ঢাবিতে আখতারের ওপর সৈকতের অনুসারীদের হামলা

ঢাবি
আহত আখতার ও তার এক অনুসারী  © সংগৃৃহীত

নতুন ছাত্রসংগঠন ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি’ আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দিয়ে রিকশাযোগে ফেরার পথে সংগঠনটির আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসুর) সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনসহ সংগঠনের অন্য নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। এতে আখতারসহ সংগঠনটির ১১ জন নেতা-কর্মী আহত হন।

আজ বুধবার (৪ অক্টোবর) দুপুর দেড়টার সময় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার পরমাণু শক্তি কেন্দ্রের সামনে এ ঘটনা ঘটে। আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ঘটনার একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীসূত্রে জানা যায়, আখতারের নেতৃত্বে নতুন ছাত্রসংগঠন ঘোষণা শেষে শহীদ মিনারের দিকে যাওয়ার সময় পরমাণু শক্তি কেন্দ্রের সামনে ঢাবির হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল ও জগন্নাথ হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বাইকে এসে তাদের ওপর অতর্কিত হামলা করেন। হামলাকারীরা সবাই ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারী। এতে করে আখতারের ঠোঁট, মুখ, মাথা জখম হওয়ায় ব্যাপক রক্তক্ষরণ হয়। হামলা শেষে বাইক নিয়ে পালিয়ে যান ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। 

জানা যায়, হামলার নেতৃত্বে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীম উদ্দিন হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রাশেদুজ্জামান রনি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারী। তবে বাকিদের নাম পরিচয় জানা যায়নি।

আখতার হোসেন ছাড়াও আরো আহত হয়েছেন, যুগ্ম-আহ্বায়ক লুৎফর রহমান, যুগ্ম-সদস্যসচিব নুসরাত তাবাসসুম, যুগ্ম-সদস্যসচিব আসাদুল্লাহ আল গালিব, ঢাবি কমিটির সদস্য নিশিতা জামান নিহা, যুগ্ম-আহ্বায়ক ফয়সাল হাসান, সদস্য আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, সদস্য সুমনা শারমিন, যুগ্ম-আহ্বায়ক নুসাইবা তাসনিম সাবা, যুগ্ম-সদস্যসচিব আব্দুল হান্নান মাসউদ ও সদস্য সাদিয়া ইয়াসমিন ঐতিহ্য।

ছাত্রলীগের এই হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির সদস্যসচিব মো. নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারী হিসেবে পরিচিত কিছু নেতা-কর্মী একযোগে হামলা চালায়। আখতার হোসেনসহ আহতদের গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়। আমরা এই বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং হামলার সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’ 

এ হামলার নেতৃত্বে থাকা ছাত্রলীগ নেতা রাশেদুজ্জামান রনি হামলার কথা অস্বীকার করেন। তিনি বাংলাদেশ মোমেন্টসকে বলেন, এটা মিথ্যা অভিযোগ। আমি টিএসসিতে যাইনি। মধুর ক্যান্টিন থেকে সোজা হলে চলে আসছি। যারা এই কথা বলছেন তারা এটা উদ্দ্যেশমূলকভাবে আমাকে দোষারোপ করছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত ঘটনা অস্বীকার করেন। তিনি বাংলাদেশ মোমেন্টসকে বলেন, ‘তারা নতুন ছাত্রসংগঠন তৈরি করেছে, তারা নুরদের দ্বারা বেইমানির শিকার হয়ে নতুন ছাত্রসংগঠন খুলেছে, তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো বিরোধ নেই। আখতার আমার সহযোগিতা চেয়েছে, সহযোগিতা করা হয়েছে। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা প্রতিদিন রুটিন ওয়ার্ক হিসেবে মধুর ক্যানটিনে অবস্থান নিয়েছিল, তাই তারা ডাকসু ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন দলের ঘোষণা দিয়েছে। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বিন্দুমাত্র কোনো বাধা দেয়নি, সে জায়গায় কোনো ধরনের হামলা করার প্রশ্নই ওঠে না। যারা এই অভিযোগ করছে তা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কোন তথ্য প্রমাণ ছাড়া ছাত্রলীগের নাম যাতে ব্যবহার করা না হয় এ অনুরোধ থাকলো। তা না হলে হয়তোবা আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে আমাদের।’ 

 উল্লেখ্য, আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার সময় ডাকসু ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে ‘শিক্ষা, শক্তি ও মুক্তি’ স্লোগান সামনে রেখে নতুন সংগঠনে আখতার হোসেনে আহ্বায়ক ও নাহিদ ইসলামকে সদস্য সচিব করে ২১ সদস্যের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন চিন্তক ও অ্যাকটিভিস্ট তুহিন খান।

এ সময় সংগঠনটির তিন মাস মেয়াদি ঢাবি শাখার আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ঢাবি কমিটির আহ্বায়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, সদস্যসচিব আবু বাকের মজুমদার। সংবাদ সম্মেলনে গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলো উল্লেখ করা হয়।

এগুলো হলো- শিক্ষা ব্যবস্থায় পুনর্গঠন : চিন্তা বিনির্মাণ, জাতীয় চৈতন্য নির্মাণ, জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠন, মানবসম্পদ উন্নয়ন, গবেষণাভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা গঠনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে প্রয়োজনীয় প্রস্তাবনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য সংগঠন কাজ করা; রাজনৈতিক ব্যক্তি, পরিসর ও সংস্কৃতি নির্মাণ : দেশের রাজনৈতিক পরিসর ও সংস্কৃতি অকার্যকর হয়ে পড়েছে, যার ফলস্বরূপ দেশে নেমে এসেছে রাজনৈতিক দুঃশাসন আর ক্ষমতার ব্যবহার। রাজনৈতিক পরিসর ও সংস্কৃতি নির্মাণের মাধ্যমে রাজনৈতিক ব্যক্তি ও নেতৃত্ব তৈরিতে কাজ করা; শিক্ষার্থী কল্যাণ : ছাত্রসংগঠন হিসেবে সর্বদা ছাত্রকল্যাণমুখী চিন্তা এবং কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। 

শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়, শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করা, আর্থিক, সামাজিক ও কাঠামোগত প্রতিবন্ধকতা দূর করতে কাজ করা; ছাত্র-নাগরিক রাজনীতি নির্মাণ : নাগরিক সমাজের সাথে ছাত্রসমাজের রাজনৈতিক সংযোগ স্থাপন করা। নাগরিক ও ছাত্রসমাজের স্বার্থ ও মুক্তচিন্তার অভিন্নতা ও পারস্পরিকতাকে সংরক্ষণ করা; রাষ্ট্র-রাজনৈতিক ব্যবস্থা পুনর্গঠন : সভ্যতাগত রাষ্ট্র বিনির্মাণ, সমন্বয়মুখী জাতীয়তাবাদের প্রসার ও জাতীয় সংহতি রক্ষা করা, রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী তৈরি করা, কমিউনিটিকেন্দ্রিক চিন্তা ও পরিকল্পনা গ্রহণ করা, জাতীয় প্রতিষ্ঠান ও ক্ষমতার গণতন্ত্রায়ণ নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র-রাজনৈতিক ব্যবস্থার পুনর্গঠনে ছাত্রসমাজের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সংগঠন কাজ করা।


মন্তব্য


সর্বশেষ সংবাদ