বেরোবিতে সাংবাদিকতা বিভাগের প্রধান নিয়োগ চেয়ে আইনি নোটিশ

বেরোবি
  © ফাইল ছবি

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এক শিক্ষক ২০১৭ সালের হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী জ্যৈষ্ঠতা ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে নিয়োগ চেয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) কর্তৃপক্ষকে আইনি নোটিশ দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (৯ মে) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আনিছুর রহমান ঐ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহামুদুল হক-এর পক্ষে উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান নিয়োগ সংক্রান্ত সুপারিশ প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. মো. মোরশেদ হোসেন এবং ঐ বিভাগের প্লানিং কমিটির সদস্যদের এ নোটিশ পাঠিয়েছেন।

হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী, গত ৯ মার্চ ২০১৯ অনুষ্ঠিত ৬০তম সিন্ডিকেট সভায় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে ১৩ জানুয়ারি ২০১২ অনুষ্ঠিত নিয়োগ বাছাই বোর্ডের সুপারিশ মোতাবেক মাহামুদুল হককে প্রভাষক পদে নিয়োগ প্রদান করা হয় ১০ মার্চ ২০১৯।

পূর্বের এই রায় পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না করায় তিনি আরেকটি রিট মামলা করেন হাইকোর্টে। ২০১২ সালের মহামান্য হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী মাহামুদুল হককে কেন জ্যেষ্ঠতা ও সার্ভিস বেনিফিট দেওয়া হবে না এবং নিয়োগ জালিয়াতির কারণে কেন একই বিভাগের শিক্ষক তাবিউর রহমান প্রধানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না মর্মে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি গত ১৪ মার্চ ২০২২ হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। পূর্বের রায় বাস্তবায়িত না হলে মাহামুদুল হক আদালত অবমাননার আরেকটি মামলা করেন বলে নোটিশে উল্লেখ আছে।

নোটিশে আরও বলা হয়েছে, সাতদিনের মধ্যে মাহামুদুল হককে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া না হলে হাইকোর্টে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

জানা যায়, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান নজরুল ইসলামের মেয়াদ শেষ হয় চলতি বছরের ১০ মার্চ। এরপর বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব দেয়া হয় একই বিভাগের সহকারি অধ্যাপক নিয়ামুন নাহারকে। তিনি বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব নিতে অপারগতা প্রকাশ করলে সহকারি অধ্যাপক রহমতুল্লাহকে দায়িত্ব দেয় প্রশাসন। তিনিও অপরাগতা প্রকাশ করলে সহকারি অধ্যাপক সারোয়ার আহমাদকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনিও দায়িত্ব নেননি। 

প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ২৯ অক্টোবর গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের জন্য অধ্যাপক/সহযোগী অধ্যাপক (স্থায়ী) পদে একটি এবং সহকারী অধ্যাপক/প্রভাষক দুটি স্থায়ী পদে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে তাবিউর রহমান প্রধানসহ ২২ জন প্রভাষক পদে দরখাস্ত করেন। পরের বছরের ১৩ জানুয়ারি প্রভাষক পদের জন্য বাছাই বোর্ড হয়। বাছাই বোর্ড যথাক্রমে মো. মাহামুদুল হক ও নিয়ামুন নাহারকে অপেক্ষমাণ তালিকায় রেখে প্রভাষক হিসাবে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে। কিন্তু বাছাই বোর্ডের সুপারিশপত্রে দেখা যায়, ‘জালিয়াতি’ করে অপেক্ষমাণ তালিকায় তৃতীয় হিসাবে তাবিউর রহমানের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

পরে দুই দফায় পদোন্নতি নিয়ে বর্তমানে সহযোগী অধ্যাপক পদে আছেন। এ পদোন্নতিতেও রয়েছে বিস্তর অনিয়মের অভিযোগ। নিয়োগবঞ্চিত শিক্ষক মাহামুদুল হকের করা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অনিয়ম ও জালিয়াতির মাধ্যমে ১১ বছর আগে নিয়োগ পাওয়া গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাবিউর রহমানের বিষয়ে জানতে চেয়ে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) পত্র দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে।

এরই প্রেক্ষিতে তাবিউর রহমানের নিয়োগের জালিয়াতি ও অনিয়মের অভিযোগের বিরুদ্ধে তিন সদস্যের তথ্যানুসন্ধান কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটি এরই মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বলে জানা গেছে। এসব কারণেই বিভাগীয় প্রধান নিয়োগে আইনগত জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এর পরে বিভাগের একাডেমিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় তিনজন শিক্ষককে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব দেয়া হলে তারা গায়েবী কারণেই অপারগতা প্রকাশ করেন। বর্তমানে আইনি জটিলতায় বিভাগীয় প্রধানের পদ শূন্য রয়েছে।


মন্তব্য