ঢাবি বিমুখ ছাত্রদল
- লিটন ইসলাম, ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০২৩, ০৮:৩৩ PM , আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২৩, ০৮:৩৩ PM

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র সংগঠনের কাজ শিক্ষার্থীদের অধিকার ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট হবে সংগঠনগুলোর কাছে এমনটাই প্রত্যাশা করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের যেকোন যৌক্তিক দাবি আদায়ে সামনের সারিতে থেকে ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতৃত্ব দেয়ার কথা থাকলেও তেমন ভুমিকায় দেখা যাচ্ছে না কোন সংগঠনকেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ ও বাম সংগঠনগুলো এক্ষেত্রে কিছুটা কাজ করলেও ছাত্রদলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের দাবি, শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ইস্যুতে তারা কখনোই ছাত্রদলকে পাশে পায় না। দলটির নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে ঢুকতে না পারা, আন্দোলন সংগ্রাম নিয়ে ব্যস্ত থাকাসহ নানান অযুহাতের কথা বললেও শিক্ষার্থীদের কথা ভিন্ন। তারা বলছেন, ছাত্রদলের নেতারা তাদের কাছে পৌঁছানোর কোন চেষ্টাই কখনো করেনি। শিক্ষার্থীদের কাজে আসতে বা তাদেরকে সরকার বিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে সম্পৃক্ত করতে দলটির নেতাদের ভুমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন অনেকেই।
জানা যায়, খালেদা জিয়ার মুক্তি, সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন সমূহের ঘোষিত বিভিন্ন কর্মসূচীতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতাকর্মীরা নিয়মিত ঢাকা ও ঢাকার বাইরে অংশ নিচ্ছেন। ফলে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষার্থীদের সাথে কোন ধরনের যোগাযোগ নেই তাদের। এ কারণে এক দফার আন্দোলনে অনেক শিক্ষার্থীর আগ্রহ থাকলেও বিভিন্ন ভয় ও পারিপার্শ্বিক কারণে সরাসরি যুক্ত হতে পারছে না তারা। নানাদিকে কর্মসূচী নিয়ে ব্যস্ত থাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়মুখী হতে পারছে না দলটির নেতাকর্মীরাও। অথচ দেশের বড় ছোট সকল গণতান্ত্রিক ছাত্র সংগঠনের রাজনীতি আবর্তিত হয় মধুর ক্যান্টিনকে ঘিরে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাবিতে মাস্টার্স পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, ছাত্রদল তো এখন পল্টন কেন্দ্রিক রাজনীতিতে ব্যস্ত। খালেদা জিয়ার মুক্তি আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনেই তাদের কাজ শেষ। অথচ এই সরকারের পতন চায় আমার মতো এমন অনেক শিক্ষার্থীই ক্যাম্পাসে আছে। কিন্তু তারা কার ওপর ভরসা করে আন্দোলনে যাবে? অনেকেই হয়তো ছাত্রদলের শীর্ষ নেতাদের কখনো দেখেই নি। ক্যাম্পাসে ঢুকতে না পারার অযুহাতে তারা ক্যাম্পাসে ঢোকার চেষ্টাও করেনা। অতীতের সকল আন্দোলনের প্রাণ ও উজ্জীবিত শক্তি হলো এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ছাত্রদলের কোন ভাবনা আছে বলে মনেই হয়না। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে তারা কীভাবে আন্দোলন সফল করবে, এটা তাদের ভাবা উচিত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের পরিকল্পনা কি জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি খোরশেদ আলম সোহেল বাংলাদেশ মোমেন্টসকে বলেন, ‘মানুষের ভোটাধিকার, ভাতের অধিকার, বাকস্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক পরিবেশ এবং রাষ্ট্রের মালিকানা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য দেশনায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ফ্যাসিস্ট হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে জনগণকে সাথে নিয়ে যে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেশ রক্ষার ও জাতির স্বার্থে একাত্মতা পোষণ করে সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করছে। ইনশাআল্লাহ কিছু দিনের মধ্যে আমরা ক্যাম্পাসে আসবো এবং জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে সকল প্রতিকূলতা ও অপশক্তিকে প্রতিহত করে আমরা আমাদের অধিকার তাদের অধিকার আদায় করবো।’
অচিরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের আন্দোলন দৃশ্যমান হবে বলে জানান কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিব। তিনি বাংলাদেশ মোমেন্টসকে বলেন, ‘বিগত ১ যুগেরও অধিক বাংলাদেশে বর্তমানে ফ্যাসিস্ট অবৈধ সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। এই ভয়ংকর ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল রাজপথে সর্বাত্মক ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতার কারণে ক্যাম্পাসে এক দফা দাবি আদায়ে সময়োপযোগী ভূমিকা পালন করতে পারছি না। কারণ বিগত ১ বছরে ছাত্রদলের প্রায় শতাধিক নেতা-কর্মী ছাত্রলীগের নৃশংস হামলার শিকার হয়েছে, ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা শারীরিক ও পড়াশোনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে। বর্তমানে আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পক্ষের সকল ছাত্র সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ করেছি। বর্তমানে আলাদা আলাদা প্লাটফর্মে এক দফার পক্ষে কর্মসূচি পালন করলেও অচিরেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এক দফা দাবি আদায়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন দৃশ্যমান হবে এবং আমরা অবশ্যই অবশ্যই সফল হব ইনশাআল্লাহ।’