বসন্তকে বরণ করে নিলো জাবি শিক্ষার্থীরা
- আশরাফুল, জাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯:৫৭ PM , আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯:৫৭ PM

কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কথায় ‘ফুল ফুটুক না ফুটুক, আজ বসন্ত। শান-বাঁধানো ফুটপাতে, পাথরে পা ডুবিয়ে এ কাঠখোট্টা গাছ, কচি কচি পাতায় পাঁজর ফাটিয়ে হাসছে। ফুল ফুটুক না ফুটুক, আজ বসন্ত।'আজ সেই বসন্ত এসেছে।শীতকালে প্রকৃতি হারায় তার সৌন্দর্য থাকে শূন্যতা ও হাহাকার। শীতের এই রিক্ততাকে বিদায় দিয়ে প্রকৃতি বরণ করে নেয় বসন্ত। এ সময় গাছে গাছে ফুটবে রক্ত শিমুল-পলাশ, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া।প্রকৃতি ফিরে পাবে তার আসল সৌন্দর্য।
বসন্তকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা পড়েছে চোখ ধাঁধানো হলুদ পাঞ্জাবি, ছাত্রীরা বাসন্তী-হলুদ শাড়ি ও খোপায় গুজেছে বাহারি রঙ্গের ফুল। নিজেদের যেন প্রকৃতির চিত্রপট পরিবর্তনের সাথে সাজিয়েছেন। ফাগুন যে এসেছে তাই কবি সুফিয়া কামাল বলেছেন, “হে কবি! নীরব কেন-ফাগুন যে এসেছে ধরায়, বসন্তে বরিয়া তুমি লবে না কি তব বন্দনায়?”কবির এই আহ্বানেই বসন্তকে বরণ করে নিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের(জাবি) বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের এই সাজ।
এতো যে রঙ, এতো যে আলো হাওয়ায় হাওয়ায়, বসন্ত তার আবির মেখে নাম লিখে যায়’ স্লোগানকে ধারণ করে বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনার সংলগ্ন মহুয়া চত্বরে ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিনকে এভাবেই বরণ করে নেন বাংলা সংসদ ও বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
প্রায় দিনব্যাপী এই বসন্তবরণ অনুষ্ঠানটি শুরু হয় সকাল ১০ টায়। রবীন্দ্র-সংগীত ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বাঙ্গালির চিরায়ত আবেদনকে প্রকৃতির আবহে ফুঁটিয়ে তোলা হয়। দক্ষিণা বাতাসে দোল খাওয়া ফুলের সুঘ্রাণে মন হয় মাতোয়ারা।
অনুষ্ঠানে বাংলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক শামীমা সুলতানা বলেন "জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাকৃতিক পরিবেশ এতই মনোমুগ্ধকর যে প্রতিটি ঋতুই আমাদের মনকে মাতোয়ারা করে দেয়। এখানে আসতে পেরে আমরা সবাই নিজেদের ভাগ্যবান মনে করছি। এর মুগ্ধতা আমাদের আত্মাকে নাড়িয়ে দেয় আমাদের সত্তাকে নাড়িয়ে দেয়। শীত যেমন আমাদের শিহরিত করে, শরৎ যেমন উদাসীন করে তেমনি বসন্ত আমাদের আলোড়িত করে। সেই বসন্ত আজ আমাদের মধ্যে ধরা দিয়েছে। আশেপাশের যে ফুল, ফল তার রং আমাদের মর্মে লাগুক, আমাদের কর্মে লাগুক।"
বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম তালুকদার বলেন, ‘শীতের রিক্ততার পরে বসন্তের মাধ্যমে প্রকৃতিতে যেমন আনন্দের জোয়ার লাগে ঠিক তেমনি বসন্তের মাধ্যমে আমাদের মনের আনন্দ দৃশ্যমান হয়। এই আনন্দ, উৎসবমুখর পরিবেশ সারাবছর ধরে বজায় রাখার উদ্দেশ্যেই আমাদের এ আয়োজন।’
বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আহসান ইমাম বলেন, বসন্ত মানেই নতুন কিছু, বসন্ত এলে প্রকৃতি যেভাবে তার জড়া জীর্ণতা ঝেড়ে ফেলে নতুন উদ্যমে নতুন রুপ ধারণ করে। আমরাও সেভাবে নতুন কঁড়ি প্রস্ফুটিত হবার মতো নতুন উদ্যমে জেগে উঠি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে, বিদ্যায়তনগুলোতে প্রকৃতিকে ধারণের এমন চর্চা অব্যাহত থাকুক। আমি আমার সন্তানকে নিয়ে এ উৎসব উদযাপনে এসেছি, খুবই ভালো লাগছে।’
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী ইমরান হোসাইন হিমু বলেন ‘বসন্ত আমাদেরকে উল্লসিত ও উৎফুল্ল করে। বসন্তের মধ্যদিয়ে আমরা যেনো জীবনকে নতুনভাবে উপলব্ধি করি। আপনারা সবাই জানেন ফুল ফোঁটে বনে-বাগানে তার শিহরণ লাগে আমাদের মনে। বসন্ত এমনই এক সুন্দর ও সৌন্দর্যমণ্ডিত ঋতু।’
বাংলা বিভাগের ৪৯ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী পলি বলেন,রুক্ষতার শেষে বসন্ত প্রকৃতিতে নিয়ে আসে রং ও সজীবতার স্পর্শ। এই রংএ আমরাও রঙিন হই।প্রকৃতির সাথে এইখানেই মানুষের মনের একাত্মতা।তাই বসন্ত এত মধুর, এত রঙিন ও প্রেমময় এবং সর্বদাই নবীন।
আনন্দ শোভাযাত্রায় বাংলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. শামীমা সুলতানা, অধ্যাপক খন্দকার শামীম, ড.তৃপ্তি সরকার,ড.রেজওয়ানা আবেদিন,অধ্যাপক ফারহানা আক্তার,সুমন সাজ্জাদসহ বিভাগের অন্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
অনুষ্ঠান শেষে একটি শোভাযাত্রা বের হয়ে পুরাতন রেজিস্ট্রার ভবন ঘুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুরাদ চত্বরে এসে শেষ হয়।