জাবি শিক্ষার্থীদের ভাবনায় দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন 

ক্যাম্পাস
  © ফাইল ফটো

জাতীয় নির্বাচনের বাকী মাত্র তিন দিন। দিন যত গড়াচ্ছে সর্বত্র নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের আগ্রহ ততই বাড়ছে। দেশের প্রধান বিরোধী দলসহ বেশ কয়েকটি বড় দল নির্বাচনে না এলেও স্বতন্ত্র ও ডামি প্রার্থীদের মধ্যে চলছে জোর লড়াই।  অংশগ্রহণকারী প্রার্থী ও তাদের নেতাকর্মীদের মন্তব্য, চিন্তা-ভাবনা, ইশতেহার, নির্বাচনকালীন সরকার, নির্বাচনী জোট, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রভৃতি বিষয়ে গণমাধ্যম এখন ব্যস্ত সময় পার করছে। একই সঙ্গে এসব নিয়ে কথা বলছেন ভোটাররাও। ভোটকেন্দ্রে ভোটাররা যাবেন কি না অথবা শেষ পর্যন্ত ভোটারদের উপস্থিতি কেমন হবে তা সময়ই বলে দেবে৷

তবে বিশিষ্টজনদের মতে, এবারের নির্বাচনে অন্যান্য ভোটারের পাশাপাশি তরুণ ভোটারের প্রভাব থাকবে গুরুত্বপূর্ণ। দেশে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। এর মধ্যে তরুণ ভোটারের সংখ্যা ৪ কোটি ৫০ লাখ। যাদের বয়স প্রায় ১৮-৩৫ বছরের মধ্যে। আসন্ন নির্বাচনে তরুণ সমাজের ভাবনা, পছন্দ-অপছন্দ, সমর্থন কিংবা বিরোধিতা ভোটের ফলাফল নির্ধারণ করে দিতে পারে।

কেমন হবে নতুন নির্বাচন? এতে তরুণদের অংশগ্রহণ কেমন হবে? এই নির্বাচনের পর সরকার গঠন করলেই বা কেমন হবে সে সরকার? এসব নিয়ে  জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) পড়ুয়া তরুণ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ভাবনা তুলে ধরা হয়েছে।

জাবি ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেল বলেন,আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন একটি উৎসবমুখর ও অংশগ্রহণমূলক করতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সকল স্তরের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের নির্বাচনী এলাকায় নৌকার পক্ষে কাজ করছে। আগামী ৭ ই জানুয়ারি সকলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু  নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণ আবারও দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় নিয়ে আসবে। 

জাবি ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম সৈকত বলেন, বাংলাদেশে নতুন তরুণ ভোটার প্রায় সাড়ে ৪ কোটি কেউ ই তাদের ভোট নিজেদের পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিতে পারেনি। গত ২০১৪ সালের নির্বাচন আগেই ১৫৪ জনকে নির্বাচিত করে সরকার জনগণের মতকে অবমূল্যায়ন করেছেন এবং তরুণদের বহুল প্রত্যাশিত একটি ভোট দেওয়া থেকে দুরে রেখেছে। ২০১৮ সালে সরকার দিনের ভোট রাতে আয়োজন করার মাধ্যমে গণতন্ত্রের নামে স্বৈরতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করে। এবারও জনগণের সাথে সরকার তামাশা করছে। তরুণরা আশায় ছিল হয়ত ১৮ সালে তারা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবে কিন্তু তাদের বঞ্চিত করা হয়। তরুণ ভোটাররা জানতে চায় কীভাবে মানুষ কবর থেকে এসে ভোট দিয়েছে, কীভাবে দেশে না থেকেও বিদেশ থেকে ভোট দিয়েছে, কীভাবে একজন নৌকার সমর্থক একাই শত শত ভোট দিয়েছে, কীভাবে সরকারি কর্মচারী (পুলিশসহ নানা বাহিনী) ডিউটিরত অবস্থায় আওয়ামী লীগের পক্ষ নিয়ে সরাসরি ভোট চায়? আওয়ামী লীগকে ভোট না দিলে নারীদের ধর্ষিতা হতে হয়, গণতন্ত্র নিয়ে কথা বললে ঘর বাড়ি ছাড়া করা হয়, ব্যবসা লুট করা হয়, জমি দখল করা হয়, ছাত্রলীগ না করলে চাকুরি থেকে বঞ্চিত করা হয়, ক্লাশ-পরীক্ষায় যেতে দেওয়া হয় না। এই ধরনের হাজারো অন্যায়ে সরকারের প্রত্যক্ষ মদদ থাকায় সরকারের উপর থেকে তরুদের আস্থা উঠে গেছে।তরুণদের কাছে এই অবৈধ সরকার এখন ভোট চোর সরকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম চেতনা ছিল গণতন্ত্র। কিন্তু সেই গণতন্ত্র এখন স্বৈরতন্ত্রে রূপ নিয়েছে তাই এই ভোট নিয়ে শুধু তরুণ নয় সব শ্রেণীর মানুষেরই মনে তেমন আগ্রহ তৈরি করতে পারেনি বরং এই সরকারের প্রতি তীব্র ক্ষোভ তৈরি করেছে।

এ বিষয়ে ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের আহ্বায়ক আলিফ মাহমুদ বলেন, আগামী ৭ তারিখের সাজানো নির্বাচন একটি প্রহসনের নির্বাচন ছাড়া কিছুই নয়। আওয়ামী লীগের কাছের কিছুলোক এবং তাঁবেদার কিছু সংগঠন যাদের কোনো জনসম্পৃক্ততা নেই তাদেরকে নিয়েই এই নির্বাচন হচ্ছে। এই নির্বাচন মূলত আসন ভাগাভাগির নির্বাচন। ঐতিহাসিকভাবেই দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি যা আমরা ১৯৭৩, ২০১৪, ২০১৮ এর নির্বাচনে দেখেছি। একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সাজানো যে নির্বাচন কমিশন তৈরি করা হয়েছে তাতে জনগণের সাড়া পড়ার পরিবর্তে বরং সরকারের চাটুকারিতাই স্পষ্ট হয়েছে। একদিকে নির্বাচনের নামে আসন ভাগবাটোয়ারার খেলা চলছে অন্যদিকে সরকার এই ডামি নির্বাচনের জন্য রাষ্ট্রের অর্থ নষ্ট করছে। জনগণের ভোট দেওয়ার অধিকার প্রতিষ্ঠিত না করতে পারলে দেশের সংকট বৃদ্ধি পাবে এবং ধীরে ধীরে তা সংঘাত থেকে রূপ নিতে পারে গৃহযুদ্ধের। ফলে সুযোগসন্ধানী বিদেশি অশুভ শক্তি ফায়দা হাসিলে তৎপর হয়ে উঠবে যা দেশকে ভয়ংকর পরিণতির দিকে ঠেলে দিবে।

জাবি ছাত্রফ্রন্টের সংগঠক সোহাগী সামিয়া বলেন, জনমত ও গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত উপেক্ষা করে ৭ জানুয়ারি ২০২৪ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে একতরফা ও প্রহসনের নির্বাচন। ইতিমধ্যে নির্বাচনী প্রচারণা চলছে পূর্ণদমে। প্রার্থীদের অনেকেই নির্বাচনী আচরণবিধি তোয়াক্কা না করে শো-ডাউনের নামে শক্তি প্রদর্শন করছেন। money, media.,muscle এর জোরে যেই নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি করছে তাতে করে গণতান্ত্রিক পরিবেশ তো থাকছেই না বরঞ্চ টাকা দিয়ে যুবকদের নির্বাচনে ভাড়া খাটিয়ে   তাদের দিকভ্রষ্ট করা হচ্ছে। এইভাবে একেকটা নির্বাচন আসে  হানাহানি - মারামারি, সংঘাত-সংঘর্ষের পাশাপাশি একটা বড় অংশ মানুষের চরিত্র নষ্ট করে দিয়ে যায়।রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে আরো বেশি নিম্নগামী করে তোলে। এছাড়াও এবার ৭ জানুয়ারিতে জনগণ দেখতে যাচ্ছে 'আমি' আর 'ডামি'র এক প্রহসনমূলক নির্বাচন,।যেখানে কিনা এবার আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ নিজেই অর্থাৎ আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থী। ইতিমধ্যে দেখা গেছে নানা ধরনের চাপে এবং কৌশলে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নকল বা ডামি প্রার্থী অথবা বিদ্রোহী, যাদের পরিচয় দাঁড়াবে স্বতন্ত্র প্রার্থী এদের দিয়েই নির্বাচনকে দেখানো হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক। তাই এখন পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে এই নির্বাচন হতে যাচ্ছে একটি সাজানো নাটক।ফলে জনসাধারণকে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ও আমাদের দল বাসদের পক্ষ থেকে এই নির্বাচন বর্জনের আহ্বান করা হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রায়হানুল ইসলাম বলেন, জাতীয়‌ নির্বাচন‌ প্রতিটি গণতান্ত্রিক‌ দেশের‌ মধ্যে‌ একটা‌ উৎসবমুখর‌ পরিবেশের‌ সৃষ্টি‌ করে‌ ।‌ এই‌ নির্বাচন‌ ভবিষ্যৎ জাতীয়‌ জীবন‌কে‌ অনেক‌ বেশি‌ প্রভাবিত‌ করে‌ ।‌ তবে আশ্চর্য জনক হলেও‌ সত্যি‌ এই‌ উৎসব‌ এখন‌ অনেক‌ বেশি‌ মলিন‌ হয়ে‌ আসছে‌ ।‌ এর‌ অন্যতম‌ কারণ‌ হচ্ছে‌ সুস্থ‌ গণতান্ত্রিক‌ চর্চার‌ অভাব‌ এবং‌ ব্যক্তির‌ নিজ‌ অধিকার‌ সম্পর্কে‌ সচেতন‌ না‌ থাকা‌ ।‌‌ নির্বাচনকালীন‌ শহর‌ এবং গ্রামের‌‌ বিভিন্ন‌ জায়গায়‌ ছোট‌ ছোট‌ জমায়েত‌ ,‌ চা‌ আড্ডা‌ ,‌ পছন্দের‌ প্রার্থী‌ নিয়ে‌ নিজেদের‌  মাঝের‌ বাকচারিতা‌ এখন‌ খুব‌ বেশি‌ দেখা‌ যায়‌ না‌। ‌ এছাড়া‌ লক্ষ্য‌ করা‌ যাচ্ছে‌ ‌দেশের‌ সব‌ রাজনৈতিক‌ দল‌ নির্বা‌চনে‌ অংশ‌গ্রহণ‌ করছে‌ না‌ যা‌ জনগণের‌ নির্বাচন‌ বিমুখতাকে‌ অনেক‌ বেশি‌ বাড়িয়ে‌ দিচ্ছে‌ ।‌ ‌এই‌ অবস্থায়‌ দায়িত্বপ্রাপ্ত‌ মহলের‌ উচিত‌ যথাযথ‌ গণতান্ত্রিক‌ চর্চার‌ পরিবেশ‌ সৃষ্টির‌ মাধ্যমে‌ সেই‌ উৎসবমুখর‌ পরিবেশকে‌ ফিরিয়ে‌ আনা। জনগনকে‌ সচেতন‌ করার‌ মাধ্যমে‌ জাতীয়‌ নির্বাচনে‌ তাদের‌ ভূমিকা‌‌ সম্পর্কে‌ বোঝানো‌‌ এবং তাদের‌  অংশগ্রহণ‌ নিশ্চিত‌ করা‌ ‌।‌