ঈদের ছুটিতে বাড়িতে ফিরছেন বুটেক্স শিক্ষার্থীরা

বুটেক্স
  © সংগৃহীত

ঈদ বাঙালি মুসলমানের প্রাণের উৎসব। প্রতি বছর এই ঈদকে ঘিরে সবার মনে থাকে আনন্দ‌ ও উচ্ছ্বাস। ঈদের আনন্দ পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে চায় সবাই। তাই বাড়ি থেকে দূরে থাকা মানুষগুলো নাড়ির টানে বাড়ি ফিরে।


প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে জীবনের লক্ষ্য বাস্তবায়নে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুটেক্স) পড়তে আসে অনেক শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই বছরের বেশিরভাগ সময়ই পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনদের থেকে দূরে থাকতে হয়। সারা বছর সেমিস্টার পরীক্ষা, ক্লাস টেস্ট, ল্যাব, অ্যাসাইনমেন্ট, টিউশনসহ নানা ব্যস্ততার কারণে হর-হামেশাই বাড়ি ফেরা হয়ে ওঠে না। বছর ঘিরে যখন ঈদুল ফিতরের দীর্ঘ ছুটি মেলে, শিক্ষার্থীরা এই ছুটিকে কাজে লাগিয়ে ফিরে যায় তাদের বাড়িতে। এত ব্যস্ততার মাঝে পরিবারকে একটু সময় দেয়ার জন্য, বন্ধুদের সাথে মেতে ওঠার জন্য। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের ঈদকে ঘিরে উৎসাহ-উদ্দীপনা অন্যদের চেয়ে বেশিই থাকে।


দীর্ঘদিন পরিবার থেকে দূরে থাকার পর ঈদকে ঘিরে বাড়ি যাওয়া নিয়ে অনুভূতি প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের ডাইস অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী সিয়ামুল ইসলাম সিয়াম। তিনি বলেন, আমরা যতই আপন মানুষদের কাছ থেকে দূরে থাকি না কেন আমাদের শিকড় আমাদেরকে টানবেই। প্রতিবছর আমাদের মুসলিমদের জন্য ঈদুল ফিতরই একটি বড় বন্ধ আর সবচেয়ে আনন্দঘন মুহূর্তের দিন। ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার অনুভূতিটা অন্যসব ছুটির চেয়ে আলাদা। বিশেষত যারা নিজের পরিবার ছেড়ে হল বা মেসে থাকে তারাই প্রকৃতপক্ষে এই ছুটির মর্ম উপলব্ধি করতে পারে। ঈদ মানে খুশি, আনন্দ। ঈদের সূত্র ধরে সবার জীবনে এই আনন্দ ছড়িয়ে পড়ুক এই‌ প্রার্থনা করি।


৪৮তম ব্যাচের ওয়েট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মাহামুদুল হাসান জানান, রমজানে পরিবারের সাথে বসে ইফতার করার মাহাত্ম্য যে কতটা সেটা উপলব্ধি করা যায় বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে। রমজান আসলেই অপেক্ষায় থাকি কবে ছুটি হবে, কবে বাড়ি যাব‌ আর কবে পরিবারের কাছের মানুষদের সাথে বসে ইফতার করব। ঈদের আনন্দ সবার সাথে ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্য আমরা মুখিয়ে থাকি। এ যেন ঈদের আনন্দকে বাড়িয়ে দেয় কয়েকগুণ। ঈদ উদযাপনে পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়াটা যেন ঈদের আগে আরেক ঈদ।


একই ব্যাচের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী পিয়াল আহমেদ জানান,‌ বলা হয়ে থাকে লেখাপড়ার জন্য পরিবার থেকে একবার দূরে সরলে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আর পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়া যায় না। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রতিদিন ক্লাস, ল্যাব, ভাইবাসহ নানা ব্যস্ততায় যখন হাঁপিয়ে উঠি তখন ঈদের ছুটি যেন অত্যাধিক গরমে এক পশলা বৃষ্টির মত হয়ে দেখা দেয়। রমজান মাসে ক্লান্তি, হলের খাওয়া-দাওয়ার সমস্যা, ক্লাস ইত্যাদি থেকে মুক্তি পেয়ে যখন কিছুদিনের জন্য পরিবারের কাছে ফিরে যাই তখন এক অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে। আমাদের সবার মাঝে এক উৎসব মুখর পরিবেশ বিরাজ করে কে কখন কার আগে বাড়ি যাবো। সব ক্লান্তি যেন এক নিমিষেই দূর হয়ে যায়।


ক্যাম্পাস বন্ধ হলেও অনেক শিক্ষার্থীকে টিউশনের কারণে বাড়িতে ফিরতে দেরি হয়েছে। প্রতিদিন ফাঁকা হতে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো। তাদের মন যেন আর টিকতেই চায় না। শূন্য ক্যাম্পাসে থাকার রিক্ত অনুভূতি তুলে ধরেন শহীদ আজিজ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ফারহান আবসার।

তিনি বলেন, ভার্সিটি ছুটি হয়ে গেলে ধীরে ধীরে খালি হতে থাকল হল। ব্যাচমেটরা সবাই এক এক করে চলে গেল। গুটি কয়েকজন টিউশনের জন্য রয়ে গেছে। দিন যাচ্ছে আর ক্যাম্পাস ততই খালি হচ্ছে। বাড়ি যেতে ইচ্ছে করলেও আরোও কয়েকদিন থেকে যেতে হচ্ছে। পরিবারের মানুষগুলো দিন গুনছে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে কবে বাড়িতে যাবো।

ধরাবাঁধা জীবন থেকে হাফ ছেড়ে বাঁচার জন্য এভাবে অপেক্ষার প্রহর গোনা শেষে বাড়িতে যেতে পারাটা সত্যিই অনেক আনন্দের হবে। মায়ের মুখ দেখে তার হাতের সেহেরি খেয়ে রোজা রাখতে পারব এটা ভেবেই আপাতত মনের মধ্যে আনন্দ খুজে নিচ্ছি।


মন্তব্য