অশ্লীলতা বন্ধে ঢাবির নিয়মিত অভিযান, ৪ মাসে ৩১৩ জনের মুচলেকা আদায়
- লিটন ইসলাম, ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৭:২৪ PM , আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:৫৯ AM

সূর্যের আলো নিভলেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল এলাকায় বেড়ে যেতো বহিরাগত কপোত-কপোতীদের আনাগোনা। এসব প্রেমিক যুগলের নানা ধরনের আপত্তিকর দৃশ্য প্রায়ই চোখে পড়ত। এতে অস্বস্তিতে পড়তেন কার্জন হল এলাকায় ঘুরতে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক থেকে শুরু করে যে কেউ। মাঝে মাঝে শিক্ষকরা যুগলদের এসব অশ্লীল কার্যক্রম বন্ধে বাধা দিলে তাদের সম্মানহানিও ঘটানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এসব অশ্লীলতা বন্ধে নিয়েছে নানা পদক্ষেপ; চালানো হচ্ছে নিয়মিত অভিযান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত জুন মাস থেকে কার্জন হল এলাকায় নিয়মিত অভিযান চালিয়ে আসছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল টিম। গত বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত এসব অভিযানে ৩১৩ জন কপোত-পোতীকে আপত্তিকর অবস্থায় আটক করে পরবর্তীতে যাতে কার্জন হল এলাকায় আর না আসে এই শর্তে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। তবে যাদের একবার মুচলেকা নেয়া হয়েছে তারা আর পরবর্তীতে কার্জন হল এলাকায় আসেন নি। প্রক্টর অফিস জানায়, আটক যুগলদের বেশিরভাগই স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী যারা কার্জন হল এলাকাকে নিরাপদ ভেবে অশ্লীল কার্যক্রম করার জন্য এখানে আসেন।
‘আগে এসব জায়গায় অনেক বহিরাগত কপোত-পোতীরা এসে অনেক আপত্তিকর অবস্থার সৃষ্টি করতেন। লাইটিং এর ব্যবস্থাও কম ছিলো। আমরা গত জুন মাস থেকে রাত সাতটা থেকে আটটার দিকে সপ্তাহে তিন চারদিন অভিযান পরিচালনা করছি। এতে করে এসব অশ্লীল কার্যক্রম এখন অনেকটাই কমে আসছে’- বলেন কার্জন হল এলাকার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ড. মো. হাসান ফারুক।
সরেজমিনে কার্জন হল এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বহিরাগত প্রবেশ বন্ধে মূল গেটের মাঝে একটি পকেট গেট বানানো হয়েছে। এতে করে যে কেউ গাড়ি কিংবা নির্বিঘ্নে সেখানে প্রবেশ করতে পারবেন না। এছাড়া, মূল গেটের পাশে টাঙ্গানো হয়েছে সতর্কতা মূলক নোটিশ বোর্ড। যেখানে লেখা আছে, ‘এলাকাটি সিসি টিভি ক্যামেরার আওতাধীন। কার্জন হল এলাকায় বহিরাগত ও সাধারণের চলাচল নিয়ন্ত্রিত ও অবস্থান সম্পূর্ণ নিষেধ; অ্যাকাডেমিক ভবনে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম ছাড়া অবস্থান করা নিষেধ; বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকার সম্বলিত যানবাহন ছাড়া অন্যান্য যানবাহনের প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত।’
ভিতরে প্রবেশ করেই চোখে পড়ে, যেসব জায়গায় যুগলরা বেশি আপত্তিকর অবস্থার সৃষ্টি করতেন সেসব জায়গায় নতুন নতুন লাইটিং এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাস্তার পাশে, ভবনের সামনে বিভিন্ন জায়গায় লাগানো হয়েছে সতর্কতা মূলক নোটিশ বোর্ড। যেখানে লেখা, ‘এলাকাটি সিসি টিভি ক্যামেরার আওতাধীন। অ্যাকাডেমিক ভবনে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম ছাড়া অবস্থান করা নিষেধ।’ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার ও অশ্লীলতা বন্ধে সিসি টিভি ক্যামেরা বৃদ্ধির কাজ অব্যাহত রয়েছে বলে জানান সহকারী প্রক্টর ড. হাসান ফারুক।
তিনি বলেন, ‘পুরো কার্জন এলাকায় এখন পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই সাথে সিসি ক্যামেরা বাড়ানোর কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আমাদের নিয়মিত অভিযানে যাদেরকে আটক করেছি তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে যাতে পরবর্তীতে আর এখানে না আসে। অনেকের অভিভাবককে ডেকে এনে এসব বিষয় জানানো হয়েছে। এতে করে যারা একবার মুচলেকা দিয়েছে তারা আর পরবর্তীতে কখনো আসেননি।’
কার্জন হল এলাকায় তিরিশের ওপরে বিভাগে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কার্যক্রম চলে। এর সাথেই রয়েছে বিজ্ঞান বিভাগের ছেলে শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল ও ড. ফজলুল হক মুসলিম হল। এ এলাকার পর্যাপ্ত আলোক সজ্জায় পৃষ্ঠপোষকতা করেন জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এ কে এম মাহবুব হাসান। তিনি বলেন, বহিরাগতরা যাতে না আসে এবং সামাজিক পরিবেশ উন্নয়নের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সেজন্য লাইটিং, সতর্ক বাণী, মূল গেইটে পকেট গেইট করে দিয়েছি। প্রক্টরিয়াল টিম নিয়মিত টহল দিচ্ছে। আগের থেকে পরিবেশ অনেক ভালো। তবে এটা বজায় রাখতে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা অনেক জরুরি।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একরকম উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ সমুন্নত রাখতে বহিরাগতদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নানা উদ্যোগ নিয়েছে। বিশেষ করে কার্জন হল এলাকায় আগে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘুরতে বেরিয়ে যে অস্বস্তিতে পড়তে হতো তা এখন অনেকটাই কমে এসেছে। এখন এই ধারা অব্যাহত থাকার দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
অভিযানের ধারা অব্যাহত থাকবে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদুর রহমান। তিনি বাংলাদেশ মোমেন্টসকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার জন্য যেকোনো কিছুই হোক এগুলোকে একেক করে আমরা সমাধান করার চেষ্টা করতেছি। আমরা এটা (অভিযান কার্যক্রম ) আজকে করলাম এরকম না; এর ধারা অব্যাহত থাকবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বাংলাদেশ মোমেন্টসকে বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন জায়গায় বসবে, আড্ডা দিবে, মতবিনিময় করবে- এগুলো আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের চরিত্রের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। কিন্তু কোন বহিরাগত এখানে এসে সামাজিক অপরাধ মূলক কাজকর্ম করবে বিশ্ববিদ্যালয় কোনভাবেই তা সমর্থন করে না। এসব বন্ধে আমরা বিভিন্ন জায়গায় সতর্কতা মূলক নোটিশ লাগিয়েছি। সেই সাথে লাইটিং বাড়ানো হয়েছে। এগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জরুরি। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় একটি পরিবার। এখানে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা থাকেন। সেখানে এ ধরনের কর্মকাণ্ড কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।