্ত ধীরস্থির থাকে। তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণে অটল থাকবে এবং যেকোনো মানবিক উদ্যোগে এগিয়ে আসবে। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব কিন্তু সেটিই করেছেন। তার কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাও সেটি করছেন। আজকে পদ্মাসেতু তার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। যেখানে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছিল; বহির্বিশ্বের নানা ধরনের হুমকি উপেক্ষা করে সাহসী পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে গিয়েছিলেন তারই এখন বাস্তব ফল হলো পদ্মা সেতু।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বঙ্গমাতা, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং এই সকল মহীয়সী নারী যারা সাধারণত নারীর ক্ষমতায়ন এবং একটি সমাজ ও দেশকে উন্নতির পথে এগিয়ে নেয়ার জন্য শক্তি যোগান; সেই মানুষরা যেন রোল মডেল হিসেবে তোমাদের সামনে একটি উদাহরণ হয় এবং তাহলে তোমরা যেকোনো পরিস্থিতিতে ও সংকটে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়ার যে শক্তি ও সাহস সেটি অর্জন করতে পারবে। যে মেয়েটি মেধার ভিত্তিতে আজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার সুযোগ পেয়েছে সেই মেয়েটিই যেন ছোট ছোট হতাশা অথবা প্রতিকূলতায় পর্যদূস্থ না হয়; সেজন্য সেই হতাশা ও প্রতিকূলতাকে জয় করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে উপাচার্য শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান।

স্মারক বক্তব্যে ঢাবির সাবেক উপাচার্য ও ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, ব্যক্তিগত জীবনে বেগম মুজিব ছিলেন একান্ত সূরুচিসম্পন্ন। নিজে শুধু সদা-সর্বদা পরিপাটি থাকতেন তাই না, তাঁর ঘর দুয়ার ছিল সুন্দর, সুসজ্জিত, ছিমছাম। ১০ ই জানুয়ারী বঙ্গবন্ধু ফিরে এলে রাষ্ট্রপতির পত্নী থেকে তিনি প্রধানমন্ত্রীর পত্নী হলেন। তবে তাঁর ফার্স্টলেডির মর্যাদা ও চাকচিক্যের প্রতি কোন আকর্ষণ ছিল না। তিনি অতি সাধারণ জীবনে অভ্যস্ত ছিলেন। যুদ্ধ বিদ্ধস্ত দেশ গড়ায়, নির্যাতিত নারীদের পূর্নবাসন, দুস্থঃদের সাহায্য করতে তিনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন।

তিনি আরও বলেন,  জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি সর্বদা স্বামীর পাশে থেকে দেশ ও জাতির সেবা করে যান। দেশ ও দেশবাসীর জন্য সমগ্র জীবন তিনি আত্মত্যাগ করেছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনককে নির্মমভাবে খুনিরা হত্যা করে। হত্যার পর বেগম মুজিবকেও হত্যা করে। ঘাতকের বুলেটের আঘাতে তাঁর শরীর ঝাঁজরা হয়ে যায়, তিনি লুটিয়ে পড়েন শোবারঘরের দরজার সামনে। ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম হত্যাকান্ড ঘটে। বঙ্গবন্ধুর আজীবনের সুখ-দুঃখের সঙ্গী মরণকালেও সঙ্গী হয়ে রইলেন।

আলোচনা সভা শেষে হলের ১ শিক্ষার্থীকে স্বর্ণপদক ও ৫ জনকে মেধাবৃত্তি প্রদান করা হয়। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৮ নভেম্বর বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলের তৎকালীন প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. গুলশান আরা লতিফা হলের বিভিন্ন তহবিলে সংরক্ষিত ১২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে প্রদান করেন। এর লভ্যাংশ দিয়ে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলের আবাসিক ও অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের মাঝে ১ টি স্বর্ণপদক ও ৫ জনকে পাঁচ হাজার টাকা করে বৃত্তি প্রদান করা হয়।