শিক্ষক সমিতির দাবির প্রেক্ষিতে কুবি প্রশাসনের নানা উদ্যোগ

কুবি
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির দাবি সমূহের প্রেক্ষিতে  ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো: জাকির হোসেনকে ওএসডি, তদন্ত কমিটির সদস্য সরানো সহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সোমবার (১০ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহেরকে দেয়া রেজিস্ট্রার আমিরুল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক চিঠি থেকে বিষয়টি জানা যায়। চিঠি থেকে জানা যায়, গত ২৮ এপ্রিল উপাচার্য তার নিজ কার্যালয়ে প্রবেশের সময় ত্রিমুখী (শিক্ষক, ছাত্রলীগ, চাকরিপ্রার্থী) সংঘর্ষে সংঘটিত  অনাকাঙ্খিত ঘটনা তদন্তের জন্য গত ৭ মে  তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিটির সদস্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো: হেলাল উদ্দিন নিজামীর প্রতি অনাস্থা জানিয়েছিল শিক্ষক সমিতি। সেই অনাস্থার প্রেক্ষিতে তাকে সরিয়ে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। 

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি শিক্ষক সমিতির নির্বাচিত প্রতিনিধি দল উপাচার্যের সাথে দেখা করতে গেলে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী উপাচার্য  কার্যালয়ে আসলে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের মধ্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়। এই ঘটনার অধিকতর তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের চিহ্নিত করে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোঃ মাকসুদুর রহমানকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির তদন্ত চলাকালীন সময়ে ডেপুটি রেজিস্ট্রার জনাব মোঃ জাকির হোসেনকে ওএসডি (OSD) করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।  

এছাড়া অধ্যাপক গ্রেড-৩ থেকে গ্রেড-২ এবং অধ্যাপক গ্রেড-২ থেকে গ্রেড-১ পদে উন্নীতকরণের নিমিত্ত কমিটির সভা ১০ জুন কমিটির সুপারিশ মোতাবেক নিষ্পত্তির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। সেই সব ইতোমধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরবর্তী সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত জানানো বলে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আমিরুল হক চৌধুরী। 

এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান নিয়োগ যথাযথ প্রক্রিয়ায় হয়েছে কিনা তা পর্যালোচনা করার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবদুল বাছিরকে আহ্বায়ক করে আরেকটি পাঁচ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটিকে আগামী ১৫  জুলাইয়ের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। শিক্ষক নিয়োগ, পদোন্নতি ও স্থায়িকরণের ক্ষেত্রে দুই বা ততোধিক আর্টিকেল প্রকাশনার শর্ত উল্লেখ থাকলেও সেটা সংশোধন করে সর্বোচ্চ দুইটি আর্টিকেল প্রকাশের শর্ত দেয়া হয়। প্রকাশনাগুলো স্কোপাস ইনডেক্স, ওয়েব অফ সাইন্স/ক্রস রেফারেন্স/ এবিডিসি অনুরূপ মানসম্মত জার্নালে প্রকাশিত হতে হবে। তবে বাংলা ও ইংরেজি বিভাগের ক্ষেত্রে এশিয়াটিক সোসাইটি/ বাংলা একাডেমি/ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত সাহিত্য পত্রিকা/ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত হতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ছুটি নীতিমালার সাথে সামঞ্জস্য রেখে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের শিক্ষা ছুটি নীতিমালা সংশোধন করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবিরকে আহ্বায়ক করে আরেকটি ছয় সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। এই একই কমিটি চাকুরি স্থায়িকরণের বিধিমালা প্রণয়নের দায়িত্ব প্রধান করা হয়। এছাড়াও শিক্ষক সমিতির গেস্ট হাউজ  ব্যবহার সংক্রান্ত দাবি ইতোমধ্যে পূরণ করা হয়েছে বলে অধ্যাপক তাহেরকে দেয়া চিঠিতে জানানো হয়। 

সর্বশেষ শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পূরণ করার জন্য অতিরিক্ত ক্লাস গ্রহণ ও প্রয়োজনে ছুটি হ্রাসের মাধ্যমে যথাসম্ভব ক্ষতিপূরণ করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। 

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, 'উপাচার্য আমাদের দাবির প্রেক্ষিতে যেই সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছে সেগুলো লিখিতভাবে জানানোর জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে শান্ত পরিবেশ চাই। আমরা বন্ধের পর ক্লাসে ফিরে যাব।' এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, ' শিক্ষক সমিতির দাবির প্রেক্ষিতে আমরা কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। সেই উদ্যোগকে তারা স্বাগত জানিয়েছে। বন্ধের পর তারা ক্লাসে ফিরে যাবে বলে জানিয়েছে।'


মন্তব্য