গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী পিঠাপুলির ধুম রাবিতে

রাবি
  © সংগৃহীত

পড়ন্ত গোধুলী। শুভ্র কুয়াশার চাদর মুড়িয়ে নিচ্ছে চারিদিকের সবকিছু। সাথে বইছে মৃদু শীতল হাওয়া। খোলা আকাশের নিচে সারি সারি মাটির চুলা সাঁজানো হচ্ছে। তাতে দাউ দাউ করে জ্বলছে কাঠের টুকরো। চুলার উপর বসানো হরেকরকম ছোট-বড় হাঁড়ি। উৎসুক চাহনিতে সেসব হাড়িতে জ্বাল দিচ্ছেন বৃদ্ধ, জওয়ান কিংবা স্বল্প বসয়ী কিশোর বালকেরা।

চারপাশটায় সবুজ ঘাসের ওপর বিছানো রঙিন মাদুর। রয়েছে কিছু প্লাস্টিকের টুলও। তড়িঘড়ি করে চলছে পিঠা তৈরির প্রস্তুতি। নৈমিত্তিক ঠিক এভাবেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তন কেন্দ্রের (টিএসসিসি) সামনে জমে ওঠে পিঠাপুলির উৎসব। যা চলবে শীতের শেষ পর্যন্ত। 

ক্যাম্পাসের টিএসসিসিতে এক পিঠা দোকানির নাম মাছুম আলী। তার দোকানে প্রতিনিয়ত ১৩টি চুলায় ব্যস্ত সময় পার করছেন ১৮ থেকে ২০ জন কর্মচারী। তারমাধ্যে অধিকাংশ রয়েছেন নারীরা। দৈনিক ১৭ থেকে ১৮ হাজার টাকা আয় করেন তিনি। বিকেল চারটায় থেকে শুরু করে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা থাকে তার এ দোকান।

তার কাছে পাওয়া যায় পাঁচ রকমের পিঠা। এর মধ্যে রয়েছে ভাঁপা পিঠা, চিতই পিঠা, তেল পিঠা, পাঠি-সাঁপটা, পুলি পিঠা। চিতই পিঠা খাওয়ার জন্য রয়েছে সাত ধরনের ভর্তা। তারমধ্যে বেগুনের ভর্তা, শুটকি ভর্তা, সরিষা, ধনিয়া পাতা, কালোজিরা ও কাঁচা মরিচের ভর্তা অন্যতম। এসব প্লেট ও বাটিতে সাঁজিয়ে ক্রেতাদের নিকট পরিবেশন করেন তারা।

প্রতি পিস স্পেশাল ভাপা ২০ টাকা, নরমাল ভাপা ১০, চিতই পিঠা ১০টাকা, পুলি পিঠা ৮ টাকা, বিভিন্ন ধরনের তেলের পিঠা ১৫ টাকা ও পাঠি সাপটা ১৫ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। সঙ্গে সাত রকমের ভর্তার বিনিময়ে নিচ্ছেন আরও ১০ টাকা।

বন্ধুদের সাথে পিঠা খেতে আসছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক নাইমুর রহমান সারুল। তিনি বলেন, এখানকার পিঠাগুলো খুবই সুন্দর। শীতকালে আমাদের ক্যাম্পাসে এই উৎসবটা হয়। কিন্তু দিনের বিবর্তনে এই পিঠা উৎসবের ঐতিহ্য টা হারিয়ে যাচ্ছে। পিঠার যে গুণগত মান ছিলো এখন আর সেটা তারা ধরে রাখতে পারছে না। তারপর আনন্দমুখর পরিবেশ হয়ে থাকে এটা শিক্ষার্থীদের জন্য আনন্দদায়ক। 

কথা হয় একাউন্টিং বিভাগের শিক্ষার্থী বহ্নি প্রত্যাশার সাথে। তিনি বলেন, এখানকার পিঠাগুলো অনেক ভালো। এখানে ভাপা পিঠা, কুশলি পিঠা, এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের নতুন নতুন পিঠা খাওয়ার সুযোগ হচ্ছে। 

সাত বছর ধরে পিটার ব্যবসা করেন মাছুম আলীর সাথে। তার বাসা স্থানীয় বাসা বিনোদপুরে। কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন, কাজ করতর গিয়ে পরে গিয়ে আমার মেরুদণ্ড ভেঙে যায়। তারপর থেকে অন্য কাজ করতে না পেরে পিঠার ব্যবসা বেছে নেই। আগে বসতাস রোকেয়া হলের সামনে। প্রক্টর স্যার গতবার থেকে আমাকে ওখান থেকে তুলে টিএসসিসির সামনে জায়গা দিয়েছে। সাত থেকে আট বছর ধরে আমি এই ব্যবসা করি। 

তিনি আরও বলেন, আগে এক চুলা নিয়ে বসতাম, পরে হলের কাছে ছিলো আমার ২০ চুলা। এখন স্যার কিছুটা কমিয়ে দিয়ে এখন আছে তের চুলা। আমার বাসার মানুষসহ কর্মচারী আছে প্রায় ১৮ থেকে ২০ জন। প্রতিদিন গড়ে ১৭ থেকে ১৮ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। 

তিনি আরও জানান, আমার কাছে পাঁচ রকমের পিঠা পাওয়া যায়। সাত রকমের ভর্তা পাওয়া যায়। এছাড়া পাপর পাওয়া যায়।