পাবিপ্রবির ওয়েবসাইট নিয়ে বিভ্রান্তি!

পাবিপ্রবি
  © লোগো

নামে প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হলেও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ছোঁয়ার বাহিরেই রয়েছে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়(পাবিপ্রবি)। বিশ্ববিদ্যালয়টির ওয়েবসাইট ঘুরে বুঝার উপায় নেই বিশ্ববিদ্যালয়টি বর্তমানে কোন অবস্থানে রয়েছে। নামকায়ান্তে কিছু জাতীয় দিবস উদযাপনের স্থিরচিত্রই ওয়েবসাইটির মূল আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। অথচ একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় শিক্ষা ও গবেষণার উৎকর্ষ সাধনের উদ্দেশ্যে। ওয়েবসাইট ঘুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা-গবেষণা সংক্রান্ত তথ্য মেলানো ভার। গবেষণার তথ্য স্বল্পতায় প্রতি বছরই দেশীয় ও আন্তর্জাতিক র‍্যাংকিংসহ সকল মাপকাঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির ঠায় মেলে তলানিতে। 

অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠার দেড় যুগ পাড় করে ফেলা বিশ্ববিদ্যালয়টির ওয়েবসাইট আধুনিকায়নের অভাবে তথ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সবাই। হালনাগাদ না থাকার কারণে দেশ-বিদেশের সেবাপ্রত্যাশীরা ভুল তথ্যে বিড়ম্বনায় পড়ছেন। অন্যদিকে, যেসব আন্তর্জাতিক সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাংকিং নিয়ে কাজ করছে, তাদের বিচারে এ বিশ্ববিদ্যালয় খুবই নাজুক অবস্থানে রয়েছে। প্রযুক্তিগত গাফিলতি, প্রশাসনিক কাজে দুর্বলতা এবং সদিচ্ছার অভাবে বিশ্ব র‍্যাংকিংয়ে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে বিশ্ববিদ্যালয়টি আসতে পারছে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

বিশ্ববিদ্যালয়টির ওয়েবসাইটের হোমপেজে (www.pust.ac.bd) প্রবেশ করে দেখা যায়, আমাদের গবেষণা(Our research) নামক লিংকে কোন প্রকার গবেষণার তথ্য নেই,একদমই ফাঁকা! বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন নিজস্ব জার্নালের তথ্যও পাওয়া যায় নি। বিভিন্ন অনুষদ ও বিভাগের লিংকে শিক্ষকদের নাম, মোবাইল ফোন নম্বর ও ই-মেইল ব্যতীত অন্য কোনো তথ্য দেওয়া নেই। কারো জীবনবৃত্তান্ত আছে, আবার কারোটা নেই। সিংহভাগ শিক্ষকদের গবেষণা সম্পর্কিত তথ্যের হালনাগাদ করা নেই। এর মধ্যে আবার যেসব তথ্য দেওয়া আছে, সেগুলোর মধ্যে অনেকাংশই ভুল। অনেকে পদোন্নতি পেয়ে থাকলেও তা নতুন করে সংযোজন করা হয়নি। বিদেশে উচ্চতর শিক্ষায় ছুটিতে থাকলেও সেসব শিক্ষকদের প্রোফাইলে সেটা হালনাগাদ করা হয় নি। কোন শিক্ষক  চাকরি ছেড়ে দিলেও ওয়েবসাইটে কর্মরত দেখাচ্ছে। এছাড়াও আবাসিক হলের প্রভোস্টসহ একাধিক দপ্তরের তথ্যের গড়মিল পাওয়া গেছে। ওয়েবসাইটে বেশ কয়েকজন সহকারী  হল প্রভোস্টের তালিকা ও প্রোফাইল পাওয়া যায় নি। এদিকে কোন কর্মকর্তা কর্মরত এক দপ্তরে,ওয়েবসাইটে দেখানো হয়েছে অন্য দপ্তরে। মূলত সময়মতো তথ্যের হালনাগাদ না করায় এমনটা হয়েছে। কারো কারো প্রোফাইলে শিক্ষাগত যোগ্যতার জায়গায় ফোন নম্বর দেওয়া। একাডেমিক ক্যালেন্ডার, সিলেবাস ও অ্যালামনাই সম্পর্কে কোন তথ্য নেই। শিক্ষার্থীদের নামের তালিকা ও অধ্যয়নরত মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যার নির্দিষ্ট তথ্যও নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন নামে লিংক থাকলেও সেখানে প্রবেশ করে কোন ফাইল বা তথ্য পাওয়া যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ড, একাডেমিক কাউন্সিল ও অর্থ কমিটির লিংকে বেশির ভাগ সদস্যদের প্রোফাইল হালনাগাদ করা হয়নি। বাস্তবে কমিটির সদস্য থাকলেও ওয়েবসাইটে অনেকের নাম পর্যন্ত নেই। এছাড়া একাডেমিক অর্ডিন্যান্স লিংকে কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। এদিকে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির লিংকে কিছু কমিটির নাম ও কর্মশালা ব্যতীত কোন কর্মপরিকল্পনা পাওয়া যায় নি। অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থাপনা কমিটির লিংক থাকলেও সেখানে অনলাইনে অভিযোগের কোন মাধ্যম পাওয়া যায় নি। ওয়েবসাইটে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য,উপ-উপাচার্য সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য থাকলেও কোষাধ্যক্ষ ও রেজিস্ট্রার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নেই। এছাড়াও একাডেমিক ও প্রশাসনিক দপ্তরের কর্মকর্তাদের তথ্যের হালনাগাদ করা নেই ওয়েবসাইটে। 

ওয়েবাসাইট নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান বলেন, "অত্যন্ত দুঃখজনক যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের ইনফরমেশন গুলো পুরাতন,  আপডেট করা হয় না সময় মত। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক বিদেশে আছেন, অনেক শিক্ষক জব ছেড়ে চলে গেছেন। কিন্তু তারা এখনো ওয়েবসাইটে শিক্ষকের তালিকায় বহাল আছেন। অনেক শিক্ষকের পদোন্নতি হলেও সেই তথ্য আপডেট করা হয়নি। আমরা প্রয়োজনের সময় এসব তথ্য ব্যবহার করতে গিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়ি।"

সম্প্রতি বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) বার্ষিক সভায়, দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গবেষণা, উদ্ভাবন, শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতসহ র‌্যাংকিং-এর যাবতীয় সূচকের তথ্য নিয়মিত প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ বারবার তথ্য হালনাগাদের নির্দেশনা দিলেও বাস্তবে সেটার প্রতিফলন ঘটে নি। 


এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি(আইসিটি) সেলের পরিচালক ড. আব্দুর রহিম বলেন,
'কারো পদোন্নতি, প্রশাসনিক দায়িত্ব বা অন্যান্য হালনাগাদের বিষয় গুলো সম্পর্কে আমার দপ্তরে চিঠি সময়মত না আসলে তখন বিপত্তি বাঁধে। ওয়েবসাইটটিকে ঢেলে সুন্দর করে সাজানোর উদ্যোগ অনেক আগেই নেওয়া হয়েছে। বাজেট এর বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ মহাদয়কে জানানো হয়েছে। সেই বাজেট আসলে অতি দ্রুত হালনাগাদ করা হবে।"