ঢাবি কখনো অসাংবিধানিক সরকারকে গ্রহণ করে না: ঢাবি ভিসি
- ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০২৩, ০৪:০১ PM , আপডেট: ২৩ আগস্ট ২০২৩, ০৪:০১ PM

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেছেন, আমরা ২০১০ সালে এই দিনটিকে কালো দিবস হিসেবে পালন করবো এই বার্তা দিয়ে যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কখনো অগণতান্ত্রিক, অসাংবিধানিক সরকারকে গ্রহণ করে না। তারা যেনো মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কাজ করে যাচ্ছে। আজকেও আমাদের দৃঢ় প্রত্যয় হোক, কোন দল যেনো অগণতান্ত্রিক, অসাংবিধানিক অবস্থার সৃষ্টি না করতে পারে; দেশকে অস্থিতিশীল করতে না পারে। এজন্য সবাইকে কাজ করতে হবে।
বুধবার (২৩ আগস্ট) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে ২৩ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় 'কালো দিবস' উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি সদস্য এদিন নানাভাবে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এটি বড় পটভূমির একটি বড় নাটক ছিলো যা নিয়ে আমাদের লেখালেখি প্রয়োজন। ২০০৪-০৬ সাল পর্যন্ত অত্যন্ত খারাপ সময় পার হয়েছে যার ফলস্বরূপ ২০০৭ সালের এই সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু হয়। তখন প্রগতিশীল মানুষদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। আমরা তখন এতটাই নিরাপত্তাহীনতায় ছিলাম যে বিভিন্ন দায়িত্ব পালনকালে সাথে নিরাপত্তা রক্ষী রেখে পথ চলতে হতো।
উপাচার্য আরও বলেন, এ নিয়ে আমি একটি সংবাদপত্রকে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলাম যা একটি দলিল হিসেবে থাকতে পারে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে আরেকটি বড় পদক্ষেপ ছিলো ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট; একটি পটভূমি তৈরি করা হয়েছিল যেখানে বঙ্গবন্ধু কন্যাকে হত্যাচেষ্টা করা হয়েছিল। এসময় আমাদের অনেক বেশিই সতর্ক অবস্থানে থাকতে হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে, অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা আক্রান্ত হয়েছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীরাও আক্রমণের শিকার হয়েছিলেন, অনেকে কারাবরণও করেছিলেন।
উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, আমরা আজকের দিনটিকে কালো দিবস বলার কারণ হলো তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের উপর নির্যাতন করেছিলেন। এমনকি এই দিনটিই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দিন। সেদিন সেনা সদস্যরা যদি আমাদের উপর আক্রমণ না করতো তাহলে আমরা সহজে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে পারতাম না। একদিকে বাংলা ভাইয়ের উত্থান, ৬৩ জেলায় এক সাথে পাচ শতাধিক বোমা বিস্ফোরণ, হত্যা করা হচ্ছে আহসানুল্লাহ মাস্টারকে, দূতাবাস সদস্যদের উপর বোমা হামলা করা হচ্ছে, সাবেক অর্থমন্ত্রীকে হত্যা করা হচ্ছে; সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করে।
অধ্যাপক মাকসুদ কামাল আরও বলেন, আন্দোলন করলো শেখ হাসিনা, তাকে হত্যার জন্য গ্রেনেড হামলা করা হলো কিন্তু আবার তাকেই গ্রেফতার করা হলো। খালেদা জিয়াকে জনরোষের ফলে ৩ মাস পরে গ্রেফতার করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেনা ক্যাম্প করেছিলো সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। যেটা পাকিস্তানি বাহিনীও করতে পারেনি। এটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একটা বড় ভুল ছিলো। এটা শিক্ষক সমিতিরও বড় ভুল ছিলো। সাবেক সভাপতি আনোয়ার স্যারকে গ্রেফতার করতে চাইলে এর প্রতিবাদ জানিয়ে সমাবেশও করেনি। তবে আমাদের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠায় কাজ করে গেছেন এবং সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে পদত্যাগ করাতে বাধ্য করেছে।
শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে ও রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমারের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক ড. জিনাত হুদা প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের ২০-২৩ আগস্ট তৎকালীন সেনা সমর্থিত তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপর ওপর হামলা চালায়। এই ঘটনার স্মরণে পরের বছর ২০০৮ সাল থেকে প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয়ে এই দিনকে ‘কালো দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।