সাত কলেজের সমস্যা সমাধানে কাজ করার‌ আশ্বাস ঢাবি ছাত্রলীগের 

ঢাবি
মতবিনিময় সভায় ঢাবি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা  © সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। তবে এখন পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত কোন সমাধান পাননি অধিভুক্ত কলেজগুলোর এসব শিক্ষার্থী। এবার সাত কলেজের সমস্যা সমাধানে তাদের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। 

আজ মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) মিলনায়তনে সরকারি সাত কলেজের সংকট নিরসনে শিক্ষার্থীদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় এই আশ্বাস দেয় শাখা ছাত্রলীগ। শিক্ষার্থীরা সাত কলেজের নানান সমস্যার কথা তুলে ধরলে এসব সমস্যার সমাধানে কাজ করার আশ্বাস দেন ঢাবি ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা। 

সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের কেন বারবার ক্লাস রুম ছেড়ে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে হচ্ছে? কারণ তাদের জন্য নিয়মতান্ত্রিক কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নি। ক্লাস রুটিন, সিলেবাস, মানোন্নয়ন, পরীক্ষা, সিজিপিএসহ সকল ক্ষেত্রে আমাদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে। মানোন্নয়নের জন্য আমাদের থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা ফি নেওয়া হয়। যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মাত্র ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা দিতে হয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও ১ হাজার টাকার বেশি দিতে হয় না। শুধু আমাদের বেলায় কেন এই বৈষম্য? আমরাও চাই আমরা পড়ার টেবিলে থাকতে। আমরাও চাইনা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে। 

ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী অনামিকা আক্তার বলেন, আমরা তো অটো প্রমোশন চাচ্ছি না। আমরা চাই তিন বিষয় পর্যন্ত মানোন্নয়নের সুযোগ দিয়ে পরবর্তী বর্ষে উঠার সুযোগ করে দেওয়া। আমরাও তো শিক্ষার্থী। আমরাও তো রাজপথে নেমে মানুষের ভোগান্তির কারণ হতে চাই না। 

সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থী রাসেল মাহমুদ বলেন, আমাদের সমস্যাগুলো দীর্ঘদিনের। ২০১৭ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করেছে তখন থেকেই সমস্যার শুরু। আসলে যে উদ্দেশ্যে সাত কলেজকে ঢাবির অধিভুক্ত করা হয়েছে সে উদ্দেশ্য সফল হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের সঠিক তদারকি করছেন না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত সকল সমস্যার ব্যাপারে আমাদের কলেজগুলোর প্রশাসনকে জবাবদিহি করা। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে সমস্যা সমাধান না করে একজন আরেকজনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তাহলে সমস্যার সমাধান কোথায়? 

সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের এসব সমস্যা নিয়ে ঢাকা 
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে দরকষাকষি করবেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতা। দাবি আদায়ের মিছিলে একাত্মতা পোষণ করায় ঢাবি ছাত্রলীগের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু আমাদেরকে তাদের পরিবারের অন্তর্ভুক্ত করেছে সেহেতু পরিবারের এক সদস্যের সাথে ভালো আচরণ আর অন্য সদস্যের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করা কোনভাবেই কাম্য নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ যেহেতু আমাদের দায়িত্ব নেয়ার আশ্বাস দিচ্ছেন, আমরা আশাবাদী যে অতি দ্রুত আমাদের সমস্যাগুলোর সমাধান হবে।

মতবিনিময় সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের পাশে কেউ না থাকলেও ছাত্রলীগ রয়েছে। ছাত্রলীগ তাদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের কথা বলে ,দাবি আদায় করে তারপর ঘরে ফিরবে। এসময় সৈকত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে অধিভুক্ত বিষয়ক সম্পাদক রাখার কথা জানান। তিনি বলেন, আমরা কথা দিচ্ছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে অধিভুক্ত বিষয়ক সম্পাদক সংযোজন করা হবে। অধিভুক্ত এই সেলের মাধ্যমে আমরা সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখব। এসময় তিনি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবি দাওয়াগুলো বাস্তবায়ন করা হবে বলে শিক্ষার্থীদের আস্বস্ত করেন।

সভাপতির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শুরু থেকে সাত কলেজের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে বৈষম্য মূলক আচরণ করছে; সৎ ভাইয়ের মতো আচরণ করছে। দেখা যায় যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে শিক্ষার্থীটি পড়ছে তার অনার্স চার বছরে শেষ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু সাত কলেজের শিক্ষার্থী তা শেষ করতে পারছে না। ঢাবি শিক্ষার্থী কোন কারণে পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলে সেটি কামব্যাক করার সুযোগ পাচ্ছে কিন্তু  তারা সেটি পাচ্ছে না। কখনো কখনো পরীক্ষার আগে তাদের (সাত কলেজ) সিলেবাস দেয়া হয় না, পরীক্ষার ফলাফল কখন প্রকাশ করা হবে তা জানানো হয় না।

শয়ন আরও বলেন,  সাত কলেজের পক্ষে আমরা যারা ছাত্র রাজনীতি করি তারা কখনো কথা বলি না। এটি আমাদের ব্যর্থতা এবং অন্য কোন ছাত্র সংগঠনও সেটি নিয়ে কথা বলে না। গত ছয় বছর ধরে একই বিষয়টি বারবার উত্থান হচ্ছে। অথচ আমরা যারা ছাত্র রাজনীতি করি তাদের প্রধান কাজ হচ্ছে ছাত্রদের পাশে দাঁড়ানো, তাদের কথা শোনা এবং এটির যুগোপযোগী সমাধান বের করা।


মন্তব্য


সর্বশেষ সংবাদ