জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ভোট গ্রহণ চলছে
- জবি প্রতিনিধি:
- প্রকাশ: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:৩৯ PM , আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:৩৯ PM

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি কার্যনির্বাহী পরিষদ নির্বাচন-২০২৪ এর ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। এবারের নির্বাচনে লড়বে আওয়ামীপন্থী শিক্ষক সংগঠনদের তিন দলের দুটি প্যানেল। তবে নির্বাচনে অংশ না নিলেও ভোটের মাঠে প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষক সংগঠন সাদাদল।
মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে ভোট গ্রহণের ব্যাবস্থা করা হয়েছে। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলবে। নির্বাচনকে ঘিরে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার সহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনাররা। এরই মাঝে শিক্ষকদের মাঝে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন জবিশিসের এবারের নির্বাচনে ভোটার হয়েছেন ৬৬৭ জন শিক্ষক৷ নির্বাচনে ৬টি পদে মোট ৩০ জন পদ প্রত্যাশী শিক্ষক লড়াই করছেন। এদের মধ্যে থেকে ১৫ জন নির্বাচিত হবেন। সদস্যপদে ১০ জন ও বাকি ৫ পদে একজন করে নির্বাচিত হবেন। নির্বাচনে সভাপতি, সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ নির্বাহী প্রতিটি পদের বিপরীতে দুই প্যানেল থেকে দুই জন পদপ্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এছাড়াও প্রতিটি সদস্য পদের বিপরীতে ২ জন করে মোট ২০ জন শিক্ষক নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন।
এদিকে শিক্ষক সংগঠনের এই নির্বাচনে নীলদল (ছিদ্দিকুর-মনিরুজ্জামান) এবং স্বাধীনতা শিক্ষক সমাজ ঐক্যবদ্ধভাবে সভাপতি পদে মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জাকির হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হাফিজুল ইসলাম পূর্ণাঙ্গ প্যানেল থেকে নির্বাচন করছেন। নীলদলের আরেকাংশে (নূরে আলম আব্দুল্লাহ-মমিন উদ্দীন) সভাপতি পদে পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আশরাফ-উল-আলম এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ফিন্যান্স বিভাগের ড. শেখ মাশরিক হাসান পুরো প্যানেলে নির্বাচন করছেন। ইতিমধ্যে দুই প্যানেল থেকে পাল্টাপাল্টি নির্বাচনী ইশতেহারও ঘোষণা করা হয়েছে।
আদর্শ এক হলেও ভিন্ন মতের কারণে ২০১৭ সালের জুলাই মাসে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের দু’গ্রুপ পাল্টাপাল্টি কমিটি গঠন করে। পরবর্তীতে আওয়ামীপন্থী আরেক দল জয় বাংলা শিক্ষক সমাজ এবং নীলদলের একাংশ থেকে ভেঙ্গে স্বাধীনতা শিক্ষক সমাজ নামে আরেকটি দল গঠন করা হয়। তবে শিক্ষকদের কোনো সংগঠনই তাদের সদস্যদের সুনির্দিষ্ট সংখ্যা জানায়নি৷
অন্যদিকে বিএনপি ও জামায়াতপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের সদস্য সংখ্যা দেড়শোরও অধিক। এবারের নির্বাচনেও পূর্বের ন্যায় কোনো পদেই লড়ছেন না সাদাদল। তবে সাদাদলের সদস্যদের ভোটেই নির্বাচনে নেতৃত্ব আসবে বলে জানান দিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র অধ্যাপকরা।
সাদা দলের দাবি, তাদের মধ্য থেকে শিক্ষকরা ভাগ হয়ে নীলদলের দুই অংশের মধ্যে মিলে গেছে। এদের ভোটেই নির্বাচনের নেতৃত্ব আসবে বলছেন সাবেক শিক্ষক সমিতির নেতারা। তবে সাদা দলের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে মানতে নারাজ নীলদলের উভয় অংশ। একাংশ বলছে তারা আশ্রায়ণে বিশ্বাসী নয়, অপর অংশের আশ্বাস এমন কোনো অভিযোগ আসলে তারা সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নির্বাচন নিয়ে নীলদল ও স্বাধীনতা শিক্ষক সমাজের ঐক্যবদ্ধ প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হাফিজুল ইসলাম বলেন, আমরা যে ইস্তেহার দিয়েছি, সেগুলো আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়, ছাত্রসমাজের কল্যাণ হবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় যদি আরও ভালোর দিকে যায়, তাহলে ছাত্র হিসেবেও সেটা সবার জন্যই গর্বের হবে। আমি চাই সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমাদের যে নির্বাচনী অঙ্গীকার সেটা আমরা বাস্তবায়ন করতে পারবো এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনের দিকে বিশ্বমানের উন্নীত করার প্রচেষ্টা আমাদের থাকবে ও সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করবো।
নীলদলের আরেকাংশের সভাপতি পদপ্রার্থী অধ্যাপক ড. মো. আশরাফ-উল-আলম বলেন, আমাদের থেকে যারা চলে গেছে তাদের কোনো প্রভাব আমাদের নির্বাচনে পড়বেনা। তারা নতুন একটি সংগঠনও খুলেছে। আমরা জয়ের প্রত্যাশা নিয়েই নির্বাচন করছি।
আওয়ামীপন্থী আরেক দল জয় বাংলা শিক্ষক সমাজের আহবায়ক অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাস বলেন, আমরা সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাতে না পারায় এবারও নির্বাচনে অংশ নিতে পারছি না। তবে যারা শিক্ষকদের কল্যাণে কাজ করবে আমরা তাদের সাথেই আছি। তিনি বর্তমান শিক্ষক সমিতির পক্ষেই রয়েছেন বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। সর্বশেষ ২০২০ সালের নির্বাচনে সভাপতি পদে দলের এই নেতা ভোট পেয়েছিলেন ১০টি।
জানতে চাইলে স্বাধীনতা শিক্ষক সমাজের সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, আমরা যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি একসাথে কাজ করার, সে লক্ষ্যেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্যানেল দেয়া হয়েছে।
এদিকে আওয়ামীপন্থী নতুন দল স্বাধীনতা শিক্ষক সমাজের সাধারণ সম্পাদক ড. কাজী মো. নাসির উদ্দীন বলেন, ‘আমরা শিক্ষকদের জন্য ভালো কিছু করতেই সমমনাদের সাথে নিয়ে একতাবদ্ধ হয়েছি। আমরা সবাই মিলে আলোচনা করে যৌথভাবে একসাথে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
নির্বাচন নিয়ে সাদাদলের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. রইছ উদ্দীন বলেন, ‘দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা, জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রহসনসহ নানা প্রেক্ষাপটে সাধারণ সভায় সর্বসম্মতিক্রমে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আর যে শিক্ষক সমিতি কোনোদিনও শিক্ষকদের কল্যাণে আসেনি সে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে আমরা অংশগ্রহণ করতে চাইনা।’
জবিশিস কার্যনির্বাহী পরিষদ নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. মো. ছগীর হোসেন খন্দকার বলেন, নির্বাচনের পরিস্থিতি এখনও পর্যন্ত স্বাভাবিক। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচন হবে। নির্বাচনে কেউ কোনো নিয়ম বহির্ভূত কর্মকাণ্ডে জড়িত হলে আমরা ব্যবস্থা নেবো।