স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা বাড়াতে ঢাবিতে চালু হচ্ছে ডিজিটাল নথি
- লিটন ইসলাম, ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২৪, ০৬:৪৫ PM , আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৪, ০৭:৪০ PM

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন ও হলগুলোর অফিসিয়াল কার্যক্রমে দীর্ঘসূত্রতার অভিযোগ বেশ পুরোনো। এবার সেই দীর্ঘসূত্রতা বন্ধে, শিক্ষার্থীদের সেবার মান বৃদ্ধি ও প্রশাসনিক কাজে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ডিজিটাল নথি (ডি-নথি) ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আগামী মার্চ মাসে এর কার্যক্রম শুরু হবে।
প্রশাসনিক ভবন থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, ডিজিটাল নথি পদ্ধতির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল কোন কার্যক্রম হার্ড কপির জায়গায় অনলাইন কপির মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে। এর মাধ্যমে অফিসিয়াল কার্যক্রম খুব দ্রুত বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন কিংবা হলের কোন কর্মকর্তার ওপর অর্পিত কোন সেবা ঠিক সময়ে শিক্ষার্থীদের দিচ্ছে কিনা কিংবা কোন দীর্ঘসূত্রতার আশ্রয় নিচ্ছেন কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হবে। কে তার ফাইল কতদিন আটকে রেখেছে তা এর মাধ্যমে খুব সহজেই দেখিয়ে দিবে এই নথি। এমনকি কোন কর্মকর্তা কোন সময়ে তার ফাইলে স্বাক্ষর করেছেন সেটাও ডি-নথির তথ্যে দৃশ্যমান হবে। এতে করে যদি কোন কর্মকর্তা কাজে ফাঁকি দেন তা খুব সহজেই কর্তৃপক্ষ চিহ্নিত করতে পারবে।
শুধু তাই নয়, যে কাজ সম্পন্ন হতে আগে এক সপ্তাহ সময় লেগে যেতো তা ডি-নথি পদ্ধতির মাধ্যমে এক ঘন্টায় করা সম্ভব হবে বলে জানান বাংলাদেশ সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করা সংস্থা এটুআই-এর নথি টিমের প্রোগ্রাম সহকারী সজিবুর রহমান। তিনি বাংলাদেশ মোমেন্টসকে বলেন, “এই পদ্ধতির মাধ্যমে সবদিক দিয়েই লাভ হবে। সময় ও অর্থ কম লাগবে। এর পাশাপাশি কাজের মধ্যে স্বচ্ছতা আসবে। যেই কাজ করতে আগে এক সপ্তাহ লাগতো তা এক ঘণ্টায় করা সম্ভব হবে।”
’‘হার্ড কপিতে কোন কর্মকর্তা কখন স্বাক্ষর করলো, দেরি করলো কিনা এখন তা বোঝা যায় না। কিন্তু ডি-নথির মাধ্যমে ফাইল কার কাছে আছে সেটা দেখা যাবে। কেউ চাইলেই তখন মিথ্যা কথা বলতে পারবে না। এখানে সবসময় রিয়েল টাইম দেখাবে। কেউ যদি রাত বারোটায় ফাইলে স্বাক্ষর করে সেটাও এর মাধ্যমে দেখা যাবে, ” সজিবুর যোগ করেন।
ডিজিটাল নথির বাস্তবায়নে গত ২ জানুয়ারি এটুআই কর্তৃপক্ষের সাথে একটি সভা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এই নথির কার্যক্রমের বর্ণনা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার শামীম পারভেজ বাংলাদেশ মোমেন্টসকে বলেন, “একজন শিক্ষার্থী যখন তার বিভাগে আবেদন করবেন তখন বিভাগ সেই আবেদনের হার্ড কপি প্রসেস করে অনুষদের ডিন হয়ে এখন যেভাবে আমাদের কাছে পাঠায় তখন তারা এই হার্ড কপি না পাঠিয়ে ফাইলটি স্ক্যান করে তার সাথে একটি নোট লিখে সেটা ডিনকে পাঠাবে। ডিন সেখানে তার মতামত দিয়ে সেটা (ফাইল) রেজিস্ট্রারকে ফরোয়ার্ড করবেন। রেজিস্ট্রার থেকে স্বাক্ষর করা ফাইল যেভাবে ফরোয়ার্ড হয় ঠিক সেভাবে এখানে সফট কপিটা ফরোয়ার্ড হবে।”
“এটা ফরোয়ার্ড হওয়ার সাথে সাথে ওই শিক্ষার্থীর বিভাগে একটি ট্র্যাকিং নাম্বার চলে যাবে। পরবর্তীতে ওই শিক্ষার্থী যদি দশ দিন পরেও এসে তার আবেদনের অবস্থা দেখতে চান তাহলে ট্র্যাকিং নাম্বারে ঢুকলেই ওই ফাইলের বিস্তারিত জানা যাবে অর্থাৎ ফাইলটি কোথায় আছে, কোন টেবিলে আছে এবং কি অবস্থায় আছে সব দেখতে পারবেন,” বলেন তিনি।
নতুন এই ব্যবস্থার আওতায় অফিসিয়াল কার্যক্রম চলে আসলে তা প্রশাসনিক ভবন ও হলগুলোর কর্মকর্তাদের কাজে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা আসবে। এতে করে একদিকে যেমন কাজের গতি বাড়বে ঠিক তেমনি শিক্ষার্থীরাও তাদের কাঙ্ক্ষিত সেবা কোন ধরনের ভোগান্তি ছাড়াই পেয়ে যাবেন বলে মনে করছেন প্রশাসন সংশ্লিষ্টরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেন, ”প্রশাসনিক ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসলে সকল সংকট কেটে যাবে। অনেক কর্মকর্তা ঠিক সময়ে অফিসে আসেন না, আবার আগেই বের হয়ে যান। অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন না। এবার আশা করি এই পদ্ধতির যথাযথ প্রয়োগ হলে সকল কাজে গতি আসবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আকরাম হোসেন মনে করেন এই নথির বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয় একটি দূরদর্শী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। একে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ডিজিটাল নথি চালু করা একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এ ধরনের উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।
তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি ডিজিটাল নথির বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রশাসনের কাজের গতি আগের থেকে অনেক বেশি বৃদ্ধি পাবে। আমাদের কাজের মধ্যে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়ার পাশাপাশি গুণগতমান বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে শিক্ষার্থীদের সহজেই সেবা নিশ্চিত এবং ভোগান্তি লাঘব হবে বলে তিনি মনে করে।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বাংলাদেশ মোমেন্টসকে বলেন, “ডি-নথির মাধ্যমে সেবা প্রদানে গতি এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পারবো। এর মাধ্যমে কোন ফাইল কখন, কোথায় অবস্থান করছে, কেউ সিদ্ধান্ত দিতে বিলম্ব করছে কিনা বা অযথা কোন গাফিলতি করছে কিনা সেই বিষয়গুলোকে মনিটর করা সম্ভব হবে। ডি-নথির মাধ্যমে শুধু সেবা দেয়া নয়, এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যেও কাজের গতিশীলতা আসবে।”
উপাচার্য বলেন, “যারা এই নথি প্রয়োগ করবে তারা এর ব্যবহার জানতে পারবে, কিভাবে কম্পিউটার অপারেশন করতে হয় সেটাও অবহিত হবে। এতে করে সকলের মধ্যে আস্থা ও শক্তি ফিরে আসবে।”
“ ডিজিটাল যুগে প্রযুক্তির প্রয়োগে দেশের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আমরা এখনো পিছিয়ে আছি। এর মাধ্যমে (ডি-নথি) আমাদের যে দায়বদ্ধতা সেখান থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব হবে। পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডি-নথির প্রয়োগের মধ্যে দিয়ে দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান যারা এখনো ডি-নথির ব্যবহার করে নাই তারা এর ব্যবহার করার জন্য উৎসাহ খুঁজে পাবে। আমাদের কাছে সহযোগিতা চাইলে আমরাও সহযোগিতা করতে প্রস্তুত থাকবো,” যোগ করেন উপাচার্য অধ্যাপক মাকসুদ কামাল।