ছাত্রলীগের দুই নেতাকে নির্মমভাবে পেটালেন এডিসি হারুন

 ঢাবি
  © টিবিএম ফটো

ছাত্রলীগের দুই নেতাকে নির্মমভাবে পেটালেন এডিসি হারুন


ঢাবি প্রতিনিধি 


রাজধানীর শাহবাগ থানায় ছাত্রলীগের দুই কেন্দ্রীয় নেতাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের রমনা বিভাগের এডিসি হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে। 


গতকাল শনিবার দিবাগত রাতে এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম উত্তেজনা। এ ঘটনার বিচার চেয়ে সামাজিক মাধ্যমেও সংগঠনটির সাবেক ও বর্তমান নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। 


এ ঘটনায় আহতরা হলেন- ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফজলুল হক হলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন নাঈম এবং কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাবির শহীদুল্লাহ হলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ মুনিম। তাদেরকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।


ভূক্তভোগী ও তাদের সহপাঠীদের অভিযোগ, তাদেরকে থানায় নিয়ে বেদমভাবে পিটিয়েছে এডিসি হারুন। ছাত্রলীগের নেতা পরিচয় দেওয়ার পরেও হারুনের সঙ্গে ১০-১৫ জন পুলিশ সদস্য মিলে তাদেরকে পেটানো হয়। এর মধ্যে নাঈমের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার মুখমণ্ডল মারত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। দাঁতের উপরের মাড়ির বেশ কয়েকটি দাঁত পড়ে গেছে।


ছাত্রলীগ নেতারা জানান, পুলিশের ৩১ ব্যাচের ক্যাডার এডিসি হারুন শনিবার রাতে ৩৩ ব্যাচের আরেক নারী পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে বারডেম হাসপাতালে আড্ডা দিচ্ছিলেন। ওই সময় নারী কর্মকর্তার স্বামী কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ওই দুই নেতাকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে যান। নারী কর্মকর্তার স্বামীও একজন ক্যাডার কর্মকর্তা। তার সঙ্গে এডিসি হারুনের বাক-বিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে সেটি হাতাহাতিতে রূপ নেয়। এরই জেরে পুলিশ ডেকে এনে তাদেরকে থানায় নিয়ে নির্মম নির্যাতন করা হয়। এ ঘটনার জেরে রাতে শাহবাগ থানার সামনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ভিড় করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওয়ালী আসিফ ইনান থানায় গিয়ে মধ্যরাতে ঘটনা মীমাংসা করেন। তবে 
এ ঘটনায় কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ‘নিরব' ভূমিকারও সমালোচনা করছেন অনেকেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যস্ত আছেন জানিয়ে ফোন কেটে দেন এডিসি হারুন।

প্রসঙ্গত, এর আগেও বিভিন্ন সময়ে এডিসি হারুনের বিরুদ্ধে অতি উৎসাহী হয়ে শিক্ষার্থী, সাংবাদিক , আইনজীবী এমনকি পুলিশকেও পেটানোর অভিযোগ উঠেছিল। তিনি ছাত্রলীগের সাবেক এক সভাপতির ঘনিষ্ঠজন হিসেবে বিভিন্ন মহলে পরিচিত।


ক্ষোভে ফুঁসছেন ছাত্রলীগ নেতারা

এদিকে থানায় নিয়ে দুই কেন্দ্রীয় নেতাকে নির্মমভাবে পেটানোর ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছেন ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতারা। তারা এডিসি হারুনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকেও সরব হয়েছেন তারা।


ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি বেনজির হোসেন নিশি লিখেছেন, ‘ এ ঘটনার পরও কিভাবে বসে থাকা সম্ভব ? আমার ভাইয়ের বিচার আমি চাই যেকোনো মূল্যে। এর জন্য সাবেক, বর্তমান সবাই প্রয়োজনে এক হবো। তবুও এর পাল্টা জবাব দেওয়া চাই।’


সংগঠনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী লিখেছেন, ‘এর একটা বিহিত করতেই হবে। কথার আগে হাত-পা আর মুখে গালি চলে। বারংবার অপরাধ করেও পার পাচ্ছে। আর সে কবে ছাত্রলীগ করেছে, ছাত্রলীগের কোন মিটিং মিছিলে দেখি নাই।’


ঢাবির স্যার সলিমুল্লাহ হল ডাকসুর সাবেক জিএস ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জুলিয়াস সিজার তালুকদার লিখেছেন, ‘এডিসি হারুন কর্তৃক ছাত্রলীগের দুইজন কেন্দ্রীয় নেতাকে অমানবিক উপায়ে নির্যাতন করার পরও কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না৷ হারুনের সন্ত্রাস ও ছাত্রলীগের নীরবতা দুইটাকেই নিন্দা জানাই৷ যারা আঘাত পেয়েছেন তারা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাই৷ এর বিচার আমরা চাই। তবে দেখুন, এডিসি হারুন যখন অন্য ছাত্র সংগঠনের নেতাদের পেটাতো তখন ছাত্রলীগের নেতারা উল্লাস করতো। আজ উল্লাসের ফলে সে এতোই বেড়েছে! কখনোই অন্যায়কে সমর্থন করতে নেই সেটা যার উপরই হোক।'


ছাত্রলীগের সাবেক উপ-দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আবদুল্লাহ বিন মুন্সি লিখেছেন, ‘এডিসি হারুনের বিচার না হলে যেই শাহবাগে আমার ছাত্রলীগের দুই ছোট ভাইকে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হইছে। সেই শাহবাগ অবরোধ হোক!’


আহত নাঈমের ছবি শেয়ার করে ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ইয়াজ আল রিয়াদ লিখেছেন, ‘আমার ছাত্রলীগের ছোট ভাই। কেন এমন হলো, কি জন্য এমন হলো জানতে চাই। এটা কি মেনে নেওয়ার মতো ঘটনা!!’


আরেক কেন্দ্রীয় নেতা তানিম খান লিখেছেন, ‘যেখানে কেন্দ্রীয় নেতাদের নিরাপত্তা নাই, সেখানে তৃণমূলের কি হবে? এ লজ্জা কার!!!’


ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেত্রী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য রুশী চৌধুরী লিখেছেন, ‘আজ এটা কি হলো !! আহারে ছাত্রলীগ !!’


কেন্দ্রীয় নেতা সোলায়মান ইসলাম লিখেছেন, ‘পুলিশের পরকীয়ার জেরে রক্তাক্ত আমার ছাত্রলীগ।’


আহত নাঈমের ছবি শেয়ার করে ছাত্রলীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ তপু লিখেছেন, ‘গায়ে পরিহিত উর্দিটার অপব্যবহার করে একজন মানুষকে এভাবে প্রহার করা হবে, এমনটা সহ্য করা যায় না। তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাই। বন্ধু নাইম এবং ছোট ভাই মুনিমকে যে বা যারা সুপরিকল্পিত ভাবে আঘাত করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় আইন সম্পাদক তৌহিদ বনী লিখেছেন, ‘এতিমদের সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ!’

 

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়নের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা সাড়া দেননি।
 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বাংলাদেশ মোমেন্টসকে বলেন, ‘তারা দুজন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পদধারী। সেখানে (থানায়) কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সশরীরে উপস্থিত ছিলেন। তিনি ভালো বলতে পারবেন।’


এদিকে এ ঘটনায় বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে আজ রবিবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকালে গণমাধ্যমকে জানান ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি শুনেছি। অভিযোগ আমলে নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’


তবে এই তদন্ত হারুনকে বাঁচানোর একটি চেষ্টা বলে মনে করছেন অনেকেই। এ বিষয়ে সাবেক সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী ও বিবার্তার সম্পাদক বাণী ইয়াসমিন হাসি তার ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, ‘আজ পর্যন্ত কোন তদন্তই আলোর মুখ দেখেনি। এই বিভাগীয় তদন্ত মূলত তাকে বাঁচানোর চেষ্টা। গতরাত থেকে শুধু অবাক হয়ে দেখছি।’


মন্তব্য


সর্বশেষ সংবাদ