সারা দেশে গণসংযোগ কাল, চলবে ছাত্র ধর্মঘট 

ঢাবি
  © টিবিএম

সকল গ্রেডে সকল প্রকার অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিলের দাবিতে আগামীকাল মঙ্গলবার সারা দেশে গণসংযোগ কর্মসূচি পালন করবেন কোটবিরোধীরা। পাশাপাশি ছাত্র ধর্মঘট ও ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। তবে রাস্তা অবরোধ কর্মসূচি থাকবে না আজ। কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম বলেন, “কালকে রাস্তা ব্লকেডের আওতামুক্ত থাকবে। বুধবার ৬৪ জেলায় কঠোর কর্মসূচীর প্রস্তুতির জন্য মঙ্গলবার সারাদেশের প্রতিনিধি বৈঠিক এবং অনলাইনে-অফলাইনে গণসংযোগ করা হবে। মঙ্গলবার বিকেলে অনলাইন ব্রিফিং এ আমরা কর্মসূচী ঘোষণা করবো। তবে ছাত্র ধর্মঘট ও ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচী চলবে।”

এর আগে পূর্বঘোষিত ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ রাজধানীর শাহবাগ, মিন্টু রোড, বাংলামোটর, কারওয়ানবাজার, ফার্মগেট, রামপুরা, বাড্ডা, সায়েন্স ল্যাব, নীলক্ষেত মোড়, চাঁনখারপুল, ও গুলিস্তান জিরো পয়েন্টসহ ঢাকার অন্তত ১০টি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক মোড় অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। ফলে ঢাকা শহরের একটা বড় অংশে যানচলাচল স্থবির হয়ে যায়। বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চলে এ অবরোধ কর্মসূচি। 

বিকাল সাড়ে তিনটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে জড়ো হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন, হল পাড়া, মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণ প্রদক্ষিণ করে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিকাল সাড়ে ৪টায় শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা। এর আগে বিকাল ৩টা থেকে জাতীয় পতাকা, ছাতা, পানি ও শুকনো খাবার নিয়ে রাজধানীর নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করেন ইডেন মহিলা কলেজ ও গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিক্ষার্থীরা। 

চাঁনখারপুল মোড় অবরোধ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে হল, ড. মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ হল ও ফজলুল হক হলের শিক্ষার্থীরা। বিকাল ৩টা থেকে সায়েন্স ল্যাব অবরোধ করেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। রাজধানীর এসব গুরুত্বপূর্ণ মোড় অবরোধ করায় যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। 

অবরোধ কর্মসূচির বৃহৎ অংশ ছিল রাজধানীর শাহবাগ চত্বরে। কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতে স্লোগানে, গানে মুখরিত হয় রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এই পয়েন্ট। আন্দোলনের সমন্বয়করাও ছিলেন এই এলাকায়। এদিন সন্ধ্যায় নিজেদের মুঠোফোনে ফ্লাশলাইট জালিয়ে অভিনব পদ্ধতিতে প্রতিবাদ করেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা বলেন, সংসদ ভবন, হাইকোর্টে আলো না থাকলেও আলো আছে শাহবাগে। এ আলো মেধার আলো; কোটার নয়। এসময় শিক্ষার্থীরা তাদের বক্তব্যে বলেন, দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত তাদের এ আন্দোলন চলমান থাকবে। কোনো ধরনের শক্তি তাদের এ আন্দোলনকে থামাতে পারবে না। 

রাত সাড়ে ৮টায় শাহবাগ চত্বর থেকে দাবি আদায়ে তিনদিনের আল্টিমেটাম দিয়ে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী সারজিস আলম বলেন, আজ ঢাকা শহরের সাথে দেশের প্রায় ৪০টি জেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। আমরা পুরো ঢাকা শহর ব্লকেড করেছি। আগামী তিনদিনের মধ্যে কীভাবে পুরো দেশের ৬৪ জেলা ব্লকেড করতে হয় তা ছাত্র সমাজ জানে। 

সারজিস আলম বলেন, আমাদের এ আন্দোলন চলতেই থাকবে, সময়ের প্রয়োজনে তা তীব্র থেকে তীব্রতর হবে। আমাদের দাবি আদায়ের আগে আমরা হাল ছাড়ব না। সারজিস আলম বলেন, তৃতীয় চতুর্থ শ্রেণি থেকে শুরু করে সকল গ্রেডে যৌক্তিক কোটা ছাড়া সকল ধরনের কোটা বাতিলের দাবিতে আমাদের এই আন্দোলন। আমরা কখনোই কোটা সম্পূর্ণ বাতিল চাইনি। আমরা সবসময় চেয়েছিলাম কোটার যৌক্তিক সংস্কার। সুতরাং আমাদের এই আন্দোলনে পুলিশ না, আমরা বিশ্বাস করি যেকেউ আসুক না কেন আমাদের এই আন্দোলন আরো তীব্র থেকে তীব্রতর হবে।

এর আগে গত রবিবার 'বাংলা ব্লকেড' কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রায় ৫ ঘন্টা ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো অবরোধ করে রাত ৮টায় নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে অবরোধ তুলে নেয় শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের পূর্বঘোষিত এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল সোমবার সারাদেশে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের পাশাপাশি বিকাল সাড়ে ৩ টা থেকে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।