সঠিক তথ্য জেনে মন্তব্য করতে বললেন জবির সেই সহকারী প্রক্টর

জবি
  © সংগৃৃহীত

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা ফেসবুক স্ট্যাটাসে সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকী ও সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে অভিযুক্ত করে আত্মহত্যা করেন। এ ঘটনায় ওই সহপাঠী ও শিক্ষককে নিয়ে নানান ধরনের মন্তব্য চলছে। এবার সঠিক তথ্য জেনে সিদ্ধান্ত এবং মন্তব্য করার অনুরোধ করেছেন সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম।

আজ শনিবার (১৬ মার্চ) এক বিবৃতিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দ্বীন ইসলাম এই তথ্য জানান।

ওই বিবৃতিতে শিক্ষক দ্বীন ইসলাম বলেন, ‘একজন শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের পাশে থাকা এবং তাদের জন্য কাজ করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। শুধুমাত্র স্ট্যাটাসের ওপর ভিক্তি করে কাউকে ভুল না ভাবার অনুরোধ রইল। আমাদের স্নেহের শিক্ষার্থী অবন্তিকা হয়তো দীর্ঘদিন যাবৎ কোনো মানসিক চাপে ছিল। সেটা হয়তো তাঁর বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই। এই অপ্রত্যাশিত ঘটনার প্রকৃত রহস্য উন্মোচনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এবং অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার জন্য আমি সবিনয়ে প্রস্তুত। সঠিক তথ্য জেনে সিদ্ধান্ত এবং মন্তব্য করার অনুরোধ রইল।’

মৃত্যুর পূর্বে ফেসবুকে দেওয়া অবন্তির স্ট্যাটাস নিয়ে ওই শিক্ষক বলেন, ‘প্রথমত আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ, আম্মানকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করা, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কারণ ঘটনা নিস্পত্তি হয় ২০২২ সালের ১৬ আগস্ট। এরপর এই বিষয় নিয়ে আর কারো সাথে কোনো আলোচনা হয়নি কখনোই। প্রক্টর অফিসে অবন্তিকা এবং তার মাকে একবারই ডাকা হয়েছিল। সেই সময় প্রক্টর মোস্তফা কামাল স্যার, সহকারী প্রক্টর গৌতম সাহা স্যার এবং অভিযোগকারী তার বন্ধুরা উপস্থিত ছিলেন। একাধিকবার ডেকে হেনস্তা করার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। কারণ বিষয়টি ওইদিনই মীমাংসা হয়ে গিয়েছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘সুইসাইড নোটে প্রক্টর অফিসে আম্মানের বিরুদ্ধে আনিত যৌন হয়রানি ও ভয়ভীতির অভিযোগের বিচার না পাওয়ার বিষয়টি তৎকালীন প্রক্টর স্যার ভাল বলতে পারবেন। এ অভিযোগ সম্পর্কে আমি অবগত নই। সুইসাইড নোটে আনিত অভিযোগ অবন্তিকাকে বহিষ্কার করার বিষয়ে পরবর্তীতে আমি কখনো কিছুই বলিনি। কারণ বিষয়টি মীমাংসা হওয়ার পরে অবন্তিকার সাথে বিগত দেড় বছরে একবারের জন্যেও অবন্তিকা বা তাঁর পরিবারের সাথে আমার কোনো কথা বা যোগাযোগ হয়নি।’

জনাব দ্বীন ইসলাম বলেন, ‘প্রায় দেড় বছর আগে ফেসবুকে ভুয়া একাউন্ট খুলে তাদেরকে হয়রানি করছে দাবি করে অবন্তিসহ তার ব্যাচমেটরা কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে। পুলিশ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আইডিটা কে চালায় সেটা বের করে দেব বলে আশ্বাস দেয়। এই কথা শুনে অবন্তিকা তার বন্ধুদের কাছে স্বীকার করে যে, আইডিগুলো (ফেইক একাউন্টসগুলো) সে নিজেই চালায়। তখন তার বন্ধুরা তাকেসহ প্রক্টর অফিসে নিয়ে এসে ২০২২ সালের ৮ আগস্ট একটা লিখিত অভিযোগ দেয়।’

‘অভিযোগের প্রেক্ষিতে ১৬ আগস্ট প্রক্টরের উপস্থিতিতে প্রক্টর অফিসে আমি এবং সহকারী প্রক্টর গৌতম কুমার সাহা অবন্তিকা এবং অবন্তীর অভিভাবক ও ক্লাসমেইটস সহ (অভিযোগ কারীরা) সবাই উপস্থিত ছিল। তখন অবন্তিকার মা তার ব্যাচমেট (যারা এ অভিযোগ করেছে) তাদের কাছে ঘটনার সত্যতা শুনে বলে যে, আমার মেয়ে যা করেছে ভুল করেছে, ঘটনার জন্য অভিযোগকারী সকলের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করে এবং ভবিষ্যতে আমার মেয়ে আর এই ধরনের কাজ করবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। যদি করে তার দ্বায় আমরা নেবো বলে জানান অবন্তির মা। এবারের মতো বিষয়টি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আমার মেয়ে মানসিক ভাবে অসুস্থ এবং সে নিয়মিত মেডিসিন নেয়।’

‘৩ মাসেরও কিছুদিন পরে অবন্তিকা এবং তার বাবা-মা প্রক্টর অফিসে জিডি তোলার জন্য আসে কিন্তু তার ব্যাচমেটরা জিডি তুলতে অসম্মতি জানায়। তখন অবন্তিকার মা-বাবা এবং অবন্তিকা আমার সাথে ফোন করে আমার বিভাগে দেখা করতে আসে। আমি তাদেরকে বিষয়টা বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করি। যেহেতু অভিযোগকারীরা জিডি তুলতে অসম্মতি জানিয়েছে. সেহেতু প্রক্টর স্যারের সাথে যোগাযোগ করে জিডি তোলার বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য পরামর্শ দিই।’

’তৎক্ষণাৎ অবন্তীকার মা বলেন, ‘আমার মেয়েটা মারাত্মক ডিপ্রেশনে পরে গেছে, ও এখন হলে থাকতে পারবে না, ওর বন্ধুদের সাথে বড় ধরনের দূরত্ব হয়ে গেছে। এগুলো বলে সবাইকে নিয়ে কুমিল্লায় চলে যান। এরপরে অবন্তিকা ও তার পরিবারের কারো সাথে এ বিষয়ে আজ পর্যন্ত আমার কোনো যোগাযোগ হয়নি।’


মন্তব্য