স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে ফায়ার সার্ভিস: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

ঢাবি
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরে “অগ্নি জরুরী প্রতিক্রিয়া ক্ষমতা শক্তিশালীকরণ প্রকল্প উদ্বোধন করছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী  © সংগৃহীত

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, ফায়ার সার্ভিস এখন আগের সেই দমকল বাহিনী নেই। এর সেবা আমরা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পেরেছি। এই প্রকল্পের প্রযুক্তিগত সুবিধা কাজে লাগিয়ে ফায়ার সার্ভিস সাধারণ মানুষের আরো আস্থা হয়ে উঠবে। দুর্যোগ দূর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ, বিপদগ্রস্ত মানুষকে সেবা প্রদান ও প্রত্যাশা অনুযায়ী দ্রুত সাড়া প্রদানের মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে ফায়ার সার্ভিস।

আজ বুধবার (১১ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরে “অগ্নি জরুরী প্রতিক্রিয়া ক্ষমতা শক্তিশালীকরণ প্রকল্প”র উদ্বোধন শেষে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ইমার্জেন্সি রেসপন্স কন্ট্রোল সেন্টারের অধীনে এই প্রকল্প পরিচালিত হবে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়াং সিক, কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কর্পোরেশন এজেন্সি (কোইকা) বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর কিম তাইয়াং, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা ও বহিরাগমন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সাইফুল ইসলাম ও একই মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোসাম্মাৎ শাহানারা খাতুন।

আসাদুজ্জামান খান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ফায়ার সার্ভিসের অতীত ও বর্তমান অবস্থার চিত্র তুলে ধরে বলেন, বর্তমান সরকারের দায়িত্ব নেয়ার সময় ২০০৯ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন দেশের প্রতিটি উপজেলায় কমপক্ষে একটি করে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন করার জন্য। সেটি পার হয়ে আজকে আমরা ৫০৩ টি স্টেশন করেছি এবং ৪৩ টি উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেকোনো সময় এগুলো উদ্বোধন ঘোষণা করবেন।

মন্ত্রী আরো বলেন, আমরা ফায়ার সার্ভিসের জনবল বৃদ্ধিতেও কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছি। ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠানের মোট জনবল ছিলো ৬ হাজারের সামান্য বেশি। বর্তমানে জনবল বৃদ্ধি পেয়ে ১৪ হাজার ৪৬৮ জন হয়েছে। ফায়ার স্টেশন নির্মাণের চলমান প্রকল্প শেষ; এই সংখ্যা দাঁড়াবে ১৬ হাজার। এছাড়া, প্রতিষ্ঠানের জনবল ৩০ হাজার করার জন্য আমরা অরগ্যানোগ্রাম করছি এবং সে অনুযায়ী আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এ্যাম্বুলেন্স সেবার সক্ষমতা আমরা বৃদ্ধি করছি। ২০০৯ সালে ৫০টি এ্যাম্বুলেন্স ছিলো; বর্তমানে আমরা এটিকে ১৯৫টি নিয়ে আসা হয়েছে এবং এটা আরো বৃদ্ধির জন্য আমরা কাজ করছি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সকল দুর্যোগে সর্বপ্রথম সাড়া প্রদান করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীগণ। আগুন থেকে শুরু করে ভূমিকম্প পর্যন্ত সবার আগে ফায়ার সার্ভিস। এখন পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও আমাদের ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সেবাদান‌ করছে; সেভাবেই আমরা ফায়ার সার্ভিসকে তৈরি করেছি। এই প্রতিষ্ঠানের এই প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষণ সুবিধা আধুনিক করার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফায়ার সার্ভিস একাডেমী নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুবিধা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আমি আশা করছি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে‌ অগ্নি,‌ দুর্যোগ ও দূর্ঘটনা মোকাবেলার সক্ষমতা সম্পন্ন একটি বিশ্বমানের সেবা‌ বাহিনীতে পরিণত হবে। এসময় মন্ত্রী ইআরসিসি ভবন নির্মাণের জন্য পার্ক ইয়াং সিক ও কোরিয়া সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ প্রকাশ করেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শাহানারা খাতুন বলেন, এই সরকারের আমলে ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। আপনারা জানেন যে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর- এসব এলাকায় আমাদের শিল্প কলকারখানা একটু বেশি হওয়ায় সেখানে দুর্ঘটনার প্রবণতাও একটু বেশি। এখানে দূর্ঘটনা কমাতে ও তড়িৎ গতিতে যাতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় সেটাকে উদ্দেশ্য করে এসব এলাকায় স্থাপিত ২৮ টি স্টেশনসহ যেসব কলকারখানা রয়েছে সেগুলোকে কোইকার ইআরসিসির আওয়তায় নিয়ে আসা হয়েছে এবং এই প্রকল্পের মাধ্যমে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে জিপিএস সুবিধা দেয়া হবে। যার ফলে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে দূর্ঘটনা জেনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হবে।

এই প্রকল্পের মাধ্যমে ফায়ার সার্ভিস নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে উল্লেখ করে শাহানারা খাতুন বলেন, ইআরসিসির মাধ্যমে আমরা নতুন যুগে প্রবেশ করলাম। এটি একটি প্রযুক্তি উন্নয়ন প্রকল্প। এখানকার যত সরঞ্জামাদি আছে সব কোইকা ইন্সটল করেছে এবং সরঞ্জামাদি গুলো কিভাবে সংরক্ষণ করা যায় সে বিষয়ে আমরা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। আমি আশা করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট বাংলাদেশের যে কথা বলেছেন তা বিনির্মাণে এই প্রকল্প সহায়ক হবে।

রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়াং সিক ও কোইকার বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর কিম তাইয়াং তাদের বক্তব্যে বাংলাদেশ সরকার ও কোরিয়ার মধ্যে চলা বিভিন্ন সহযোগিতামূলক সম্পর্ক তুলে ধরেন। এসময় তারা এই প্রকল্পের মাধ্যমে ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এজন্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তারা।

অনুষ্ঠানের শেষ সভাপতির বক্তব্যে বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন এই প্রকল্পের জন্য কোরিয়া সরকারের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে এর সফলতা কামনা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে‌ এই প্রকল্প সহায়ক হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।