শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পদত্যাগ করলেন ববি উপচার্য
- মোমেন্টস ডেস্ক
- প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২৪, ০১:৩১ PM , আপডেট: ২০ আগস্ট ২০২৪, ০১:৩১ PM
শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পদত্যাগ করেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া। এর আগে সোমবার (১৯ আগস্ট) উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। সমাবেশে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের পদত্যাগ করার আলটিমেটাম দেন তারা।
জানা যায়, নিজেকে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে পরিচয় দিতেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া। আর ওই পরিচয়ই ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। তখন তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক পরিচিত ছিলেন। ওই পরিচয় কাজে লাগিয়ে পরবর্তী সময়ে চলতি বছরের মার্চ মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান।
তবে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগের ক্ষেত্রে তার অভিভাবক ছিলেন শেখ হাসিনার অপর ফুফাতো ভাই বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে লিয়াজো করে স্বপদে বহাল থাকতে চাচ্ছেন উপাচার্য বদরুজ্জামান ভূঁইয়া। এর পরিপ্রেক্ষিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সব ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেন তিনি। এর মধ্যে গতকাল সোমবার হঠাৎ করেই ববি উপাচার্য স্বেচ্ছাসেবক লীগের আগের পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তিনি জানান, উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া নিজেকে সব ধরনের রাজনৈতিক ও দলীয় কর্মকাণ্ড থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ফয়সাল মাহমুদ জানান, ববি উপাচার্য স্বেচ্ছাসেবক লীগের শিক্ষাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি ওই পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। স্বেচ্ছাসেবক লীগ কিংবা আওয়ামী লীগের কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রমের সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত নয় এমন ঘোষণা দিয়েছেন।
গত ১১ আগস্ট বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের ৮৫তম বিশেষ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সব ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। এর এক সপ্তাহ পর গতকাল সোমবার ববি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া নিজেকে সব ধরনের রাজনৈতিক ও দলীয় কর্মকাণ্ড থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক দাবি করেছেন, সোমবার শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ করেন। শিক্ষার্থীদের এমন বিক্ষোভের মুখে পড়ে উপাচার্য হঠাৎ করেই নিজেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে প্রত্যাহার করে নেওেয়ার ঘোষণা দেন।
উপাচার্যের এমন ঘোষণায় বিস্মিত শিক্ষকরা বলেন, আওয়ামী লীগের সময় ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ট্রেজারার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।
যোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও অনেক জ্যেষ্ঠ শিক্ষককে টপকে ভিসি হয়েছেন। শেখ হাসিনা সরকার বিলুপ্ত হওয়ার পর এখন নিজেকে সাধু হিসেবে জাহির করছেন উপাচার্য।
গতকাল সোমবার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের পদত্যাগ করার আলটিমেটাম দেন তারা।
এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, বর্তমান ভিসি সরকার পতনের আন্দোলন চলাকালীন নানাভাবে শিক্ষার্থীদের হয়রানি করেছেন। এমনকি তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের নানা অভিযোগ থাকলেও আওয়ামী লীগ সরকারের দালালি করার কারণে কোনো প্রশ্নের সম্মুখীন হননি। কারণ তিনি আওয়ামী লীগের দলীয় পদধারী ছিলেন।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন, ভিসি যখন নিশ্চিত হয়েছেন, তার পদ ছাড়তে হবে, তখন তিনি দলীয় পদ ছেড়ে দিয়েছেন এমন ঘোষণা দিলেন। তবে এতে কোনো কাজ হবে না। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে তিনি দীর্ঘ দুই বছর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয় দিয়ে আসছেন। এখন পদ ছাড়লেই কী না ছাড়লেই কী।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, বিশেষজ্ঞ হিসেবে স্বেচ্ছাসেবক লীগের শিক্ষাবিষয়ক উপকমিটিতে ছিলাম। রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস গড়ার স্বার্থে আমি ওই পদ থেকে পদত্যাগ করেছি।