চবিতে ১৪ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা,ক্যাম্পাসে না থেকেও হলেন আসামি

চবি
  © টিবিএম ফটো

গত ৭ সেপ্টেম্বর রাতে শাটল ট্রেনে গাছের ডাল পড়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬ শিক্ষার্থী আহত হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পয়েন্টে হামলা চালায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। ঘটনার একদিন পর ৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নূর আহমদ ও নিরাপত্তা প্রধান শেখ মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক বাদি হয়ে হাটহাজারী থানায় দুটি মামলা দায়ের করেন।

সাতজন করে দুই মামলায় ১৪ জনের নাম উল্লেখ থাকলেও নাম প্রকাশ নিয়ে লুকোচুরি করা হয়।  ১৪ জনের নাম উল্লেখের পাশাপাশি আরো ৯০০ জনের বিরুদ্ধে বেনামি মামলা দেওয়া হয়। মামলার এজাহার অনুযায়ী উপাচার্যের বাসভবনে ভাঙচুরের মামলার আসামিরা হলেন- ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শাকিল হোসেন আইমুন, সংস্কৃত বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী দীপন বণিক দীপ্ত, শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের রিয়াদ হাসান রাব্বি, ইংরেজি বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নুর মোহাম্মদ মান্না, ইতিহাস বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সৌরভ ভূইয়া, পালি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলাম ও পদার্থবিদ্যা বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শফিকুল ইসলাম।

 
পরিবহন দফতরে ভাঙচুর মামলার আসামিরা হলেন- দর্শন বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন, পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. ইমরান নাজির ইমন, ফারসি ভাষা ও সাহিত্যের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আনিসুর রহমান, ইতিহাস বিভাগের ২০১৮-১৯ বিভাগের শিক্ষার্থী নাসির উদ্দিন মো. সিফাত উল্লাহ, সংস্কৃত বিভাগের ২০১৮-১৯ বিভাগের অনিক দাশ, বাংলা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী অনিরুদ্ধ বিশ্বাস এবং একই বিভাগ ও শিক্ষাবর্ষের আজিমুজ্জামান।

জানা গেছে, দুই মামলায় নাম উল্লেখিত ১৪ আসামির মধ্যে ৬ জন ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক সংগঠন সিক্সটি নাইন গ্রুপের, ৫ জন চুজ ফ্রেন্ড উইথ কেয়ার (সিএফসি) গ্রুপের, ১ জন বিজয় গ্রুপের এবং ২ জন সাধারণ ছাত্র।

ভাঙচুরের ঘটনায় না থেকেও মামলার আসামি করা হয়েছে সাজ্জাদ হোসেন নামে এক সাবেক শিক্ষার্থীকে। এমনকি গত দেড় বছর তিনি ক্যাম্পাসে যাননি। সাজ্জাদের বাড়ি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায়। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী। মামলার আসামি হয়ে হতবাক সাজ্জাদ নিজেই। অথচ পরিবহন দপ্তরে ভাঙচুরের মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে তাকে।
শনিবার রাতে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, '২০২২ সালে আমার মাস্টার্স শেষ হয়েছে। এরপরই গত দেড় বছর আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাইনি। এখন জানতে পারলাম আমি মামলার আসামি। অথচ ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার আমি বাড়িতে ছিলাম। সরকারি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছি বাড়ি থেকে। শুক্রবার আমার চাচা এক্সিডেন্ট করায় ওনার সাথে হাসপাতাল ছিলাম। আজ চাচাকে নিয়ে বাড়িতে আসছি।

তিনি আরও বলেন, গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা আমার মোবাইলের লোকেশন চেক করলেও জানতে পারবে আমি কোথায় ছিলাম। আমার এলাকায় জিজ্ঞেস করলে জানা যাবে আমি কোথায় ছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমি কখনও রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলাম না। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলেও ছিলাম না, বাড়ি থেকে আসা যাওয়া করতাম নিয়মিত।

এদিকে নামে বেনামে গায়েবি মামলা দেওয়ায় গতকাল মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন করে শিক্ষার্থীরা।
ঘটনার চার দিন পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে,মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নূর আহমদ বলেন, দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। 

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায় গত ৭ ই সেপ্টেম্বর শিক্ষার্থীরা আহত হওয়ার পর একজন মারা গেছে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়লে উপাচার্যের বাসভবন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবহৃত বাস ও বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা ও ভাংচুর করে তান্ডব চালায় একটি মহল। যাতে আনুমানিক ৩০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে


মন্তব্য


সর্বশেষ সংবাদ