জবির রফিক ভবনে জোরে হাসলেই ঝরে চুন সুড়কি, দ্রুত সংস্কারের দাবি

জবি
  © টিবিএম ফটো

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ভাষা শহীদ রফিক ভবনের বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে মারাত্মক ফাটল।  কিন্তু এরমধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে চলছে পাঠদান। ভবনের ছাদ থেকে ঝরে চুন-সুড়কি, জোরে কিছু ফেললে কেঁপে উঠে মেঝে। পুরাতন ফ্যান, সিলিং, কাঁচ বিহীন জানালাসহ রয়েছে শিক্ষার্থীদের ওয়াশরুমের সংকট। প্রকৌশল দপ্তরের লাল ফিতার দৌরাত্ম্য বাড়িয়ে দিয়েছে শিক্ষক-শিক্ষাথীদের ভোগান্তি। দ্রুত‌ই সংস্কারের দাবি সকলের।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের  ব্রাহ্ম স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার প্রাচীন ইতিহাস আমরা কমবেশি সবাই জানি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অতীত ইতিহাসের সাথে সাথে এর ভবন গুলোয় রয়েছে প্রাচীনত্বের ছাপ। বিশ্ববিদ্যালয় হ‌ওয়ার ১৭ বছর পাড় করলেও এর ভবন গুলোর বয়স তার চেয়েও বেশি। 

এসব ভবন গুলোর মধ্যে রয়েছে ভাষা শহীদ রফিক ভবন অন্যতম।  বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হ‌ওয়ারো অনেক আগের ভবন এটি। তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের সময় থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে ভবনটি। কিন্তু বর্তমানে নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে বেহাল অবস্থায় আছে ভবনটি এরমধ্যেই চলছে পাঠদান।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভবনে উঠার সিঁড়ি গুলোর প্লাস্টার বিভিন্ন জায়গা থেকে উঠে গেছে। সিঁড়ির ভিম গুলোর ফাটল থেকে রড় বেড়িয়ে এসেছে। এতে বেড়িয়ে থাকা রড় গুলো মরিচা ধরে ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। ভবনের দ্বিতীয় তলায় শিক্ষক রুমের বিভিন্ন জায়গায় দেখা দিয়েছে ফাটল। এসব ফাটল থেকে ঝরতে থাকে সুড়কি।

ইতিহাস বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী সোয়েবুল ইসলাম নাঈম বলেন, দীর্ঘদিনের পুরাতন ভবন,যার বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরেছে। যেকোন সময় বড় দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তাছাড়া ক্লাসরুম ও ওয়াশরুমের অবস্থা পরিবেশবান্ধব নয়। যা শিক্ষার্থীদের জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং ব্যবহারের অনুপযোগী।

এছাড়া ক্লাস রুমের জানালা গুলোর অনেক কাঁচ ভাঙ্গা, কিছু জানালার খাচে নেই কোন কাঁচ। বৃষ্টি হলেই ভিতরে পানি এসে ভিজে যায় বসার বেঞ্জ-টেবিল। ক্লাস রুমের হোয়াইট বোড গুলো যেন ব্লাক হয়ে উঠেছে, বোডের ফ্রেম গুলো খুলে আছে, লিখতে গেলে কালি ধরে না ঠিক মতো। ভবনের চারতলায় চারটি হল রুম রয়েছে। রুমের উপরে বোড দিয়ে দেওয়া সিলিং গুলো পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে ঝুলে থাকায় সৌন্দর্য নষ্ট করছে ক্লাস রুমের।

এনিয়ে ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মুর্শিদা বিনতে রহমান বলেন, আমাদের দেশে একটা বড় দূর্ঘটনা না হ‌ওয়া পর্যন্ত কারো টনক নড়ে না। ঢাবির জগন্নাথ হলেও এমন ফাটল ছিলো তখন কেউ গুরুত্ব দেইনি কিন্তু বেশ প্রাণহানি ঘটেছে সে হল ট্রাজেডিতে। কর্তৃপক্ষ বিষয় গুলো জেনেও যদি কাজ না করে বিষয় গুলো দুঃখজনক।

তিনি আরো বলেন, এই ভবন থেকে শুরু করে আমাদের ক্লাস রুমের সংস্কার দরকার। রুমের ফ্যান গুলো পুরাতন হয়ে গেছে, সংখ্যায় কম। শিক্ষার্থীদের টয়লেট গুলোয় নেই এডজাস্ট ফ্যান, গন্ধ ছড়িয়ে যায় ক্লাস রুমে। এদিকে নতুন ক্যাম্পাসের কাজের দীর্ঘসূত্রতা অন্য দিকে এগুলো সংস্কারে নেই উদ্যোগ।

বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী রেদোয়ানুল হক বলেন, আমরা জানি অনেক কিছুর সংকট আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের। আমাদের ঝুঁকি নিয়ে তাদের গুরুত্ব দেওয়া উচিত। ভবনটি সংস্কারের জোড়ালো দাবি জানাচ্ছি।

এছাড়া বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাস জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের সু্যোগ সুবিধার কথা আমাদের ভাবতে হবে। চারতলার উপরের টিনশেড দেওয়া সিলিং গুলো নষ্ট, তারা গরমে ক্লাস করতে পারে না, বাথরুমের অবস্থাও ভালো না। বিষয় গুলো দ্রুত মেরামত দরকার।

তিনি আরো বলেন, প্রকৌশল দপ্তর চাইলে ভবনটির ফিটনেস নিয়ে কাজ করতে পারে। পরিপূর্ণ ইনভেস্টিগেশন করে ভবনের সংস্কার করলে ঝুঁকির মাত্রা কিছুটা হলেও কমবে।

ভবনটির এমন অবস্থা নিয়ে প্রধান প্রকৌশলী মোঃ হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারীকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, আমাদের কাছে এই ভবনটির কোন নথিপত্র নেই। কোথায়, কীভাবে নকশা করা হয়েছে তা আমরা জানি না। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে খোঁজ নিয়েও কিছু জানা যায়নি। 

তিনি আরো জানান, শুধু রফিক ভবনে নয় অনেক ভবনেই এমন ফাটল আছে। প্রশাসনিক ভবনের মেরামতের কাজটা শেষ করে আমরা এগুলোয় হাত দিবো।

বর্তমানে ভবনটির নিচ তালায় মেডিকেল সেন্টার সহ বেশ কিছু দপ্তরের অফিস রুম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় বাংলা ও ইতিহাস বিভাগের অফিস ও ক্লাস রুম। চতুর্থ তলায় চারটি হল রুম বিভিন্ন বিভাগ ব্যবহার করছে। ভবনটির ফিটনেস নিয়ে শঙ্কায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সকলের‌ দাবি বড় কোন দূর্ঘটনা ঘটার আগেই যেন সংস্কার করা হয়।


মন্তব্য