আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৩ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী 

ঢাবি
  © লোগো

দেশের সবচেয়ে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১০৪ বছরে পদার্পণ করেছে আজ। ১৯২১ সালের এই দিনে ৮৪৭ শিক্ষার্থী, ৩টি অনুষদ ও ১২ বিভাগ নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল ‘ প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’।তৎকালীন ব্রিটিশশাসিত বাংলায় এটিই ছিল একমাত্র উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পশ্চাৎপদ এ অঞ্চলের মানুষকে শিক্ষাদীক্ষায় এগিয়ে নিতে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুর দিকের কার্যক্রম বিশ্বজুড়ে সুনাম কুড়ালেও বিগত কয়েক দশক ধরে শিক্ষার্থীদের তীব্র আবাসন সংকট, গবেষণার অপ্রতুলতা এবং অ্যানালগ সেবার কারণে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। তবে গত বছর অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল উপাচার্যের দায়িত্ব নেওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছে নানান পরিবর্তন।


এদিকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আজ দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে বাণী দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। বাণীতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কিত জ্ঞান-বিজ্ঞানের নিবিড় চর্চার পাশাপাশি আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশ সৃষ্টিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনবদ্য অবদান চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

শুভেচ্ছাবার্তায় উপাচার্য অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, জ্ঞান আহরণ ও বিতরণের গৌরবগাথা নিয়ে শতবর্ষ পাড়ি দিয়েছে প্রাণপ্রিয় এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, চিরগৌরবময় মুক্তিযুদ্ধসহ গণমানুষের সব লড়াইয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সর্বদা নেতৃত্ব দিয়েছে।


শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি চালুর ২৬ বছরের মধ্যে ব্রিটিশদের কবল থেকে উপমহাদেশ মুক্ত হয়। সৃষ্টি হয় পাকিস্তান ও ভারত নামে দুটি রাষ্ট্র। সেই ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পাকিস্তান সৃষ্টির মাত্র ২৪ বছরের মধ্যে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের। পাকিস্তান সৃষ্টির পরের বছর থেকেই এ বিশ্ববিদ্যালয় স্বতন্ত্র জাতিসত্তা সৃষ্টির আন্দোলনে নিবেদিত হয়। এক কথায় বলতে গেলে, দেশ স্বাধীন এবং স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ গঠন ও পরিচালনায় যারা ভূমিকা রেখেছে তাদের ৫০ বছর ধরে তৈরি করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

তৎকালীন সময়ে ঢাকায় সবচেয়ে অভিজাত ও সৌন্দর্যমণ্ডিত এলাকা ছিল রমনা। ওই এলাকায় প্রায় ৬০০ একর জমির ওপর গড়ে তোলা হয়েছিল এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রথম শিক্ষাবর্ষে বিভিন্ন বিভাগে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ছিল ৮৭৭ জন এবং শিক্ষক ছিলেন মাত্র ৬০ জন। আর শতবর্ষ পরে এই বিশ্ববিদ্যালয় মহিরুহে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে অনুষদ ১৩টি, বিভাগ ৮৩টি, ইনস্টিটিউট ১২টি, গবেষণা ব্যুরো ও কেন্দ্র ৫৬টি। আবাসিক হল ২০ এবং হোস্টেল ৩টি। আর শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩৭ হাজার ১৮ জন ও শিক্ষক ২০০৮ জন। কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন ৪ হাজার ৪৫৫ জন। সম্প্রতি ডিবিএ (ডক্টর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) ডিগ্রিও প্রদান করা হচ্ছে। তবে ৬০০ একরের ক্যাম্পাস যাত্রা করলেও বর্তমানে এর পরিধি ২৭৫ দশমিক ৮৩ একর। সম্প্রতি সরকার পূর্বাচলে ৫১.৯৯ একর জমি এই বিশ্ববিদ্যালয়কে বরাদ্দ দিয়েছে। কৃতী শিক্ষার্থীদের মেডেল, বৃত্তি ও সম্মাননা দিতে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নামে ট্রাস্ট ফান্ড আছে ৩৪৭টি।


গত বছর অধ্যাপক মাকসুদ কামাল উপাচার্যের দায়িত্ব নেওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়েছে গবেষণা ও ইনোভেশন মেলা। শিক্ষকদের জন্য প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হয় প্রশিক্ষণের। শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট সমাধানে আবাসিক শিক্ষার্থীদের ডাটাবেজ তৈরি করা হয়। আবাসিক হল বহিরাগত ও অবৈধ ছাত্র মুক্ত করতে হলের প্রবেশদ্বার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই গ্রন্থাগারে ই-গেট বসানোর ঘোষণা দেন উপাচার্য। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মার্ট কার্ড পাঞ্চ করে প্রবেশ করতে হবে। যার মধ্যে লাইব্রেরির ই-গেট তৈরির কাজ প্রায় শেষের দিকে। শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য চালু করেছেন বৃত্তি। ফলে সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা ও গবেষণা সংস্থা কোয়াককোয়ারেলি সায়মন্ডসের (কিউএস) শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় চমক দেখিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। যাতে বিশ্ববিদ্যালয়টির অবস্থান ৫৫৪তম।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মারুফ বাংলাদেশ মোমেন্টসকে বলেন, মাতৃভাষার দাবি প্রতিষ্ঠা, দেশ স্বাধীন করাসহ দেশের সকল আন্দোলনের সূতিকাগার হওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেশের সকল মানুষের কাছে গর্বের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে সমাদৃত। যদিও শিক্ষা-গবেষণায় ঢাবি অনেকটাই পিছিয়ে তবুও এটা দেশ সেরাই রয়েছে ৷ আমি চাই ঢাবি জ্ঞান-বিজ্ঞানে আরও উৎকর্ষ সাধন করুন। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও বাংলাদেশের সুনাম অর্জনে ঢাবি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখুক। ওয়ার্ল্ড র‍্যাংকিং এ ঢাবির অবস্থান হোক চোখে পড়ার মতো।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সারাদেশের মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। সীমিত সম্পদের মধ্যে মানসম্মত  উচ্চশিক্ষা প্রসারে সর্বোচ্চ সেবা দিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শতকে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি গবেষণা প্রধান বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রূপান্তরের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে৷

তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি তাদের বাজারমুখী দক্ষতা যেনো বাড়াতে পারি সেজন্য অনুষদ ভিত্তিক দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আমরা ভবিষ্যতে করব। যেনো শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা শেষে চাকরির বাজারে বাড়তি সুবিধা পায়। এটিই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মূল উপজীব্য।

আজকের আয়োজন :

কর্মসূচি অনুযায়ী আজ সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল হল ও হোস্টেল থেকে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ শোভাযাত্রা সহকারে স্মৃতি চিরন্তন চত্বরে সমবেত হবেন। স্মৃতি চিরন্তন চত্বর থেকে সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে উপাচার্যের নেতৃত্বে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা সহকারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অ্যালামনাই, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের সম্মুখস্থ পায়রা চত্বরে গমন করবেন।

সকাল ১০টায় পায়রা চত্ত্বরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা, বিশ্ববিদ্যালয় ও হলসমূহের পতাকা উত্তোলন, পায়রা, বেলুন ও ফেস্টুন উড়ানো, কেক কাটা এবং সংগীত বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে বিশ্ববিদ্যালয়ের থিম সং ও উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশিত হবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর সকাল সাড়ে ১০টায় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় 'তরুণ প্রজন্যের দক্ষতা উন্নয়নে উচ্চশিক্ষা' নিয়ে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, এমপি।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন গ্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন হলের প্রাধ্যক্ষ, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যানসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অ্যালামনাই ও কর্মকর্তা- কর্মচারীরআ আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করবেন।

আলোচনা সভার শুরুতে দিবসটি উপলক্ষ্যে প্রকাশিত 'স্মরণিকা' ও 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইতিহাস ও ঐতিহ্য' শীর্ষক গ্রন্থের ২য় খণ্ডের মোড়ক উন্মোচন করবেন প্রধান অতিথিসহ অতিথিরা।


মন্তব্য