আধিপত্য বিস্তার দ্বন্দ্বে আসামি ববির শতাধিক শিক্ষার্থী 

ববি
  © ফাইল ছবি

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলায় হয়রানী মূলকভাবে এবং মিথ্যা অভিযোগে আসামী করা হচ্ছে অনেককে। এমনটাই দাবি উঠেছে  বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে। বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকরাও। এই পরিস্থিতির জন্য অনেকে দায়ী করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে। অপরাধ না করেও কেউ যেন অভিযুক্ত না হয় সে বিষয়ে ভবিষ্যতে লক্ষ্য রাখার কথা জানিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। 

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের আওতাধীন কোতোয়ালি ও বন্দর থানায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১ বছরে ৭ টি মামলায় আসামী হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির শতাধিক শিক্ষার্থী। এর মধ্যে অধিকাংশই ক্যাম্পাসে আধিপত্যের দ্বন্দ্বে হওয়া হামলার ঘটনার রাজনৈতিক মামলা। এসব মামলায় অভিযুক্ত কমপক্ষে ১০ জন আসামী এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, তারা কোনোভাবেই ওসব ঘটনায় যুক্ত ছিলেন না। কিন্ত নানা কারণে তারা প্রতিহিংসার শিকার। আর এভাবে মামলার আসামী হয়ে ভবিষ্যৎ নিয়ে উৎকন্ঠা প্রকাশ করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী গাজী মাশরুর বলেন, 'দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো বিষয় নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যকার মারামারির ঘটনাতে পক্ষগুলোর অনেক অনুসারীকে মামলার আসামী করা হয়। ঘটনার সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও শুধুমাত্র বিপক্ষ গ্রুপকে চাপে রাখতে এ ধরণের হীন কাজ করা হয়'। 


বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কদিন আগে হঠাৎ শুনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্য সংঘর্ষের ঘটনায় আমাকে আসামী করা হয়েছে। কিন্তু আমি কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নই এবং ঐ সময় আমি ঘটনাস্থলেও ছিলাম না।আমাকে যে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে সেটা সম্পর্কে আমার বিভাগের শিক্ষকরাও ওয়াকিবহাল। 

রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী শাকিল আহমেদ  বলেন, 'অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে পুলিশের দারস্থ হতে বাধ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এভাবে আইনের সাহায্য নেবার প্রচলনের সঙ্গে সঙ্গে শত্রু ঘায়েলের সংস্কৃতি হিসেবে মামলায় হয়রানী মূলক অভিযুক্ত করা হচ্ছে অনেককে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী ঠিকঠাক বিচার করতো তবে মামলার সংখ্যার সঙ্গে সঙ্গে মিথ্যা অভিযোগের পরিমাণও কমে যেতো'। 


বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ কেন্দ্রের সাবেক পরিচালক ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড.তারেক মাহমুদ আবীর বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট কোনো ঘটনায় মামলা হবার আগে কিংবা পুলিশ প্রশাসন আমাদের কোনো শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা রুজু করার পূর্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘটনাটি নিয়ে আলাপ করে নেয়া উচিত। এতে করে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হবার হার কমবে বলে মনে করছি'। 

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) ফজলুল করিম  বলেন, 'বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো হয় আমরা সেগুলো অন্যান্য মামলার তুলনায় একটু বেশি সচেতনভাবে দেখি। কেউ যেন শুধু শুধু হেনস্তার শিকার না হয় সে বিষয়ে দৃষ্টি রাখা হয়। ভবিষ্যতে মামলা রুজু এবং তদন্তের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আরো ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা যায় কিনা সেটি বিবেচনা করা হবে'।


মন্তব্য


সর্বশেষ সংবাদ