রাবির আশফিয়া পেলেন যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপ

রাবি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আশফিয়া তাসনিম  © ফাইল ছবি

অনার্স প্রথমবর্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রেই পিএইচডি করার স্বপ্ন দেখতেন। বিভাগের শিক্ষকরা জাপান-সুইডেনে পিএইচডি করার কথা বললেও তার লক্ষ্য ছিলো যুক্তরাষ্ট্র। ফলে নিজের স্বপ্নকে পূরণ করতে সেভাবেই নিয়েছিলেন প্রস্তুতি। ১ম বর্ষ থেকেই বিভিন্ন জায়গায় ইংরেজি স্পিকিং টেস্ট, নিজের সাথে নিজেই ইংরেজিতে কথা বলা এবং 'রিয়েল লাইফ' নামে একটি অ্যাপে বিদেশি মানুষের সাথে কথা বলে ইংরেজিতে বাড়ান দক্ষতা। এমনও সময় ছিল, সপ্তাহে প্রতিদিন তাকে ল্যাবে কাজ করতে হয়েছে, করতে হয়েছে দিনের পর দিন পরিশ্রম। অবশেষে ধরা দিয়েছে সফলতা। একসাথে পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপ। বলছিলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আশফিয়া তাসনিমের কথা।

আশফিয়া তাসনিম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী। তিনি মো. আশরাফুল আলম ও শামীমা আলম দম্পতির দ্বিতীয় সন্তান। তার বাসা রাজশাহীর পদ্মা আবাসিক এলাকায়। বাবা সরকারি চাকরি থেকে অবসরপ্রাপ্ত এবং মা গৃহিনী।

আশফিয়া ছিলেন তুখোড় মেধার অধিকারী। ২০১৪ সালে সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতায় ঢাকা বিভাগে প্রথম হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে থেকে স্বর্ণপদক অর্জন করেন। রচনা প্রতিযোগিতায় এবং উপস্থিত বক্তৃতায় ঢাকা বিভাগে যথাক্রমে হয়েছিলেন প্রথম এবং তৃতীয় , বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থাপনাসহ করেছেন বাঁধন, ক্যারিয়ার ক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠন। এসএসসি ও এইচএসসি দুটোতেই পেয়েছেন জিপিএ ৫। প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন তার নিজ বিভাগেও। অনার্সে সিজিপিএ ৩.৬০ এবং মাস্টার্সে ৩.৮৫ অর্জন করেন আশফিয়া। স্কোর-৭ পেয়ে আইইএলটিএস সম্পন্ন করেন তিনি। 

এছাড়াও আন্তর্জাতিক সম্মেলনে পোস্টার উপস্থাপনা করেছেন চারবার। রিসার্সের কাজের জন্য ২০২২ সালে পেয়েছিলেন এনএসটি ফেলোশিপ। এছাড়াও তিনি ২০২৩ সাল থেকে ইন্সটিটিউট অফ বায়োলজিক্যাল সায়েন্স,রাজশাহী ইউনিভার্সিটিতে রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কর্মরত আছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রথম থেকেই গবেষণা ও উদ্ভাবনীর দিকে আগ্রহ ছিলো তার। পরবর্তীতে করোনার সময় থেকে বিভাগের অধ্যাপক ড. তানজিমা ইয়াসমিনের সহায়তায় 'মাইক্রোবায়োলজি ল্যাব' নামে বিভাগের একটি ল্যাবে নিয়মিত কাজ শুরু করেন তিনি। সেখানে রির্সাচের মৌলিক কাজগুলো শিখেন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মায়ামি ফ্লোরিডা, টেক্সাস টেক ইউনিভার্সিটি ও ইউনিভার্সিটি অব নিউ মেক্সিকো এই তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি গবেষণায় ফুল ফান্ডেট স্কলারশিপ পেয়েছেন। তবে তিনি উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করবেন ইউনিভার্সিটি অব মায়ামি থেকে। এ বছর আগষ্ট মাসে পিএইচডি করতে আমেরিকায় পাড়ি জমাবেন আশফিয়া।

অনুভূতি জানতে চাইলে আশফিয়া তাসনিম বলেন, আমি যখন ২১শে ফেব্রুয়ারি রাত ৩টায় ইউনিভার্সিটি অব নিউ মেক্সিকো থেকে ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপের অফার লেটার পেলাম, তখন খুশিতে আমার চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছিলো। এটা ছিলো খুশির কান্না, এটা অন্যরকম একটা অনুভূতি।আমি সেদিন সারারাত ঘুমাতে পারিনি। নিজের প্রতি আমার আত্মবিশ্বাস ছিলো, আমি যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার সুযোগ পাবোই। আমার এ আত্মবিশ্বাস একদিনে তৈরি হয়নি, এর পিছনে আমাকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে পিএইচডি পাওয়ার ক্ষেত্রে তানজিমা ইয়াসমিন ম্যাম সবসময় আমাকে সমর্থন করেছেন। আমি ১ম বর্ষ থেকেই বিভিন্ন জায়গায় ইংরেজি স্পিকিং টেস্ট, নিজের সাথে নিজেই ইংরেজিতে কথা বলা এবং রিয়েল লাইফ নামে একটা অ্যাপে বিদেশিদের সাথে কথা বলে ইংরেজিতে দক্ষতা অর্জন করি। আমি ২০২০ সালে করোনাকালীন সময়ে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ হেলথ এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কোলাবরেশনে একটা ইন্টারন্যাশনাল প্রোজেক্ট পেয়েছিলাম, এই জন্য আমার আত্মবিশ্বাস আরও বৃদ্ধি পায় বলে জানান তিনি। তার এই প্রোজেক্টটি এখনও চলমান।

এ বিষয়ে আশফিয়ার থিসিস সুপারভাইজার ও বিভাগের অধ্যাপক ড. তানজিমা ইয়াসমিন বলেন, আশফিয়ার একটাই লক্ষ্য ছিলো, সে আমেরিকা যাবে, অন্য কোন দেশে যাবে না। একজন শিক্ষক শুধু শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। শিক্ষার্থীরা যখন ভালো কিছু অর্জন করে, তাদের পিছনে হয়তো আমরা ছায়া হয়ে থাকি, মূল অর্জন কিন্তু তাদেরই। মেধা এবং পরিশ্রমের দ্বারা একজন শিক্ষার্থী সেটি অর্জন করে। ছাত্র-ছাত্রীরা ভালো জায়গায় অবস্থান করতে পারলেই একজন শিক্ষকের স্বার্থকতা।

তিনি আরও বলেন, এই অর্জন বিভাগের জন্য খুবই ইতিবাচক। সবাই এখন থেকে বড় স্বপ্ন দেখতে শিখবে। ২০১০ সালের পর থেকে প্রতিবছর 'মাইক্রোবায়োলজি সাইন্স ল্যাব' থেকে পাঁচজন করে দেশের বাহিরে যায়। আমার মনোনীত ৫ জন শিক্ষার্থী প্রতিবছর টিউশন ফি ছাড়া উচ্চ শিক্ষাগ্রহণ করতে সুইডেনে যাচ্ছে। আশা করছি, এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আমাদের সুনাম ছড়াবে বলে প্রত্যাশা এ থিসিস সুপারভাইজারের।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, নিঃসন্দেহে এই সংবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আনন্দের এবং গর্বের। এরাই আমাদের আগামী। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে চলেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আগামীতে জাপানেও ৩ জনকে পাঠানো হবে। এছাড়াও চীন, ইউরোপসহ অনেক দেশে স্কলারশিপে শিক্ষার্থী পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। ল্যাব সুযোগ-সুবিধা থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার মান আরো বৃদ্ধি করার প্রচেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছি। এখান থেকে ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীরা আরও বেশি বেশি উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবে বলে আশাবাদী তিনি।


মন্তব্য


সর্বশেষ সংবাদ