স্মার্ট মেলার নামে স্মার্ট নয়ছয়ের অভিযোগ  

পাবিপ্রবি
  © টিবিএম ফটো

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে(পাবিপ্রবি) গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগিতায় রোববার ‘স্মার্ট কর্মসংস্থান মেলা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে এ মেলায় নানা অনিয়ম ও অসংঙ্গতি হয়েছে বলে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন। এ নিয়ে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

সকাল ১০টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সাম হলের ৩ তলায় সেমিনার এবং নিচ তলায় চাকুরি প্রার্থী শিক্ষার্থীদের জন্য মেলার আয়োজন করা হয়। মেলায় শিক্ষার্থীদের সিভি নেওয়া, তাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া, কিছু শিক্ষার্থীকে চাকুরি দেওয়ার কথা থাকলেও এমন কোন কিছুই দেখা যায়নি কথিত এ স্মার্ট মেলায়। সকালে চাকুরি দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সাম হলের নিচ তলায় ১২টি কোম্পানিকে স্টল বসাতে দেখা গিয়েছে। তবে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত স্টলগুলোতে কোম্পানিগুলোর কোন প্রতিনিধিকে দেখা যায়নি। এছাড়া কোম্পানি গুলোর খোঁজ নিতে গিয়ে, গুগলে সার্চ করে কিছু কোম্পানির নাম এবং ওয়েবসাইটেরও খুঁজে মেলে নি।

★ অস্তিত্বহীন কোম্পানির নামে স্টল 
★ আসেনি কোন চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান 
★ সংশ্লিষ্টদের দায়সারা অজুহাত 

বিকেল ৪টা পর্যন্ত মেলা চলার কথা থাকলেও দুপুর ৩টার দিকেই স্টলগুলো ভেঙ্গে ফেলতে দেখা গেছে। ফলে চাকুরির খোঁজে আসা শিক্ষার্থীরা ফিরে গিয়েছেন শূন্য হাতে। তবে স্টলগুলোতে কোম্পানিগুলোর কোন প্রতিনিধি না থাকলেও প্রত্যেকটি স্টলে সিভি দেওয়ার জন্য একটি বক্স ছিল। কিছু শিক্ষার্থীকে ঐ সিভি বক্সগুলোতে সিভি দিতে দেখা গেছে। তবে তারা কার কাছে সিভি দিয়েছেন সেটা তারা জানেননা। আয়োজকরা জানান কোম্পানির কোন প্রতিনিধি না আসলেও তারা সিভিগুলো সংগ্রহন করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে পৌঁছে দিবে। কিন্তু দুপুর ৩টার দিকে সিভির সবগুলো বক্সকে একত্রে খোলা অবস্থায় ফেলে  রাখতে দেখা গেছে এবং সেগুলোতে কোন কোম্পানির নাম লেখা ছিল না। ফলে কোন শিক্ষার্থী কোন কোম্পানিতে সিভি দিয়েছেন সেটা  খুঁজে বের করার উপায় ছিল না।

সিভিগুলো কীভাবে খুঁজবে এই বিষয়ে জানতে চাইলে আয়োজকদের কেউ এর সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী বলেন, সিভি নেওয়ার কথা কোম্পানির প্রতিনিধিদের কাছে, কিন্তু তারাই তো আসেনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী বলেন, সরকারি একটা প্রকল্প চলছে, আয়োজকদের আয়োজন করা দরকার তাই তারা এটা করছে। অনেকটা দায়সারা কাজ বলা যায়। শিক্ষার্থীদের বলা হয়, সিভি দিয়ে যাও, কোম্পানিগুলো তোমাদের সাথে যোগাযোগ করবে। 

চাকুরির খোঁজে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী গোলাম কিবরিয়া বলেন, এই মেলা নিয়ে আমার অনেক প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু স্টগুলোতে এসে আমি হতাশ হয়েছি। মেলায় গিয়ে দেখি স্টলগুলো ফাঁকা! কার কাছে যাবো, কার কাছে সিভি দেবো কিছুই খুঁজে পাইনি। এভাবে লোক দেখানো একটা প্রোগ্রামের কোন প্রয়োজন ছিল না বলে আমি মনে করি।

ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী তৌহিদুজ্জামান বলেন, দুপুরে সেমিনার শেষ করে সিভি দেওয়ার জন্য স্টলে আসি। কিন্তু স্টলগুলো দেখলাম ফাঁকা। কাজ করতে থাকা কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করলে তারা বলেন মেলা শেষ। সিভি জমা দিয়ে চলে যান। কিন্তু আমি কার কাছে সিভি জমা দিবো এমন কাউকে পাইনি। পরে  সিভি দেওয়ার বক্স দেখলাম। সিভি বক্সে রেখে চলে আসলাম। 

মেলা আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে সহযোগিতা করেছে আইসিটি সেল। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইসিটি সেলার পরিচালক ড. আব্দুর রহিম বলেন, আমরা প্রোগ্রাম আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে সহযোগিতা করেছি মাত্র। এর মূল দায়িত্ব ছিল গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের। সব কিছু দেখভাল তারাই করেছে। তাই প্রোগ্রামে কোন অনিয়ম হলে এটার দায়ভার সম্পূর্ণ তাদের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিভিন্ন জেলা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘স্মার্ট কর্মসংস্থান মেলা’ কর্মসংস্থান মেলার আয়োজক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ হলেও এটির দেখভাল করেন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল। এদিকে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল এই মেলাগুলো বিভিন্ন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলোকে দিয়ে করিয়ে থাকেন।

জানা যায়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেলার দায়িত্বে ছিলেন গ্রিন ইভেন্ট নামের একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট। এই কোম্পানি রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সহ আরো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই মেলার আয়োজনের দায়িত্বে ছিলেন। 

মেলার এই অনিয়মের বিষয়ে গ্রিন ইভেন্ট কোম্পানির চেয়ারম্যান মুনাফ অর্নবের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হরতাল-অবরোধের কারণে স্টল দেওয়া কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিরা আসতে পারেননি। এটার জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। তবে আমরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সিভি সংগ্রহ করেছি। এগুলো আমরা কোম্পানিগুলোর কাছে পৌঁছে দিবো। হরতাল-অবরোধের মধ্যে এই আয়োজন না করে পরে কেন করা হলো না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেন নি।  

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের সচিব রাশেদুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কর্মসংস্থান মেলাগুলোতে এই রকম ঘটনা যে ঘটে সেটা আমাদের অজানা ছিল। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিব। 


মন্তব্য