জাবিতে ৪ ভবনের টেন্ডার আহ্বান

জাবি
  © সংগৃহীত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান হতে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুম সংকট নিরসন ও প্রশাসনিক দপ্তরগুলো একটি ভবনের আওতায় নিয়ে আসার উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। তার পরিপ্রেক্ষিতে তিনটি একাডেমিক ভবন ও একটি প্রশাসনিক ভবনের টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২৪ সেপ্টেম্বর অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে তৃতীয় ধাপের জীববিজ্ঞান অনুষদ, কলা ও মানবিকী অনুষদ, গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবন এবং ১০ তলা বিশিষ্ট নতুন প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। আগামী ২৩ অক্টোবর টেন্ডার ওপেন করা হবে। এসব ভবনের প্রাক্কলিত ব্যয় প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ধরা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সুত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ২১টি অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ১ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প’ নামের প্রকল্প নেওয়া হয়। মোট তিন ধাপের এ প্রকল্পের প্রথম ধাপে ছেলে ও মেয়েদের জন্য তিনটি করে ছয়টি আবাসিক হল নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। এরপর গত বছরের জুনে দ্বিতীয় ধাপের ১৪টি স্থাপনার নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হয়। পরে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের আন্দোলনে ১০ তলা বিশিষ্ট নতুন প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ কাজ স্থগিত করা হয়। যদিও পরবর্তীতে মন্ত্রণালয় থেকে প্রশাসনিক ভবনের নির্মাণ কাজ শুরুর জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ, বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইন্সটিটিউট এবং বিজনেস স্টাডিজ অনুষদসহ কয়েকটি বিভাগের শ্রেণিকক্ষ সংকট রয়েছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষাকার্যক্রম। শ্রেণিকক্ষ সংকট থাকায় এক বিভাগ অন্য বিভাগের শ্রেণিকক্ষ ধার করে শিক্ষা-কার্যক্রমও চালাচ্ছেন। ফলে সংকটে সব থেকে বেশী  দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন, ব্যাংক, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস, প্রক্টর অফিস, এস্টেট অফিস, শারীরিক শিক্ষা বিভাগের অফিস, প্রকৌশল অফিস ও নিরাপত্তা শাখাসহ প্রয়োজনীয় দপ্তরগুলো একেকটা একেক জায়গায় রয়েছে। এতে প্রশাসনিক কাজে বিভিন্ন ভবনে দৌড়াতে হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টদের। এছাড়া যে প্রশাসনিক ভবনটি রয়েছে, সেটিতে কর্মকর্তাদের বসার পর্যাপ্ত জায়গায় নেই। ফলে একই কক্ষে অনেক কর্মকর্তা গাদাগাদি করে একত্রে কাজ করছেন। এতে কাজের পরিবেশ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি গতিশীলতা কমছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, তিনটা একাডেমিক ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হলে ক্লাসরুম সংকট কমবে। এছাড়া প্রশাসনিক ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হলে সব প্রশাসনিক দপ্তর এক ভবনের আওতায় আসবে। ফলে কাজের গতিশীলতা বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন দপ্তরে দৌড়াদৌড়ির ভোগান্তি কমবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক ভবনের পাশাপাশি একটি পূর্ণাঙ্গ প্রশাসনিক ভবনের প্রয়োজনীয়তা আছে। কারণ এখন প্রশাসনিক দপ্তরগুলো একেকটি একেক জায়গায় থাকায় প্রশাসনিক কাজে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। এতে একদিকে যেমন ভোগান্তিতে পড়তে হয়, অন্যদিকে আর্থিক ক্ষতিও হয়।' তবে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ মনে করছেন, 'প্রশাসনিক ভবনের চেয়ে একাডেমিক ভবন নির্মাণে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।'

এদিকে প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আজিম উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, 'অফিসে কর্মকর্তাদের নির্দিষ্ট ডেস্ক নাই, বসার জায়গা নাই। সবাইকে একসঙ্গে গাদাগাদি করে বসে কাজ করতে হয়। আমাদের দাপ্তরিক কাজের জটিলতা দূর করতে নতুন প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে।'

কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ আব্দুর রহিম বলেন, 'নতুন প্রশাসনিক ভবন নির্মিত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজে গতিশীলতা আসবে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষর্থীসহ সুবিধাভোগী সকলেই এটার সুফল ভোগ করবেন।'

অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের উপ-প্রধান প্রকৌশলী আহসান হাবীব বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দপ্তরগুলো একেকটা একেক জায়গায় রয়েছে। এতে প্রশাসনিক সেবা পেতে শিক্ষার্থীদেরই ভোগান্তিতে পড়তে হয়। যখন সকল দপ্তর একই ভবনের আওতায় আসবে, তখন শিক্ষার্থীরাই উপকৃত হবে। পাশাপাশি প্রশাসনিক কাজে গতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে।'

সার্বিক বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে এর আগে এ বিষয়ে উপাচার্য সাংবাদিকদের বলেন, 'একাডেমিক ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হলে ক্লাসরুমের সংকট অনেকটা কমে যাবে। এছাড়া কাজের গতিশীলতা বৃদ্ধি এবং সমন্বয় করার জন্য সব প্রশাসনিক দপ্তর এক ভবনের আওতায় নিয়ে আসা উচিত। এজন্য নতুন প্রশাসনিক ভবন তৈরি করার বিকল্প নেই।’