বেরোবিতে ১৫ বছরেও কাটেনি শিক্ষক সংকট 

বেরোবি
  © লোগো

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) শিক্ষক সংকটের কারণে অতিরিক্ত ক্লাসের চাপে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষকদের গবেষণা কার্যক্রম। প্রতিষ্ঠার ১৫ বছরেও বিশ্ববিদ্যালয়টি এ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারেনি।

বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শিক্ষক সংকটে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি)। সেখানে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ১৯২ জন। অর্থাৎ প্রতি ৪৪ শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক। অথচ ইউজিসির শিক্ষক শিক্ষার্থীর মানদণ্ড অনুযায়ী প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি ২০ শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক থাকার কথা রয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককেই গড়ে ৮ থেকে ১০টি কোর্স নিতে হচ্ছে। অতিরিক্ত ক্লাস-পরীক্ষার চাপে গবেষণা কার্যক্রমে যথেষ্ট সময় দিতেন পারছেন না শিক্ষকরা। ফলে কার্যত ঝিমিয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির গবেষণা কার্যক্রম।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তর সূত্র জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২টি বিভাগে ১৯২ শিক্ষকের মধ্যে ৩২ শিক্ষক রয়েছেন শিক্ষা ছুটিতে। বাকি ১৬০ শিক্ষক দিয়ে চলছে পাঠদান। সে হিসেবে বিভাগপ্রতি শিক্ষক রয়েছেন মাত্র সাতজন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, এক বছর মেয়াদের দুই সেমিস্টারের স্নাতকোত্তরে পড়ানো হয় ১২ থেকে ১৪টি কোর্স। সে হিসেবে চার বছর মেয়াদের আট সেমিস্টারের স্নাতকে পড়ানো হচ্ছে ন্যূনতম ৪৮ থেকে ৫৬টি কোর্স। পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় এক শিক্ষককে নিতে হচ্ছে ৯ থেকে ১০টি কোর্স। কিছু বিভাগে তারও বেশি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও অন্যান্য দায়িত্বেও রয়েছে চরম জনবল সংকট। জনবলের অভাবে বন্ধ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস রেডিওর কার্যক্রম। এক ব্যক্তিকেই একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম সামলাতে হচ্ছে। এতে নানা বিড়ম্বনায় পড়ছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

এ বিষয়ে ছাত্র উপদেষ্টা সৈয়দ আনোয়ারুল আজিম বলেন, শিক্ষক সংকটের জন্য প্রধানত একাডেমিক ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের শিক্ষকদের যেমন ব্যক্তিগত গবেষণার জায়গা থাকে। তেমনি নিজেদের পড়াশোনারও সময় থাকে। সেটা সম্ভব হচ্ছে না। সেশন জটের বিষয়টি উপাচার্যের নেতৃত্বে এবং আমাদের সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় কমিয়ে এনেছি; কিন্তু গবেষণা ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা এখনো রয়েই গেছে।

তিনি আরও জানান, এটা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার যে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গত উপাচার্যের সময় শিক্ষকদের কোনো পদ চাওয়া হয়নি। ফলে বর্তমান উপাচার্যের ওপর এর প্রভাব পড়েছে। এটা একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। অতীতে যদি পদ চাওয়া হতো; তাহলে শিক্ষকদের সংকট কমে যেত।

শিক্ষক সমিতির সভাপতি শরিফুল ইসলাম বলেন, শিক্ষক সংকটের কারণে নবীন শিক্ষকরা ভালো মানের গবেষণা করতে পারছেন না। ডিগ্রি অর্জনের জন্য তারা বাইরে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না। ফলে তাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষাও পূর্ণ হচ্ছে না। প্রশাসন ইউজিসির সঙ্গে নতুন শিক্ষকের পদ পাওয়ার জন্য যোগাযোগ করছেন। পদ পেলে জুনিয়র শিক্ষকরা শিক্ষা এবং গবেষণায় সময় দিতে পারবেন।

বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরী বলেন, কোর্স সম্পূর্ণ করতে বন্ধের দিনেও (শুক্র-শনিবার) নিতে হচ্ছে একাধিক ক্লাস। ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ছুটির দিনেও পরিবার পরিজনকে সময় দিতে পারছেন না এবং গবেষণা কার্যক্রমেও যথেষ্ট সময় পাচ্ছেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২টি ডিপার্টমেন্টের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হলে শিক্ষক নিয়োগ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।