বাংলাদেশে আগে উন্নয়ন, পরে হয় নগরায়ন: ঢাবি ভিসি 

ঢাবি
ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল (ঢাবি উপাচার্য)  © ফাইল ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে আগে প্ল্যানিং তারপর নগরায়ণ করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে আগে উন্নয়ন পরে নগরায়ণ করা হয়। এটি অনেক বড় সমস্যা। কারণ নগরায়ণ হয়ে যাওয়ার পরে প্ল্যানিং করাটা কোনভাবেই সম্ভব নয়।

মঙ্গলবার (২৮ মে) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত অষ্টম নগর সংলাপে এসব কথা বলেন উপাচার্য। স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পথে টেকসই নগরায়ন বিষয়ে এ সংলাপের আয়োজন করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগ এবং ২০টি আন্তর্জাতিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কনসোর্টিয়াম, আরবান আইএনজিও ফোরামের যৌথ আয়োজনে নগর সংলাপের উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

হেবিট্যাট ফর হিউম্যানিটি ইন্টারন্যাশনালের ন্যাশনাল ডিরেক্টর জেমস স্যমুয়েলসের সভাপতিত্বে সংলাপের উদ্বোধনী সেশনে বিশেষ অতিথি হিসেবে ব্র্যাকের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. লিয়াকত আলী, কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মানিষ কুমার আগারওয়াল এবং গ্লোবালওয়ান বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার রায়হান মাহমুদ কাদেরী বক্তব্য রাখেন। সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো থেকে প্রতিদিন উৎপন্ন হওয়া নানা ধরনের ময়লা-আবর্জনা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে জানিয়ে উপাচার্য বলেন, বিশ্বের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের নিজস্ব বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির এ যুগে ঢাবিতেও এ ধরনের কর্মকাণ্ড হওয়া উচিত। ঢাবির প্রতিটি হলের সামনে বিভিন্ন রঙের ডাস্টবিন রাখা হবে। ময়লার ধরনের ওপর ভিত্তি করে এসব ডাস্টবিনে বর্জ্য ফেলবেন শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে এসব বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানান উপাচার্য।

তিনি বলেন, আপাতত এটিকে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে নেয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এ প্রজেক্ট বাস্তবায়নে সিটি করপোরেশন ও বিভিন্ন এনজিওর সহযোগিতা প্রয়োজন।

মাকসুদ কামাল বলেন, উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনার দিক থেকে এশীয়দের মধ্যে একেবারে তলানিতে বাংলাদেশের অবস্থান। দেশের সেরা বিদ্যাপীঠ ঢাবিতেই যে গবেষণা হয় তা অপ্রতুল। এতদিন বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা গবেষণামুখী ছিল না। এখন নতুন সিলেবাসে বিদ্যালয় থেকেই শিশুরা উদ্ভাবনী ক্ষমতার অংশীদার হতে পারবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, আমরা (বাংলাদেশ) মাত্র ০.৪৬ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ করি। আর আমাদের যে এফেক্ট, আমাদের যে মাথাব্যথা, এটা কিন্তু আমাদের ভাবিয়ে তোলে। যারা নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়ে শহরে চলে আসছে তাদের থাকার জায়গা দুটি। তারা থাকছেন বস্তিতে আর ব্যবসা করছেন ফুটপাতে, এটা হচ্ছে বাস্তবতা।

মেয়র বলেন, এই বাস্তবতাকে মাথায় নিয়েই কিন্তু আমাদের কাজগুলো করতে হবে। আমি যেটি বলতে চাই, বিভিন্ন ব্যুরো থেকে লোকসংখ্যার হিসাব দেওয়া হয়। কিন্তু আমরা দেখেছি, শুধুমাত্র ঢাকা উত্তর সিটিতেই এক কোটি বিশ লাখের বেশি লোক বসবাস করে, ঢাকা দক্ষিণেও একই অবস্থা। জনসংখ্যার যে হার, প্রতি বর্গকিলোমিটারে উনপঞ্চাশ হাজার, কিছু জায়গায় আরও বেশি।

ঢাবির সঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সমন্বয়ভিত্তিক প্রজেক্ট প্রসঙ্গে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, আগামী বাজেটে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সঙ্গে ঢাবির সমন্বয়কল্পে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হবে। বরাদ্দের ওপর ভিত্তি করে ঢাবির নানা প্রকল্পে উত্তর সিটি করপোরেশন সমন্বয় করবে।
 
বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ তৈরি প্রসঙ্গে মেয়র আতিক বলেন, ইতোমধ্যে ঢাকার আমিনবাজার ল্যান্ডফিল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ২০২৫ সাল থেকে এই এক ল্যান্ডফিলের মাধ্যমে সাড়ে ৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে।

উল্লেখ্য, আরবান আইএনজিও ফোরাম বাংলাদেশ ২০টি আন্তর্জাতিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার একটি কনসোর্টিয়াম, যা ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ফোরামের উদ্দেশ্য হলো নগর উন্নয়ন সংস্থাগুলোর মধ্যে কার্যকর সমন্বয় সাধন এবং বিভিন্ন পর্যায়ের অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে নেটওয়ার্কিং এর মাধ্যমে সহযোগিতা নিশ্চিত করা এবং অনানুষ্ঠানিক বসতিতে নিম্ন-আয় সম্প্রদায়ের টেকসই উন্নয়ন সাধন করা। এই উদ্দেশ্য অর্জনের লক্ষ্যে ২০১৩ সাল থেকে আরবান ডায়ালগ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।