নারী উদ্যোক্তাদের মেলায় মজেছে ঢাবি

ঢাবি
  © সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে নারী উদ্যোক্তাদের ভিড়ে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) পেয়েছে ভিন্ন রুপ। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান নারী শিক্ষার্থীদের বাহারি সব পণ্যের পসরায় সেজেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র।

আজ শুক্রবার (৮ মার্চ ) বিকালে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী উদ্যোক্তাদের মোট ৩৪টি স্টলে বাহারি সব পণ্য স্থান পেয়েছে। এসব পণ্যের মধ্যে শাড়ি, চুড়ি, সেলোয়ার কামিজসহ মেয়েদের বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনীর সংখ্যাই বেশি।‌ এছাড়াও নানা ধরনের খাবার- হাতে বানানো কেক, বাঙালিয়ানা খাবারের পসরাও এসব স্টলে শোভা পেয়েছে।

বাহারি সব স্টলের রয়েছে একেক ধরনের নাম। এদের মধ্যে রয়েছে- তুলিস্পর্শ, মিনোমি, ফুলনামা, তাসমিম'স হেনা আর্টওয়ার্ক, রং তুলিতে গল্প, বসন্ত,গোলাপজান, কৃষাণীর সাজ, টেরামিক্স, অর্ঘ্য, এইচএন'স, ব্লুমিন্স, খুদুমনি, হোমসি বেকার, আখিলিক, অনুরণন'স, কালা কইতর, সদাইপাতি, সাজপুকুর, বৈচিত্রা, টেল অব ডেজার্ট, মেঘ শহর, ক্রাফটিক, ফোর টু ভাইভ, নৈয়ালী, আরিম এক্সেসরিজ ও ইমাম অ্যান্ড বিউটিসহ আরও বেশ কয়েকটি স্টল। এসব স্টল নিয়ে যারা বসেছেন তাদের সবাই ঢাবির সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে কেউ নবীন কারো আবার পড়ালেখা শেষের দিকে।

কথা হয় 'ফুলনামা' স্টলের স্বত্তাধিকারী শারমিন আক্তার শিলার সাথে। তিনি জানান, মাত্র তিন মাস হচ্ছে তার উদ্যোক্তা পেশায় আসার। ভালোই সাড়া পান। তার দাবি, শুধু নারী দিবসে নয় বছরের বিভিন্ন সময় এরকম আয়োজন করলে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী উদ্যোক্তাদের আরও অনুপ্রেরণা যোগাবে।

চার বছর ধরে শাড়ি, থ্রি পিস বিক্রি করেন গোলাপজানের স্বত্তাধিকারী রিমি খন্দকার। তিনি বলেন, আমি চার বছর ধরে মেয়েদের শাড়ি ও সালোয়ার কামিজ বিক্রি করছি। এখন প্রতিমাসে তিন লাখের বেশি বিক্রি করতে পারি। এরকম আয়োজন অনেক ভালো উদ্যোগ। তবে এটিকে আরো প্রসারিত করে বছরে কয়েকবার করা গেলে তা আমাদের নারী উদ্যোক্তাদের আরো সাহস ও শক্তি যোগাবে।


বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মোছা. আঁখি খাতুন। তিনি 'কালা কইতর’ নামের একটি স্টলের স্বত্তাধিকারী। তিনিও একই কথা বলেন। আঁখি বলেন, নারী উদ্যোক্তাদের যদি এরকম মেলাসহ প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা ঠিকভাবে দেয়া হয় তাহলে আমরা সামনে আরও ভালো কিছু করতে পারবো।

মেলায় কাউকে কাউকে আবার শখের বশে স্টল নিয়ে বসতে দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলের ৪২৫ নাম্বার রুমের নাঈমা সুলতানা ও নূরে জান্নাত সুলতানা এরকমই শখের বশে দোকান নিয়ে বসেছেন। তাদের কক্ষের নাম অনুসারে স্টলের নাম দিয়েছেন 'ফোর টু ফাইভ'। তারা জানান, এর আগে কোনদিন এভাবে স্টল নিয়ে বসা হয়নি, এবারাই প্রথম।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ঢাবি ছাত্রলীগ এই  মেলার আয়োজন করে। মেলায় অংশগ্রহণকারীদের কোন ধরনের ফি ছাড়াই অংশগ্রহণ করার সুযোগ করে দেয় ঢাবি ছাত্রলীগ।

এ প্রসঙ্গে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বাংলাদেশ মোমেন্টসকে বলেন, আমরা বিশ্বাস করি একজন নারী পরিচয়ে বড় নয় বরং মানুষ পরিচয়ে সবচেয়ে বড়। আমাদের মগজে কিংবা ঔপনিবেশিক পুরুষতান্ত্রিক যে মনোভাব রয়েছে তা দিয়ে আমরা পূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করতে চাই। কিন্তু নারী পুরুষের মতো স্বাধীন সত্তা। পুরুষ যেমন একটি সত্তা, নারীও ঠিক একই সত্তা। এই মেসেজ (বার্তা) দেয়ার জন্য আমরা এই আয়োজন করেছি।

সৈকত জানান, মেলায় ঢাবির নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে ১০ জনকে ঢাবির প্রথম নারী শিক্ষার্থী লীলা নাগের নামে বৃত্তি প্রদান করা হয়। এছাড়া, ৫ জনকে নারী সম্মাননা দেয়া হয়।