ঢাবি সাংবাদিক সমিতির বর্ষসেরা রিপোর্টার হলেন ৬ সাংবাদিক

ঢাবি
অনুষ্ঠানে অতিথিবৃন্দ  © সংগৃৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (ডুজা) বর্ষসেরা রিপোর্টার নির্বাচিত হয়েছেন ৬ বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার।

আজ বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে ডুজার বর্ষসেরা রিপোর্টারের পুরস্কার বিতরণ ও দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের হাতে এ সম্মাননা তুলে দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।

এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কর্মরত ৬ জন সাংবাদিককে বর্ষসেরা পুরষ্কার প্রদান করা হয়। বাংলা প্রিন্ট ক্যাটাগরিতে প্রথম আলোর আসিফ হাওলাদার ও দৈনিক কালবেলার মোতাহের হোসেন, ইংরেজি প্রিন্ট ক্যাটাগরিতে নিউ ন্যাশন পত্রিকার মনিরুজ্জামান ও ডেইলি অবজারভারের তৌসিফুল ইসলাম, অনলাইন ক্যাটাগরিতে ঢাকা পোস্টের আমজাদ হোসেন হৃদয় ও বিডি নিউজয়ের রাসেল সরকার এ পুরষ্কার লাভ করেন।

অনুষ্ঠানে 'সাংবাদিকতায় পেশাদারিত্বের সংকট: বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলফিকার আলী মানিক। তিনি বলেন, সাংবাদিকতা একটি বৈশ্বিক পেশা। অনেকে সাংবাদিকতা নিয়ে সমালোচনা বা প্রশংসা করেন; অনেকে বুঝে বা না বুঝেও বিভিন্ন কথা বলে থাকেন। দেশের আইন রয়েছে, প্রত্যেক পেশায়ও একটা আইন রয়েছে; কেউ কিন্তু এর বাইরে যেতে পারেন না৷  সাংবাদিকতা এমন এক পেশা, যেখানে সুনির্দিষ্ট আইন রয়েছে যার ফলে সাংবাদিকরাও তার বাইরে যেতে পারে না। সাংবাদিকতায় ব্রেইন খাটিয়ে কাজ করতে হয় আর ব্রেইনকে কিন্তু বন্দি করে রাখা যায় না। 

সাংবাদিকদের কাজ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাংবাদিকতার মূল কাজ হলো সমাজের অসংগতি তুলে ধরা। যারা সমাজে বিশৃঙ্খলা করে তারা সাংবাদিকতাকে পছন্দ করে না। যখন সাংবাদিকতা রাষ্ট্রপ্রধানদের বিরুদ্ধে চলে যায় তখন সে-ও কিন্তু সাংবাদিকতাকে হত্যা করতে উঠেপড়ে লাগে। অনেকে নেতিবাচক সাংবাদিকতা করেন, কিন্তু সেটাও মানুষ বা সমাজের নেতিবাচক কাজের জন্যই করা হয়। ধরেন কেউ সংকটে রয়েছে, নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, আমি যদি লেখি এ বিষয়ে তাহলে তারা ন্যায়বিচার বা ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে কিন্তু আমি না লিখলে সে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। আমি নেতিবাচক কথা না লিখলে অপরাধী বেঁচে যাবে। সাংবাদিকতায় একদিন আপনার পক্ষে যাবে একবার আপনার বিপক্ষে। সুতরাং সাংবাদিকতায় নেতিবাচক বা ইতিবাচক বলতে কোন কথা নেই।

 জুলফিকার আলী মানিক বলেন, ছোট বেলায় শুনতাম 'চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনি', এখন শুনি 'চোরেই শোনায় ধর্মের কাহিনি'; চোরের মায়ের বড় গলা' কিন্তু এখন শুনি চোরের নিজেরই বড় গলা'। আমাদের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোয় অনেক পেশাদারিত্বের সংকট রয়েছে। দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে আমাদের। ভালো রেজাল্ট পেতে হলে যেমন ভালো ছাত্র হতে হয় তেমনই ভালো সমাজ পেতে হলে ভালো মানুষ হতে হবে। ভালো মানুষ না হলে সুন্দর দেশ গঠন করা সম্ভব। আর ভালো মানুষ তৈরির কারখানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু এখান থেকে বের হয়েই তারা দূর্নীতি করে। সুতরাং বুঝা যাচ্ছে আমাদের শিক্ষায় ত্রুটি রয়েছে। আমাদের এটা পরিবর্তন করতে হবে। 

 প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, এখানে আমরা সাবেক কমিটিকে ধন্যবাদ জানাই তারা অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার সাথে সমিতিকে পরিচালনা করেছেন। সাংবাদিক সমিতি একটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান যারা মূল্যবোধ রক্ষায় কাজ করেছে। ক্যাম্পাসে যখন রাজনৈতিক টানপোড়েন চলে তখন সকল রাজনৈতিক দলকে এক ছাদের নিচে উপস্থিত করিয়ে ভাব বিনিময় করিয়ে থাকে এই সাংবাদিক সমিতি। 

উপাচার্য বলেন, সাংবাদিকরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয় আমাদের সামনে তুলে ধরেন তখন আমরা সে অনুযায়ী কাজ করে থাকি। সাংবাদিকদের সবসময় প্রহরীর ভূমিকা রাখতে হয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সবাই প্রহরীর ভূমিকা পালন করে আসছে। এসময় তিনি সাংবাদিকদের তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে  বিবেক ও জ্ঞানকে দিয়ে পরিচালিত হওয়া, নীতিবোধ, মূল্যবোধ দ্বারা 'সেল্ফ সেন্সরশিপ' গঠন করা এবং পেশাদারিত্বের জায়গায় মূল্যবোধ বজায় রেখে কাজ করার আহবান ব্যক্ত করেন। 

সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আল সাদী ভূঁইয়া বলেন, ১৯৮৫ সাল থেকে আমাদের সাংবাদিক সমিতি গুরুত্ব ও দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। সমিতির সদস্যরা নিজেদের ইচ্ছাকৃত কাজ করে না বরং আপনারা যা কাজ করেন সেটাই শুধু মানুষের সামনে তুলে ধরে। আপনারা যদি ইতিবাচক কাজ করেন তাহলে ডুজার সদস্যরা ইতিবাচক বা আপনারা নেতিবাচক কাজ করলে ডুজার সদস্যরা নেতিবাচক নিউজ করে থাকে। সুতরাং সমিতির সদস্যদের যদি ইতিবাচক হতে বলেন তাহলে প্রথম আপনাদের ইতিবাচক কাজ করতে করতে হবে। এসময় তিনি সমিতির সদস্যদের  মৌলিক অধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় কাজ করে যাওয়ার আহবান ব্যক্ত করেন।  

ডুজার নতুন সভাপতি আল সাদী ভূইয়ার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মুজাহিদ মাহির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ, ডুজার প্রধান নির্বাচন কমিশনার বোরহানুল হক সম্রাট, ডুজার সদ্য সাবেক সভাপতি মামুন তুষার, সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম রুবেল বক্তব্য প্রদান করেন। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।